সন্তান কেন কথা শুনছে না, কারণ জানেন কি। ছবি: ফ্রিপিক।
সন্তান কি খুব অবাধ্য হয়ে যাচ্ছে? কোনও কথাই শুনতে চাইছে না? এর দায় কি এড়িয়ে যেতে পারেন অভিভাবকেরা? ভালবাসার নামে ছোট থেকে সন্তানের সমস্ত জেদকে প্রশ্রয় দেওয়ার ফলই কি পরবর্তী সময়ে অবাধ্যতার কারণ হয়ে উঠছে। সন্তান বেপরোয়া হয়ে গেলে বাবা-মাকে অপদস্তও হতে হয়। কিন্তু ভেবে দেখেছেন, কেন কথা শোনে না আপনার সন্তান? তা কি কেবলই তার দোষ, না কি সেখানে অন্য কারণও রয়েছে?
১) শিশুকে কি সবসময়েই নির্দেশের ভঙ্গিতে কথা বলেন? মনোবিদেরা জানাচ্ছেন, জোরে কথা বলা বা চেঁচিয়ে নির্দেশ দিলে শিশুরা অনেক সময়েই বুঝতে পারে না। আতঙ্ক বা ভয়ও চেপে বসে তাদের মনে। তখন কথা শোনার প্রবৃত্তি হারিয়ে ফেলে তারা। শিশুকে কোনও নির্দেশ দিতে হলে খেলার ছলে বলুন, অথবা কিছু বোঝাতে হলে গল্পের মতো বোঝান। চেঁচামেচি করে নয়।
২) সারা ক্ষণ সন্তানের সমালোচনাই করে যান? অন্যের সঙ্গে তুলনা টানেন? তা হলে শিশু সবসময়েই হীনমন্যতায় ভুগবে। অভিভাবকদের প্রতি শ্রদ্ধাও হারাবে। তখন আপনার কথায় গুরুত্ব দিতে চাইবে না।
৩) অনেক শিশুই চঞ্চল, ছটফটে। এক জায়গায় বেশি ক্ষণ স্থির হয়ে বসে না। কথা শোনার ধৈর্যই তার নেই। সে ক্ষেত্রে আপনি কিছু বলল হয়তো সে কথাটির গুরুত্ব বুঝতেই পারবে না। সে ক্ষেত্রে বকাবকি না করে ধৈর্য ধরে ওকে বোঝাতে হবে। ছোট ছোট খেলার মাধ্যমে শিশুর মনোযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করুন। শিশুর হাতে মোবাইল না দিয়ে গল্পের বই পড়ে শোনান। তা হলে শোনার আগ্রহ তৈরি হবে।
৪) ছোট থেকেই খুব কড়া শাসনে রাখলে, শিশু কথা তো শুনতেই চাইবে না, বরং আপনার সঙ্গে দূরত্বও তৈরি হবে। অনেক বেশি জেদি ও একগুঁয়ে হয়ে উঠবে শিশু। মনোবিদেরা বলছেন, শিশুর সব কথায় বা কাজে ‘না’ বলবেন না। তাকে তার মতো কাজ করতে দিন। তবে সতর্ক নজর রাখুন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা দিন। তা হলেই দেখবেন নিজের ঠিক বা ভুলগুলি থেকে নিজেই শিখে যাবে।
৫) সন্তান যখন কথা বলে, কিছু বোঝাতে চায়, তখন তার কথার গুরুত্ব দেন তো? অনেক অভিভাবকই শিশুর কথা শুনতে চান না। হয় ব্যস্ততার কারণ দেখান না হলে বকাবকি করে চুপ করিয়ে দেন। মনোবিদেরা বলছেন, শিশু যদি দোষও করে তা হলেও তার যুক্তিগুলি শুনুন। তা হলেই তাকে সঠিক পথে আনার রাস্তা তৈরি হবে। কোনটি ঠিক আর কোনটি নয়, বুঝিয়ে বলতে পারবেন।
৬) আপনি যদি সন্তানকে সঙ্গ না দেন,তা হলে সে-ও আপনার কথা শুনতে চাইবে না। দিনভর যতই ব্যস্ততা থাক, নির্দিষ্ট সময় রাখুন যখন আপনি সন্তানের সঙ্গেই থাকবেন। যদি দূরে থাকতে হয়, তা হলে ফোন বা ভিডিয়ো কলে তার সঙ্গে গল্প করুন। তার সব কথা শুনুন। তা হলেই ভরসার জায়গা তৈরি হবে।
৭) শিশুকে খুব বেশি সময় ধরে টিভি, মোবাইল, ট্যাব দেখতে দেবেন না। ‘স্ক্রিন টাইম’ যত বাড়বে, ততই শিশুর একাগ্রতা ও মনোযোগ কমবে। সারা ক্ষণ মোবাইল নিয়েই থাকবে, কথা শোনার অভ্যাসই তৈরি হবে না।