ঘরের ভিতরের বায়ুকে বিশুদ্ধ না রাখলেও শরীরে বাসা বাঁধে নানা অসুখ। ছবি: শাটারস্টক।
শীত শেষে বসন্তের শুরুতেই ঝড়বৃষ্টি। শীতের পোশাক যে মুহূর্তে কেচে তুলে দেওয়ার পরিস্তিতি এল, ফের জোলো আবহাওয়ায় তা নামানোর প্রয়োজনও পড়ল। আবহাওয়া পরিবর্তনের এমন সময়েই বাতাসে দূষণের মাত্রা বাড়ে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। বায়ুদূষণের প্রকোপে রোগভোগের হানাও নতুন নয়। এমন সময় কেবল বাইরে থেকেই যে অসুখ শরীরে প্রবেশ করে এমন কিন্তু নয়। বরং ঘরের ভিতরের পরিবেশের উপরেও নির্ভর করে অনেক কিছু।
ঘরের ভিতরের বাতাস থেকেও ছড়াতে পারে নানা অসুখ। বিশেষ করে বাড়িতে শিশু বা বয়স্ক থাকলে আরও একটু বেশি যত্নবান তো হতেই হবে। বাইরে বেরলে না হয় ধুলো-ধোঁয়া বা অন্যান্য সমস্যা এড়াতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা নেবেন, কিন্তু বাড়ির ভিতরে থাকলেও থাকতে হবে সচেতন।
বাড়ির ভিতরের বায়ুদূষণ থেকে বাঁচতে কী করবেন? ঠিক কোন কোন উপায়ে ঘরের ভিতরের হাওয়াকে পরিশুদ্ধ রেখে নিজেও সুস্থ থাকবেন ও অন্য সদস্যদেরও ভাল রাখবেন?
আরও পড়ুন: চুল পাতলা হয়ে টাক পড়ে যাচ্ছে? তা হলে এ সব কারণকে আর অবহেলা নয়
শরীর-স্বাস্থ্য নিয়ে এ সব তথ্য আগে জানতেন?
ঘরের প্রচুর সবুজ গাছ লাগান। এতে অক্সিজেনের জোগান বাড়বে।
প্রথমেই নিজের কিছু ভুল শুধরে নিন। বাড়ির ভিতর ধূমপান করার অভ্যাস থাকলে আগে তা বর্জন করুন। তামাকের ধোঁয়ায় থাকা ক্ষতিকারক উপাদান শ্বাসযন্ত্রের সরাসরি ক্ষতি করে। তাই ধূমপান চাড়তেই হবে। বিশেষ করে ঘরের মধ্যে ভারী পর্দা বা কার্পেট থাকলে ধূমপান থেকে হওয়া দূষণ সে সবের গায়ে আটকে যায়। বাড়ির অন্য সদস্যরাও শিকার হন সেকেন্ড হ্যান্ড বা থার্ড হ্যান্ড স্মোকিংয়ের। রান্না ঘর ও বাথরুমে এগজস্ট ফ্যান থাকা আবশ্যিক। স্নান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া, কাচাকুচি ইত্যাদির কারণে বাথরুমের বাতাসে দূষণ থাকে, তাকে বাইরে বার করে বাইরের ঠান্ডা ও তুলনামূলক শুদ্ধ হাওয়া ভিতরে প্রবেশ না করালে তা ক্ষতি করবে শরীরের। রান্না ঘরেও তেল-মশলার গন্ধ, ধোঁয়া বাইরে বেরতে না পারলে ঘরের ভিতরের বাতাসকে ভারী করে দেবে ও শ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে ক্ষতি করবে। তাই রান্নাঘরে চিমনি রাখার চেষ্টা করুন। একান্ত তা না থাকলে জানালা খুলে রান্না করুন, যাতে ধোঁয়া-দূষণ কিছুটা বাইরে বেরতে পারে। কেবল চিমনি থাকলেই হবে না। নিয়মিত রান্নাঘর পরিষ্কার রাখার সঙ্গে চিমনিও পরিষ্কার করুন। আজকাল অনেক অটো ক্লিন চিমনি বাজারে এসেছে। সুবিধা বুঝে কিনতে পারেন সে সবও। কেবল চিমনিই নয়, এয়ার কন্ডিশনকেও নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন। এসি-র ভিতরে ধুলো ও কার্বন জমলেও ঘরের বাতাস অশুদ্ধ হতে পারে।
আরও পড়ুন: স্ট্রেচ মার্কের সমস্যা? ওষুধ ছাড়াই ঘরোয়া উপায়ে দূর করুন সমস্যা
গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
ঘরের প্রচুর সবুজ গাছ লাগান। এতে অক্সিজেনের জোগান যেমন পাওয়া যায়, তেমনই ঘরের কার্বন-ডাই অক্সাইডের অনেকটা গাছ শোষণ করে নেয় বলে ঘরের ভিতরের হাওয়া খুব একটা অশুদ্ধ হতে পারে না। আজকাল কিচেন গার্ডেন যেমন বানানোর চল রয়েছে, তেমনি গাছ দিয়ে অন্দরসজ্জাও কম হয় না। ঘরের মধ্যে পাতাবাহার গাছ রাখুন। অনেকের ফুলের গন্ধেও নানা রকম অ্যালার্জি হয়, তাই ফুলের গাছ ঘরের ভিতরে না রেকে আলাদা করে বারান্দায় বা ছাদে রাখুন। ঘরদোরের নানা আসবাব পরিষ্কার করুন ভিজে কাপড় দিয়ে। শুকনো কাপড় দিয়ে আসবাব পরিষ্কার করলে ধুলো উড়বে আরও বেশি। তাই সচেতন থাকুন। সারা দিন এসি চালান বলে অনেকেই ঘরের ভিতরের দরজা-জানালা খোলেন না খুব একটা। এমন স্বভাব খুব একটা স্বাস্থ্যকর নয়। সাধারণত, বাড়িতে কোনও ঘরেই সারা দিন-রাত এসি চলে না। তাই বৃষ্টির দিন ছাড়া অন্যান্য সময়ে ঘরের জানালা-দরজা কিছু ক্ষণ খোলা রাখুন। এতে প্রাকৃতিক ঠান্ডা হাওয়া ঘরে ঢুকবে, যা শরীরের জন্য ভাল। এয়ার পিউরিফায়ার রাখুন হাতের কাছে। দরকার মতো মাঝে মাঝেই ব্যবহার করুন তা।