Samuha

হিড়িম্বার আখ্যানের ‘মেয়েলি’ ব্যাখ্যা, এ ভাবেই নারীদের লড়াইয়ের কথা তুলে ধরছেন ওঁরা

মহাভারতে হিড়িম্বার যে রাক্ষসী পরিচয়, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে ‘সমূহ’। পুরনো গল্প নতুন করে বলে, নতুন করে ভাবতে শেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৩৫
Share:

‘সমূহ’-এর ‘অথ হিড়িম্বা কথা’ নাটকের ৫০তম অভিনয়ের একটি দৃশ্য। ছবি: দেবলীনা মৌ।

মেয়েরা কথায় কথায় ‘রাক্ষসী’ হয়ে যায়। নিজের মতো চললে কিংবা বেশি শক্তিশালী হলে। বুদ্ধি থাকলে এবং তা প্রয়োগ করলে ডাইনিও হয়। মেয়েরা নিজেদের কথা বললেই বিপদ। এ কথা আজকাল মাঝেমধ্যে আলোচিত হয়। তবে বহু যুগ ধরে বলে আসা গল্পে বিশেষ বদল আসে না। ফলে রাক্ষসী না হয়ে লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে থাকার অদম্য চেষ্টা জুড়ে থাকে সমাজের অনেকটা। রাক্ষসী বলে প্রতিষ্ঠিত, মহাকাব্যের এক নারী চরিত্রের কাহিনি নিয়েই গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন তুলছেন কলকাতা শহরের মেয়েরা।

Advertisement

লক্ষ্মী মেয়ে কে? যে সমাজের নিয়ম মেনে চলে সর্বক্ষণ, সে-ই। সে নিয়ম বানাল কে? সমাজ চলে পুরুষতন্ত্রের নিয়ম মতো। ফলে সব নিয়মই পুরুষতন্ত্রের হিসাব মতো। সে সব কথাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছেন শহর কলকাতার মেয়েদের একটি দল। নাটকের মাধ্যমে প্রথাগত বিশ্বাস-গল্প-কথাকে নতুন করে প্রশ্ন করতে শেখাচ্ছে সে দল।

দলের নাম ‘সমূহ’। মহিলা এবং ক্যুয়ার মানুষদের দল। নাটক করেন ওঁরা। তবে শুধু নাটকে আটকে রাখেন না নিজেদের। মেয়েদের নাটকের দল মানে যে পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ, এমনও নয়। ওঁরা শুধু জানেন মেয়েদের কথা বলতে হবে। ফলে যা কিছু ‘মেয়েলি’, তা-ই তুলে ধরেন ওঁরা। কখনও রান্নাবান্না, সেলাইয়ের মতো ‘মেয়েলি কাজ’ হয় ওদের হাতিয়ার, আর নাটকে ‘মেয়েলি’ আখ্যান বলাও তা-ই। এ ভাবেই মেয়েদের নিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত নানা ধারণায় একটু একটু করে বদল আলার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ওঁরা।

Advertisement

মহাভারতে হিড়িম্বার যে রাক্ষসী পরিচয়, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে ‘সমূহ’। ছবি: দেবলীনা মৌ।

সম্প্রতি ‘সমূহ’-এর ‘অথ হিড়িম্বা কথা’ নাটকের ৫০তম অভিনয় হয়। মহাভারতে হিড়িম্বার যে রাক্ষসী পরিচয়, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে ‘সমূহ’। পুরুষতন্ত্র নারীদের পরিচয় নিজের মতো করে গড়ে। পছন্দ-অপছন্দের মাপকাঠিও হয় নিজের মতো করে। সে সব নিয়ে প্রশ্ন তোলে ‘সমূহ’। পুরনো গল্প নতুন করে বলে। নতুন করে ভাবতে শেখানোর চেষ্টা করে। ২০১৯ সালে প্রথমে একটি প্রযোজনার কথা ভাবা হলেও সকলের উৎসাহে তৈরি হয় দল। নানা ধরনের মহিলা এতে যোগ দেন। সকলেই যে অভিনয় করেছেন আগে, এমনও নয়। সমাজে লিঙ্গ বৈষম্যের নানা অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখেই তৈরি হচ্ছে নাটক। তবে লিঙ্গভেদ নিয়েই যে শুধু কাজ করবেন তাঁরা, এমন নয়। সমাজে প্রান্তিকের অভিজ্ঞতার বিভিন্ন দিক থেকে তুলে ধরতে চান তাঁরা। নিজের বার্তা সকলের কাছে পৌঁছে দিতে নাটক করেন বিনা টিকিটে। কখনও সে প্রযোজনা নিয়ে চলে যান সুন্দরবন, তো কখনও গোবরডাঙা। ‘অথ হিড়িম্বা কথা’ যেমন এক দিনে নারীদের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তেমন সমাজের শ্রেণি বিভেদের প্রসঙ্গও উঠে আসে।

মন দিয়ে নাটক করতে হলে মাথা উঁচু করে বাঁচতেও তো হবে। তাই যে কোনও মহিলা নাট্যকর্মী কোনও নির্যাতনের শিকার হলে পাশে থাকে ‘সমূহ’। যদি সেই নারীর বাসস্থান না থাকে, তবে দলের অন্যদের সঙ্গে থাকতেও পারেন। দক্ষিণ কলকাতায় তৈরি করেছেন তাঁরা নিজেদের থাকার ব্যবস্থা। সেই বাড়িতে জড়ো হয়ে দলের অন্যান্য কাজও করেন সদস্যরা। এক কথায় বলতে গেলে নিজেদের জীবনের কথাও তুলে ধরেন তাঁরা নাটকে। আবার ‘অথ হিড়িম্বা কথা’ তাঁদের বাস্তবে এগিয়ে যাওয়ার শক্তিও জোগায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement