সারা দিন টার্গেট, কেআরএ, আর নিখুঁত হয়ে ওঠার লক্ষ্যে ছুটতে গিয়ে যে সময়টায় হাঁফিয়ে ওঠেন, সে সময়টায় চোখ টানে অফিস ক্যান্টিন, কাফেটেরিয়া। কিংবা অফিস কোণের আড্ডা হাতছানি দেয়। মনে হয় একটু চাপ কমিয়ে আসি।
কিন্তু এই চাপ কমানোর পদ্ধতিতেই নাকি থেকে যাচ্ছে গলদ। আধুনিক গবেষণা অন্তত তা-ই বলছে। অফিসে কোনও কারণে সমস্যা বা মনোমালিন্য হলে অন্য কোনও সহকর্মীর সঙ্গে তা ভাগ করে নিলে মনে হয় কষ্ট লাঘব হল! মনে করেন এই সহকর্মী আপনাকে অনেকটা আরাম দেয়? সে ধারণা নাকি একেবারেই ভুল!
‘আমেরিকান হেলথ অ্যাসোসিয়েশন’-এর গবেষণাও বিশ্বের তাবড় মনোবিদদের সঙ্গে একমত। তাঁদের বক্তব্য চাপ কমাতে বরং এড়িয়ে চলুন সহকর্মীদের!
আজ্ঞে হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি গবেষণা চালিয়েছেন মনোবিদ উলরিকা লিয়নস। তাঁর মতে, সারা দিনের কাজের চাপ, ব্যস্ততা ও ব্যর্থতার হিসেবকে আরও বেশি করে সমস্যায় ফেলে সহকর্মী-সঙ্গ। কেমন করে?
তাঁর মতে, চাপ নিয়ে কাজ করার সময় এমনিতেই মস্তিষ্কের কোষগুলি অতিরিক্ত দায়ভার বহন করে। এই সময় তাকে কাজ থেকে সরিয়ে হঠাৎই আড্ডায় মাতিয়ে তুললে মাথার কোষ তাতে সাময়িক মুক্তি পায়, কিন্তু এর ফল হয় উল্টো। কিছু পরে ফের কাজে বসলে সে আর মোটেই মনঃসংযোগ করতে পারে না।
বিশেষ করে সহকর্মীদের সঙ্গে অফিসেরই নানা সমস্যা ভাগ করে নেওয়ার সময় তাঁদের মতামত ও বিচার এমন ভাবে মনের উপর চেপে বসে যে, তাতে সেই সমস্যার প্রসঙ্গ আরও প্রভাব বিস্তার করে মাথায়। এ ছাড়াও সহকর্মীদের সঙ্গে আড্ডা এড়ানোর আরও কিছু কারণ খুঁজে পেয়েছেন উলরিকা লিয়নস। কেমন সে সব?
তাঁর মতে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বিশেষ করে প্রাইভেট ও কর্পোরেট অফিসে পদোন্নতির চোরাগোপ্তা টান অনেক সহকর্মীর মধ্যেই লুকিয়ে থাকে। সে সব বাইরে প্রকাশ না পেলেও তা থাকেই। এমন কারও সঙ্গ কখনও নিঃস্বার্থ ও লাভজনক নয়।
কারণ, আপনার চাপের মুখে থাকাকে সেই সহকর্মী নিজের স্বার্থে ভুল ভাবে ব্যবহার করতে পারে। ফলে যাতে আরও চাপে পড়েন বা ভুলে জর্জরিত হয়ে যান, সেই পদক্ষেপ নিষ্পাপ মুখে করে যেতেই পারেন, যা হয়তো আপনার বোঝার অতীত।
তা ছাড়া অফিস মাত্রই তাতে কাজের একটা আলাদা জগৎ থাকে। স্কুল-কলেজের সখ্য অফিসে খুব একটা গড়ে ওঠে না। উঠলেও তা অফিস বদলানোর পরেও সমান মাত্রায় টিকে আছে, এমন নজির কম। তাই যে যোগাযোগ ক্ষণস্থায়ী, তাকেই চাপ কমানোর মন্ত্র করে ফেললে মস্তিষ্কের কোষও এক সময় তা মেনে নেয় না। কারণ, অবচেতনে কাজ করে চলে এই আলাদা জগতের বিষয়টি।
প্রতিযোগিতামূলক সম্পর্কের রসায়নের কথা আসলে আপনার মস্তিষ্কেও কাজ করে চলে অবিরত, আপনার অবচেতনেই। তাই সহকর্মীদের সঙ্গে আড্ডায় সাময়িক আরাম পেলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না বরং কাজের চাপ বাড়ায়।
তা ছাড়া অফিসের নানা সমস্যা নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলা আসলে কোনও সমাধানের পথে পৌঁছতে দেয় না। কারণ, অফিসের নিয়মে তাঁরাও বাঁধা। একই রকম চাপ তাঁদের উপরেও রয়েছে। ফলে বিষোদ্গারই সার। আর এতে হতাশা আরও চেপে বসে। তা হলে চাপ কমানোর উপায়?
উলরিকা লিয়নসের মতে, কাজের চাপ বাড়লে একটু উঠে পায়চারি করে আসুন, চোখে-মুখে জল দিন। দরকারে কিছু ক্ষণ হেডফোনে গান শুনুন। প্রয়োজনে আধ ঘণ্টার ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসুন। এতে কাজের মান বাড়বে, সময় নষ্টও হবে না।
বরং আড্ডা ও কফি খাওয়ার ইচ্ছে সারুন নিজস্ব কিছু বন্ধুর পরিসরে। সেখানে অফিস প্রসঙ্গ না উঠলেই মস্তিষ্ক বিরাম পায়। সারা দিন অফিসের চাপ কাটাতে অফিসেরই কাউকে বেছে নেওয়া মোটেই কাজের কথা নয়। একান্তই তেমন সখ্য গড়ে উঠলে নিজেদের মধ্যে অফিস সংক্রান্ত আলোচনা এড়িয়ে চলুন।