অতিকায় এক প্রমোদতরী। যার ভিতরে থাকবে ছোটখাটো একটা শহরের সবরকম সুযোগ-সুবিধা। এমনই এক ‘সুপারইয়ট’ বানাচ্ছে ক্রোয়েশিয়ার এক সংস্থা।
দৈর্ঘ্যে ৯৬০ ফুট ওই প্রমোদতরীর ভিতরে থাকবে ১১৮টি অ্যাপার্টমেন্ট। যার মালিকানা পেলে সেখানে আজীবন থাকতে পারবেন যে কেউ।
ব্যাপারটা অনেকটা হবে বাড়ির মতোই। পার্থক্য একটাই, এই বাড়িতে বসে দুনিয়া ঘুরে বেড়ানো যাবে।
বাড়ির আরামে থেকে দুনিয়া সফরের এই সুযোগ নিতে উঠেপড়ে লেগেছেন বিশ্বের ধনকুবেরেরা।
নাম সুপারইয়ট। এমন সুপারইয়ট আগে বানানো হয়নি তা কিন্তু নয়। তবে ৯৬০ ফুট দীর্ঘ বাসযোগ্য ইয়ট এর আগে কেউ দেখেননি। সেই অর্থে একে বিশ্বের বৃহত্তম সুপারইয়ট বলা চলে।
২০২৪ সালে তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা এই সুপারইয়টের। তবে এখন থেকেই তার অ্যাপার্টমেন্টের দর হাঁকার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।
১১৮টা অ্যাপার্টমেন্ট নানা আকারের। দু’কামরার থাকার জায়গার পাশাপাশি রয়েছে ১৪ খানা অতিকায় ডুপ্লে। রয়েছে দু’টি ট্রিপ্লে পেন্টহাউসও।
তবে এই অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। থাকতে চাইলে মালিকানা নিতেই হবে।
সাধারণ অ্যাপার্টমেন্টের দাম ৮০ লক্ষ পাউন্ড থেকে শুরু হয়ে ৩ কোটি পাউন্ড গিয়ে থামলেও ডুপ্লে আর ট্রিপ্লের নাগাল পাওয়া ধনকুবেরদের পক্ষেই সম্ভব।
তবে আকার আকৃতি যেমনই হোক প্রত্যেকটি অ্যাপার্টমেন্ট পুরোদস্তুর বাড়ির মতোই। রান্নাঘর, শোওয়ার ঘর, বসার ঘর, পড়ার ঘর, খাবার ঘর এমনকি বারান্দাও আছে। বাড়তি পাওনা— সব জানলা থেকেই সমুদ্র দেখার সুযোগ।
সবচেয়ে ছোট অ্যাপার্টমেন্টটি ১৭০০ বর্গফুটের। সুযোগ সুবিধায় সেগুলি কোনও বিলাসবহুল হোটেলের থেকে কম নয়। চাইলে ‘বাড়ি’-র মালিক তা নিজের মতো সাজিয়ে নিতেও পারবেন। শুধু ইচ্ছের কথা জানানোর অপেক্ষা।
এ ছাড়া সুপারইয়টে থাকবে ছ’রকম রেস্তরাঁ, স্পা, জিম, ক্লাব, গ্রন্থাগার, সিনেমা হল, বাসিন্দাদের প্রাতর্ভ্রমণের জন্য কৃত্রিম সবুজ মাঠ। থাকছে কৃত্রিম পুকুরে মাছ ধরার ব্যবস্থাও।
অতিকায় এই প্রমোদতরীর নাম দেওয়া হয়েছে ‘নিয়র্ড’। গ্রিক পুরাণে নিয়র্ড হলেন জলের দেবতা। সুপারইয়ট নিয়র্ডও নিজের গোত্রে সর্বশ্রেষ্ঠ, দাবি প্রস্তুতকারীদের।
জাহাজ তৈরির দুনিয়ার নামি সংস্থা এসপেন ওইনো। তারাই দায়িত্ব নিয়েছে নিয়র্ডের অন্দরসজ্জার। প্রমোদতরীটিকে কী ভাবে সাজানো হবে তার নানা পরিকল্পনা সামনে এনেছে তারা।
সংস্থার কথায়, বিলাসবহুল হোটেলে যা যা সুযোগ সুবিধা থাকে তার সব কিছুই পাওয়া যাবে নিয়র্ডে। থাকবে বিশ্বের সেরা ওয়াইনের সংগ্রহশালা। বাসিন্দারা যে কোনও সময়ে সেখানে গিয়ে ওয়াইনের স্বাদ নিতে পারবেন।
থাকবে ওয়াটার স্পোর্টসের সুযোগ। অজানা দ্বীপে নোঙর ফেললে নিয়র্ডের নিজস্ব ডক থেকে স্কি বোট নিয়ে বেড়িয়ে পড়া যাবে অ্যাডভেঞ্চারে। আবার চাইলে ৫০০০ বর্গফুট ভাসমান বিচ ক্লাবে হাতে ককটেল নিয়ে সমুদ্রস্নানও করতে পারবেন তাঁরা। নিয়র্ডে থাকবে দু’টি সাবমেরিনও।
নিয়র্ডের মূল নকশাকার জঁ মাইকেল গ্যাথি। তিনি জানিয়েছেন, বাসযোগ্য এই সুপারইয়টকে সব দিক থেকে সেরা বানাতে চান তিনি। যা সময়োত্তীর্ণ হবে। একইসঙ্গে বাসিন্দাদের শান্তিতে থাকার সুযোগ দেবে।
নিরাপত্তার ব্যাপারেও জোর দেওয়া হয়েছে নিয়র্ডে। দামি জিনিস সুরক্ষিত রাখার সুযোগ থাকছে সেফ রুমে। সেই ঘর পাহারা দেওয়ার জন্য থাকবে এলাহি আয়োজন। ক্যামেরা, নিরাপত্তারক্ষীর পাশাপাশি হলিউডির সিনেমার মতো অত্যাধুনিক গ্যাজেট থাকবে নজরদারির জন্য।
স্বাস্থ্যের কথা ভেবে রাখা হয়েছে হাসপাতাল, ল্যাবরেটরি এবং ক্লিনিকও।
নিয়র্ডের বাতানুকূল ব্যবস্থাও অন্যরকম। এখানে একই বাতাস ঘুরে আসে না। এক বার ব্যবহৃত বাতাস ইয়ট থেকে সোজা বাইরে বেরিয়ে যায়। অতিমারির কথা মাথায় রেখেই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।