মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে অ্যালঝাইমার্সের শিকার হন অনেকেই। ছবি: শাটারস্টক।
অমিয়বাবুর বয়স ৮০ পেরিয়েছে। এখন বাড়ি থেকে বেরনো বলতে টুকটাক হাঁটাহাঁটি কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে গল্পগুজবে যোগ দিতে যাওয়া। ফেরার পথে বাড়ির প্রয়োজনে টুকটাক কিছু কিনে ফিরতে বললেই শুরু হয় বিপত্তি। কিছুতেই মনে রাখতে পারেন না কী চাই! অগত্যা দু’-তিনটে জিনিস হলেও ফর্দই ভরসা।
যদিও তাঁর বন্ধু সুশোভনবাবু ৮৪ পেরিয়েও স্মৃতিশক্তিতে পাল্লা দিতে পারেন যে কোনও মধ্যবয়সীকে। ছোটবেলার পড়া কবিতা হোক বা আড্ডায় কবে কে কী বলেছিলেন— গড়গড় করে বলে দিতে পারেন একনাগাড়ে।
এমন বৈষম্য কেন হল হঠাৎ? চার পাশের এমন অনেকেই থাকেন, বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছনোর পরেও যাঁদের স্মৃতিশক্তি তরুণদের সঙ্গেই পাল্লা দেয়। বয়স পেরিয়ে গেলেও তাঁদের খুব একটা কাবু করতে পারে না অ্যালঝাইমার্স।
আরও পড়ুন: হাতে সময় নেই, এ দিকে পেটের চর্বি বাড়ছে? ভরসা রাখুন এই সহজ ব্যায়ামে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রশ অ্যালঝাইমার্স ডিজিস সেন্টারের গবেষকরা এ বার খুঁজে বার করলেন এমন বিভেদের কারণ। অ্যালঝাইমার্স বা স্মৃতিভ্রষ্ট হওয়ার অসুখের সঙ্গে যোগাযোগ খুঁজে পেলেন শারীরিক কসরতের। গবেষণায় অংশ নেওয়া কয়েক জন অশীতিপর বৃদ্ধের জীবিত অবস্থায় জীবনশৈলীর প্রতি নজর রাখেন বিজ্ঞানীরা। মৃত্যুর পর দেহদান করেছিলেন তাঁরা সকলেই। ফলে তাঁদের মস্তিষ্ক নিয়ে কাজ করা আরও সহজ হয়ে ওঠে। সেখান থেকেই বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন মস্তিষ্ক সতেজ থাকার অন্যতম উপায় কী।
গবেষণার প্রধান এরোন এস বুচম্যানের কথায়, যে সব মানুষ বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছনোর আগে থেকেই শারীরিক কসরতে অভ্যস্ত ছিলেন ও জীবনের শেষ পর্যায় পর্যন্ত তা শরীর বুঝে চালিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের স্মৃতিশক্তিরধারভার বেশি। অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও তাঁদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কম।
এ দিকে যাঁরা বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সব রকম শারীরিক কসরত বন্ধ করে কেবলমাত্র শুয়ে-বসে দিন কাটিয়েছেন কিংবা শারীরিক অসুস্থতার জন্য ওঠা-হাঁটা বা ব্যায়ামে অপারগ ছিলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে অ্যালঝাইমার্স কোপ বসায় বেশি।
আরও পড়ুন: অজান্তেই রক্ত দূষিত হচ্ছে না তো? সচেতন থাকুন এ সব বিষয়ে
গবেষণা বলছে, শরীরচর্চাই রুখে দিতে পারে অ্যালঝাইমার্স।
মনোবিদ অমিতাভ মুখোপাধ্যায়ও এই গবেষণার ফলের সঙ্গে একমত। তাঁর কথায়, ‘‘বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক কসরত করে যেতে পারলে শরীরের নানা কলকব্জা যেমন সক্রিয় থাকে, তেমনই শরীরের বিভিন্ন হরমোন ক্ষরণের মান ভাল থাকে। মস্তিষ্কের কোষও তাই তুলনামূলক ভাবে বেশি সক্রিয় থাকে। স্নায়ু ও পেশিরা সক্রিয় থাকায় মস্তিষ্ককে ঠিক সময় ঠিক সিগন্যাল পাঠাতে সক্ষম হয় তারা। তাই ভুলে যাওয়ার সমস্যা কমে।’’
চিকৎসকদের মতে, অল্প বয়স থেকেই তাই নিয়মিত শরীরচর্চা করা উচিত। তা হলে স্নায়ু-পেশি-অস্থি এগুলি বরাবর সতেজ থাকে ও ব্যায়াম করার অনুকূল অবস্থায় থাকে। কাজেই স্মৃতিশক্তি কমে আসছে মনে হলে শরণ নিন শরীরচর্চার। সেখানেই লুকিয়ে মনে রাখার চাবিকাঠি।
(শুরু হয়েছে আমাদের নতুন বিভাগ 'HELLO DOCTOR'। এ বারের বিষয় ‘ব্রণর সমস্যা’। এ বিষয়ে আপনার প্রশ্ন পাঠান query@abpdigital.in এই মেল আইডি তে। উত্তর দেবেন ত্বক বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় ঘোষ।)