সব্জি সেদ্ধ, ফল, টকদই আর ওটস দিয়েই সেরে ফেলছেন রোজকার ডায়েট। ফলে আপনার শরীর দুর্বল হয়ে পরে।
চলছে বিয়েবাড়ির মরসুম। ডিজাইনার পিঠ খোলা ব্লাউজ আর লেহেঙ্গা বানিয়েছেন প্রিয় বন্ধুর বিয়েতে পরবেন বলে। ফটোশুটে কোনও ভাবেই যেন ধরা না পড়ে শরীরের বাড়তি ফ্যাট। নিজেকে স্লিম অ্যান্ড ট্রিম দেখাতেই হবে! নইলে সোশ্যাল মিডিয়ায় কমেন্টের ঝড় উঠবে কি করে? হাতে আর মাত্র ক’টা দিন। চটজলদি ওজন কমাতে বেছে নিলেন দেদার ডায়েটের পথ।
খাওয়াদাওয়া কমিয়ে দিলেন হঠাত্ করে। সব্জি সেদ্ধ, ফল, টকদই আর ওটসদিয়েই সারছেন রোজকার ডায়েট। দিনে বড়জোর তিনবেলা খাচ্ছেন। খিদে পেলেও দেখাচ্ছেন বুড়ো আঙুল। বাইরের জাঙ্ক ফুড একেবারেই নৈব নৈব চ! ফলও মিলছে হাতেনাতে। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই জামাগুলো ঢিলে হতে শুরু করেছে। চোখ মুখের ফোলা ভাব আর তেমন চোখে পড়ছে না। সেই দেখেই ভাবছেন এরকম দু’মাস টানতে পারলেই কেল্লা ফতে! অজান্তেই কিন্তু করে বসছেন মস্ত বড় ভুল। এর ফলে আপনার শরীর কিন্তু ভিতর থেকে দুর্বল হয়ে পড়ছে। কেবল তাই নয়, বাসা বাঁধছে রোগ-ব্যাধিও। চটজলদি ওজন কমাতে অনেকেই ভরসা করেন এই ধরনের ডায়েট প্ল্যানের উপর। নাম ক্র্যাশ ডায়েট।
আরও পড়ুন: জীবন এখন স্ট্রেসময়! কী ভাবে মিলবে একটু সুরাহা
ক্র্যাশ ডায়েট ঠিক কোনগুলো?
এগ ডায়েট: এই প্রকার ডায়েট মূলত ‘হাই প্রোটিন এবং জিরো কার্বোহাইড্রেট ডায়েট’। নামেই বোঝা যাচ্ছে এই ডায়েট প্ল্যানে ডিমের আধিক্য বেশি। এ ছাড়াও কম মাত্রায় ফল, স্যালাড, চিকেন আর মাছ খাওয়া যেতে পারে।
জুস ডায়েট: এই প্রকার ডায়েটে ২৪ ঘণ্টা থেকে ৪৮ ঘন্টা কেবল ফল আর সব্জির রস খাওয়া হয়। এই ডায়েটও অনেকখানি মেদ ঝরাতে কার্যকর। তবে একটানা ৪৮ ঘণ্টার বেশি করা যাবে না।
কিটো ডায়েট: এই বিশেষ ডায়েট প্ল্যানে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার একেবারে এড়িয়ে চলতে হবে। পরিবর্তে খেতে হবে পরিমাণ মতো প্রোটিন এবং বেশি করে ফ্যাট জাতীয় খাবার। কিটোজেনিক ডায়েটের ক্ষেত্রে ৫% কার্বোহাইড্রেট, ২৫% প্রোটিন এবং ৭০% ফ্যাট জাতীয় খাবার রাখতে হবে আপনার ডায়েটে।
এ ছাড়াও একাধিক ডায়েট প্ল্যান ক্র্যাশ ডায়েটের পর্যায় ফেলা যায়। যেমন-বেবি ফুড ডায়েট, কুকি ডায়েট ইত্যাদি। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা এসব ক্র্যাশ ডায়েট করে ওজন কমান, তাদের বেশিরভাগেরই ওজন আবার আগের মতো বেড়ে যায়, এমনকি আগের থেকেও বেড়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন: একটু যত্নই হতে পারে চুলের সব সমস্যার দাওয়াই!
‘জুস ডায়েট’ ২৪ ঘণ্টা থেকে ৪৮ ঘন্টা কেবল ফল আর সব্জির রস খাওয়া হয়
শুধু তাই নয়, ক্র্যাশ ডায়েটে পুষ্টিকর ও সুষম খাবার খাওয়া হয় না, ফলে ইটিং ডিজঅর্ডার দেখা দিতে পারে। ক্র্যাশ ডায়েটের পর যে ওজন বাড়ে, সে ক্ষেত্রে মেদ জমা হয় পেট বা তল পেটে। এই মেদের কারণে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। ডায়েটেশিয়ানের পরামর্শ ছাড়া কোনও ডায়েট শুরু করা একেবারেই উচিত নয়। জানেন কি এই ক্র্যাশ ডায়েটের ফল কি ভয়ানক হতে পারে?
• এই ধরনের ডায়েটের ফলে শরীরে জলের জলের মাত্রা অত্যাধিক হারে কমে যায়। আপনি যখন প্রয়োজনের তুলনায় কম ফ্যাট খান তখন দেহকোষ তার পর্যাপ্ত পরিমাণ ফ্যাট পায় না। সেই শূন্যস্থান পূরণ করতেই সে শরীরের অতিরিক্ত জল শুষে নেয়। যার ফলে গ্লাইকোজেন ভেঙে যায়। আর গ্লাইকোজেন ভাঙলেই জলশূন্যতা তৈরি হয়।
• শরীরে বিপাক ক্রিয়ার হার কমে যায়।
• শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
• লো-কার্ব ডায়েট ( কিটো ডায়েট) করলে দেহে শর্করার অভাব হয়। সে ক্ষেত্রে দেহে ফ্যাটি অ্যাসিড ভেঙে কিটোন উত্পাদন হয়। এই প্রক্রিয়ায় মাধ্যমেই দেহে শক্তির জোগান হয়। দীর্ঘদিন ‘কিটো ডায়েট’ করলে আপনার লিভার আর কিডনির একেবারে বারোটা বাজবে—এ কথা নিশ্চিত।
• শরীরের শক্তি আসে ক্যালোরি থেকে। হঠাৎ করে কম ক্যালোরি খেলে শরীরের পেশির উপর প্রভাব পড়ে। পেশির শক্তি ক্ষয় হয়।
• ক্র্যাশ ডায়েটের ফলে স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ মাত্রা বেড়ে যায় অনেকখানি। ফলে বিষণ্ণতা, ঘনঘন মুড পরিবর্তন এসব হয়।
• শুধু তাই নয়, দেহে সঠিক মাত্রায় ভিটামিন আর মিনারেলের অভাবে ত্বকের ঔজ্জল্যতা হারিয়ে যায়। চুল পড়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও তৈরি হয়।
• এ ছাড়াও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যায়। শরীরে ক্লান্তি আসে। কাজকর্মে অনীহা দেখা দেয়।
• এই প্রকার ডায়েটে অনিয়মিত ঋতুচক্রের সমস্যা দেখা যায়।