প্রতীকী ছবি।
বাঙালি মানেই দফায় দফায় চা। সেই চা লিকার অর্থাৎ ব্ল্যাক টি হওয়াই বাঞ্ছনীয়, কারণ এতে জ়িরো ক্যালরি। দুধ, চিনি মিশ্রিত চায়ে স্বাদ থাকতে পারে, কিন্তু উপকারিতা অনেকটাই কমে যায়। একই কথা প্রযোজ্য কালো কফির ক্ষেত্রেও। দুধ, ক্রিম, চিনি মেশানো কফি নিয়মিত খেলে, লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি। অনেকে উপকারিতার জন্য হার্বাল টি, গ্রিন টি খেয়ে থাকেন। তবে চিরাচরিত ব্ল্যাক টি-র উপকারিতা কোনও অংশে কম নয়। কালো চা-কফির মধ্যে গুণাগুণের মাত্রা মোটামুটি একই।
চায়ে পে চর্চা
ডায়াটিশিয়ান কোয়েল পাল চৌধুরীর মতে, ‘‘আমি গ্রিন বা হার্বাল টি-র বদলে ব্ল্যাক টি খাওয়ার পরামর্শ দিই। এতে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট খুব বেশি মাত্রায় থাকে। মেটাবলিজ়ম বাড়ানোর জন্য রোজ সকালে এক কাপ কালো চা পান করা উপকারী।’’ এনার্জি বাড়ানোর জন্যও চা কার্যকর। আবার অন্য দিকে সারা দিনের পরিশ্রমের পরে এক কাপ গরম চা আমাদের ক্লান্তি দূর করে দিতে পারে। চায়ের মধ্যে থাকা কিছু উপাদান আমাদের নার্ভকে অ্যাক্টিভ করে দেয়, যে কারণে মন-শরীর খানিক চনমনে হয়ে ওঠে। তাই রাত জাগতে হলে অনেকে চা বা কফি খান। কার্ডিয়াক সমস্যা রয়েছে যাঁদের, তাঁরাও ব্ল্যাক টি খেতে পারেন। আমাদের শরীরে এলডিএল, যাকে ব্যাড কোলেস্টেরল বলা হয়, তার মাত্রা কম রাখতে সাহায্য করে ব্ল্যাক টি। ডায়াটিশিয়ান সুবর্ণা রায়চৌধুরীর কথায়, ‘‘ব্ল্যাক টি-র মধ্যে পলিফেনল থাকে, যা আমাদের ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে। শরীরে ভাল ব্যাকটিরিয়ার গ্রোথে সাহায্য করে।’’ অনেক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, চায়ের মধ্যে ক্যানসার প্রতিরোধক উপাদান রয়েছে। তবে এটি তর্কসাপেক্ষ।
কফির কম্বোপ্যাক
বাঙালি বাড়িতে চায়ের মতো জনপ্রিয় না হলেও কফিপ্রেমীর সংখ্যা কম নয়। কোয়েল বলছিলেন, ‘‘মুড বুস্ট করতে, এনার্জি বাড়াতে ব্ল্যাক কফি দারুণ কাজে দেয়। এর মধ্যে ভিটামিন বি টু, ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে। ব্ল্যাক কফির মধ্যে থাকা উপাদানগুলি পার্কিনসনস ডিজ়িজ়, অ্যালঝাইমার্স রোগীদের জন্য ভাল।’’ যাঁদের ডায়াবিটিস আছে, যাঁরা ওবেসিটিতে ভুগছেন তাঁরাও কালো কফি খেতে পারেন। মেদ কমাতে এই পানীয় উপকারী। কফিতেও প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট রয়েছে। বলা হয় ব্ল্যাক কফিও ক্যানসার রোধে সাহায্য করে।
‘‘কালো কফি এবং চা— দুইয়ের মধ্যেই ক্যাফেইন রয়েছে। এক কাপ কফিতে সেই পরিমাণ ২০০ মিলিগ্রাম। চা-এ সেটি ৬০ মিলিগ্রাম। যে কারণে কফি খেলে এনার্জি বেশি পাওয়া যায়,’’ বক্তব্য সুবর্ণা রায়চৌধুরীর। এই দুই পানীয়তেই ক্লোরোজ়েনিক অ্যাসিড থাকে, যা শরীরে গ্লুকোজ়ের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে বলেও তিনি জানালেন।
পরিমাণ ও উপায়
কোনও কিছুই অতিরিক্ত ভাল নয়। যে কারণে উপকারী জিনিসও মাত্রা রেখেই খেতে হয়। ডায়াটিশিয়ানরা বলেন, দিনে ৩-৪ কাপ ব্ল্যাক টি বা কফি খাওয়া যেতেই পারে। কিন্তু কাজ বা আড্ডার মাঝে নেশার মতো কাপের পর কাপ চা-কফি খেয়ে যাওয়া একেবারেই অনুচিত। কোয়েল পাল চৌধুরীর পরামর্শ, ‘‘ভারী খাবারের এক ঘণ্টা আগে বা পরে চা-কফি খাওয়া উচিত। খাবারের সঙ্গে এগুলি খেলে খাদ্যদ্রব্যের আয়রন শরীরে অ্যাবজ়র্ব হবে না।’’ সকালবেলা একদম খালি পেটে চা-কফি না খেয়ে, দুটো বিস্কিট বা অল্প একটু মুড়ির সঙ্গে তা খাওয়ার নিদান ডায়াটিশিয়ানদের।
ব্ল্যাক টি বা কফির মধ্যে সে অর্থে খারাপ উপাদান নেই। কিন্তু কফির মধ্যে পটাশিয়াম বেশি মাত্রায় থাকার ফলে রেনাল পেশেন্টরা অতিরিক্ত কালো কফি খেলে, কিডনির সমস্যা হতে পারে বলে জানালেন সুবর্ণা রায়চৌধুরী। যাঁরা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন, তাঁরা খাদ্যতালিকায় ব্ল্যাক টি-কফি সংযোজন করে ফেলুন। কারণ এতে ক্যালরির মাত্রা শূন্য। কিন্তু এতেই যদি দুধ-চিনি মিশিয়ে ফেলেন, তা হলেই এটি আর স্বাস্থ্যকর পানীয় বলা যাবে না। অনেকে কালো কফিতে চিনির বদলে মধু দেন। মধুতেও ক্যালরি আছে। তাই এতে আলাদা করে কোনও লাভ হয় না, বলেই ডায়াটিশিয়ানদের মত। লেবু, পুদিনা পাতা বা আদা ভিজিয়ে অনেকে চা খেতে ভালবাসেন। এতে কোনও সমস্যা নেই। তবে সকালবেলা খালি পেটে লেবু দেওয়া চা খাওয়া উচিত নয়, অ্যাসিডের সমস্যা হতে পারে।
অনেকে বলেন, কালো চা মুখে রোচে না বা ব্ল্যাক কফি ভীষণ তেতো লাগে। ডায়াবিটিস না থাকলে দিনে এক বার দুধ-চিনি দিয়ে চা খেতেই পারেন। কিন্তু ধীরে ধীরে অভ্যেস করলে দেখবেন চা দুধ-চিনি ছাড়াই ভাল লাগছে।