Online Classes

অনলাইন থেকে ক্লাসরুমে যেতে চাই মানসিক প্রস্তুতি

অভিভাবকদের একটি অংশের মতে, বাড়িতে থেকে থেকে সেই জীবনেই অভ্যস্ত হয়ে উঠছে বহু পড়ুয়া।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:১৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

প্রায় এক বছর বন্ধ স্কুল। মাসখানেকের মধ্যেই স্কুলের রুটিন ফিরতে চলেছে পড়ুয়াদের জীবনে। দীর্ঘ অনভ্যাসের পরে ব্যাগ গুছিয়ে স্কুলে যেতে কতটা প্রস্তুত ওরা? মনোরোগ চিকিৎসকদের মতে, সেই প্রস্তুতি শুরু করা উচিত এখন থেকেই। অনেকটা, খেলোয়াড়ের মাঠে নামার আগে গা ঘামিয়ে নেওয়া যাকে বলে।

Advertisement

অভিভাবকদের একটি অংশের মতে, বাড়িতে থেকে থেকে সেই জীবনেই অভ্যস্ত হয়ে উঠছে বহু পড়ুয়া। তাই আশঙ্কা, ফের স্কুল জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে কোনও অসুবিধা হবে না তো? কিংবা কী ভাবে সন্তানদের পুরনো অভ্যাসে ফিরিয়ে আনবেন তাঁরা?― এ সব নিয়েই চলছে ভাবনাচিন্তা।

দক্ষিণ কলকাতার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ইপ্সিতা বসুর মা পিয়ালী বসু যেমন জানাচ্ছেন, মেয়ের স্কুল বাস আসে সকাল সাড়ে ছ’টায়। ফলে ভোর থেকেই চলে প্রস্তুতি। পিয়ালী বলেন, ‘‘ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে খাবার খেয়ে স্কুলের জন্য মেয়েটা তৈরি হত। গত আট মাসে অন্যদের মতো ওর রুটিনটা পাল্টে গিয়েছে। এখন সকাল সাড়ে সাতটায় ঘুম থেকে ওঠে। আটটা থেকে অনলাইন ক্লাস হয়। পুরনো অভ্যাসে ফিরতে মানসিক সমস্যা হবে না তো?’’

Advertisement

একই প্রশ্ন হাওড়ার ডুমুরজলার এক অভিভাবকের। অঞ্জন রায় নামে ওই অভিভাবক বলেন, ‘‘স্কুলে যেতে ছেলে ভালবাসে। লকডাউনের প্রথম দিকে ও বন্ধুদের খুব মিস করত। এখন অনলাইন ক্লাসেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। কিছুটা ঘরকুনোও হয়ে গিয়েছে। এই মানসিকতার পরিবর্তন দরকার।’’

পড়ুয়াদের মানসিকতায় এমন বিভিন্ন পরিবর্তন হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন মনোবিদ সুগত ঘোষ। মূলত ছোটদের কাউন্সেলিং করান সুগতবাবু। তিনি জানান, স্কুলে গিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি অনেক কিছু ভাগ করে নেওয়ার অভ্যাস তৈরি হয় পড়ুয়াদের। ডেস্ক ভাগ করে বসা, টিফিন ভাগ করে খাওয়া― এই সব অভ্যাস ওদের চলে গিয়েছে। যা ফিরে আসা জরুরি। সুগতবাবু বলেন, ‘‘আগের অভ্যাসে সন্তানকে ফিরিয়ে আনতে মা-বাবাকেই দায়িত্ব নিতে হবে। পাশাপাশি স্কুলেও মাস্ক পরা এবং ঘন ঘন হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজ় করা যেন ওরা ভুলে যায় না, সেটাও বাড়ি থেকেই বোঝাতে শুরু করতে হবে।”

মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রামের মতে, একটা অস্বাভাবিক পরিবেশ কাটিয়ে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে পড়ুয়ারা। তাই বাড়তি সতর্কতা ও যত্ন দরকার। যে বাচ্চা সবে স্কুল শুরু করেছিল, স্কুল বন্ধ হওয়ায় তাদের অসুবিধা বেশি হবে। তবে প্রথমে তো বড়দের দিয়েই স্কুল শুরু হবে। তার পরে ছোটদের পাড়ি। তাও আবার ধাপে ধাপেই হবে। ফলে সপ্তাহে পাঁচ দিনের রুটিনে ফিরে যেতে ওরা অভ্যস্ত হওয়ার সময় পাবে।’’ তাঁর পরামর্শ, এখন থেকেই মা-বাবারা সন্তানকে স্কুলের সময় মেনে ঘুম থেকে ওঠান, নির্দিষ্ট সময়ে টিফিন দিন।

এই আগাম মানসিক প্রস্তুতির কথা বলছেন মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেবও। তাঁর মতে, যারা স্কুলে যেতে ভালবাসে তাদের সমস্যা
হওয়ার কথা নয়। কিন্তু যারা স্কুলে যেতে পছন্দ করত না, তাদের নতুন করে অভ্যাস তৈরি করতে হবে। অনিরুদ্ধবাবু বলেন, ‘‘বাচ্চারা বাড়িতে থেকে অবসাদে চলে যাচ্ছে, এমন বহু উদাহরণও পেয়েছি। তাই অবসাদ কাটিয়ে স্কুলে পাঠানোর দায়িত্ব মা-বাবারই। স্কুল যাওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে এখনই।’’

তবে স্কুলের রুটিনে পড়ুয়াদের ফিরতে তেমন অসুবিধা হবে না বলেই মনে করেন মর্ডান হাই স্কুল ফর গার্লসের ডিরেক্টর দেবী কর। তাঁর কথায়, ‘‘বড়দের হয়তো একটু সময় লাগবে। কিন্তু ছোটরা তাড়াতাড়ি অভ্যস্ত হয়ে যাবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement