প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহীত
কোনও মাসের ১৩ তারিখ শুক্রবার পড়লেই মানুষের ধারণা হয় দিনটা খুব অশুভ। তবে আপনার যদি কোনও মানসিক সমস্যা না থাকে (ট্রিসকাইডেকাফোবিয়া বা ১৩ সংখ্যা নিয়ে ভীতি), তা হলে এমন ভাবার কোনওই কারণ নেই। ভারতে এই ধরনের ভুল ধারণা নানা জায়গায় প্রচলিত। ছোট থেকে আমাদের বেড়ে ওঠার সঙ্গে এই ধারণাগুলি কী করে যে জুড়ে যায়, আমরা টেরও পাই না। কিন্তু এই ধারণাগুলির কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কেউ-ই সে ভাবে দিতে পারবে। সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ভুল ধারণা কোনগুলি?
এক শালিক দেখা অশুভ
ছোট থেকেই বন্ধুবান্ধবদের মাধ্যমে এই ধরনের একটি ধারণা ছড়িয়ে পড়ে। এক শালিক দেখলে নাকি দিনটা ভাল যাবে না। দুই শালিক দেখলে সেই অমঙ্গল কেটে যাবে। এমনিতেই শহরে শালিক পাখির সংখ্যা কমে এসেছে। তার মধ্যে একটি পাখি যদে কোনও ভাবে কারুর চোখে পড়ে যায়, এই ধরনের অপবাদ শুনতে হয় বেচারিকে।
এক চোখ দেখানো অমঙ্গল ডেকে আনা
সকালবেলা আপনার চোখ চুলকাচ্ছে। চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে এক চোখ ডলছেন নিজের মনে। হঠাৎ করে একজন অচেনা ব্যক্তি এসে দাবি জানালেন, দু’চোখই বন্ধ করতে হবে! ভারতে এই ঘটনায় অবাক হওয়ার কিছু নেই। মানুষ বিশ্বাস করেন কোথাও বেরোনোর আগে বা কাজে যাওয়ার আগে কেউ যদি এক চোখ দেখান, তা হলে অমঙ্গল হবে। রাস্তার কোনও উটকো ছেলে আপনাকে দেখে চোখ মারলে, আপনি গিয়ে তাকে দু’চোখ বন্ধ করার কথা বলে দেখবেন কি না, সেটা অবশ্য আপনার ব্যাপার।
বিড়াল পেরোলে নির্ঘাত মৃত্যু
যাঁরা নিয়মিত গাড়ি চালান, তাঁরা প্রায় প্রত্যেকেই এই ধারণা মেনে চলেন। যদি যাওয়ার পথে আচমকা একটি বিড়াল রাস্তার এদিক থেকে ওদিক চলে যায়, তা হলে যে কোনও ড্রাইভার দাঁড়িয়ে পড়েন। কারণ মানা হয়, বিড়াল পেরোলে দুর্ঘটনা ঘটবেই। তাই গা়ড়ির চালক অপেক্ষা করেন কখন অন্য কোনও গাড়ি পার করবে কিংবা অন্য কোনও ব্যক্তি হেঁটে যাবেন। একদম ফাঁকা রাস্তা হলে অনেক সময়ে একটি পাথর ছুড়ে তারপর গাড়ি এগোনোর রীতিও রয়েছে।
প্রতীকী ছবি।
১৩ নম্বর মানেই বিপদ
সংখ্যা ১৩ নিয়ে মানুষের মনে এতই ভয় যে অনেকে কোনও বাড়ি ১৩ তলায় কিনতে চান না। হোটেলে গেলে ১৩ তলায় ঘর নিতে চান না। এমনকি বিমানে ১৩ নম্বর আসনগুলি অনেকে এড়িয়ে চলেন। তবে ১৩ সংখ্যা নিয়ে কুসংস্কার শুধু এ দেশে নয়, বহু দেশে ছড়িয়ে রয়েছে।
ভাঙা কাচের বিপত্তি
কাচের শিশি ভাঙলে সংসারে কোনও না কোনও বিপদ হবে, এমন ধারণা অনেক বাড়িতেই রয়েছে। তবে সম্ভবত কাচের জিনিস যাতে সকলে সাবধানে ব্যবহার করেন, তার জন্যেই এই ধরনের ভয় মানুষের মনে ঢোকানো হয়েছিল। কাচের টুকরো মাটিতে প়ড়ে থাকলে অন্য কোনও বিপদ না হলেও পরিবারের কোনও সদস্যের হাত-পা কেটে বিপত্তি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ভাঙা আয়নায় মুখ দেখলে জীবনে দুর্ভাগ্য নেমে আসে, এমন ধারণাও রয়েছে।
বাঁ হাতের তালু চুলকানো
বাঁ হাত চুলকাচ্ছে? বলা হয় আপনার শীঘ্রই ধনপ্রাপ্তি হবে। প্রত্যেকবার প্রচুর কেনাকাটা করে ফেলার পর যদি হাত চুলকে টাকাগুলি ফের ব্যাগে ফিরে আসত, তা হলে মন্দ হত না!
সন্ধ্যাবেলা ঘর ঝাড় দেওয়া
সন্ধ্যাবেলা ঝুল ঝাড়া, ঘরে ঝাড়ু দেওয়ার মতো কাজ কিছু কিছু বাড়িতে একেবারেই নিষিদ্ধ। বলা হয় ভাগ্য খারাপ হবে এমন কাজ করলে। তবে সূর্য ডোবার পর অন্ধকারে ঘর পরিষ্কার করলে, অনেক ধুলো-ময়লা চোখে না-ও পড়তে পারে— সম্ভবত এই কারণেই এমন প্রথা শুরু হয়েছিল।
বেরোনোর আগে দই খাওয়া
রোজ কাজে যাওয়ার আগে কিংবা লম্বা কোনও যাত্রা শুরু করার আগে এক চামচ দই খাওয়া নাকি শুভ। মাধ্যমিক- উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অনেক সময়ই পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে দই খাইয়ে দেওয়া হয়। তবে গরমের দেশে সূর্যের তাপ যাতে গায়ে না লাগে, দই খাওয়ার চল শুরু হয়েছিল। স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল বলেই এই ধরনের প্রথা চালু হয়েছিল কি না, তা অবশ্য জানা নেই।