বাবা-মায়ের তিক্ততা যেন সন্তানকে স্পর্শ না করে। ছবি-প্রতীকী
বাবা, মা, সন্তানকে নিয়েই ছোট্ট পরিবার। কিন্তু বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা সেই পারিবারিক ভারসাম্য বিঘ্নিত করে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের তিক্ততা সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে সন্তানের উপর। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে আইনত দাঁড়ি পড়ে যাওয়া মানেই সব সমস্যার নিষ্পত্তি নয়। সন্তানের দায়িত্ব কে পেলেন? যিনি পেলেন না, তিনি কী ভাবে সন্তানকে কাছে পাবেন? সন্তানকে উপলক্ষ করে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কি ফের একটা দ্বন্দ্ব শুরু হবে? এমন হাজারটা প্রশ্ন জড়িয়ে থাকে বিবাহবিচ্ছেদের প্রসঙ্গ এলেই।
অনেকেই এমন আছেন যাঁরা সন্তানের কথা ভেবেই বিয়ে ভাঙার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তবে বাবা-মায়ের মধ্যে রোজের ঝগড়া, একে অপরকে দোষারোপ, কটু ভাষার প্রয়োগ— সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। তার বেড়ে ওঠার পক্ষে বাড়ির এমন পরিবেশ মোটেও ভাল না। তাই সন্তানের কথা ভেবে বিবাহের সম্পর্ককে টিকিয়ে রেখে তিক্ততা বাড়ানোর চেয়ে বিবাহবিচ্ছেদই বোধহয় শ্রেয়। বাড়িতে অশান্তি হলে তার ফল শিশুর উপরে পড়বেই। তাই ডিভোর্স হয়ে গেলে পুরনো তিক্ততার জের না টেনে, সন্তান প্রতিপালনে বাবা-মা দু’জনকেই ইতিবাচক কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের তিক্ততা সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে সন্তানের উপর। ছবি-প্রতীকী
১) বিবাহবিচ্ছেদের পরে বাচ্চার দেখাশোনার বিষয়টা খুব স্পর্শকাতর। পুরনো বিবাদ, অশান্তি টেনে নিয়ে যাওয়ার মানে হয় না। খুদের সঙ্গে বাবা ও মাকে আলাদা আলাদা ভাবে সংযোগ তৈরি করতে হবে। এটা খুব পরিকল্পিত আর সুষ্ঠু ভাবে করতে হবে।
২) সন্তানের মধ্যে আচরণগত সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই তাকে কাউন্সেলিং করাতে হবে। কোনও বাবা-মা যখন সন্তানকে থেরাপি করাতে নিয়ে যাচ্ছেন, তার অর্থ তিনি সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত। এটা ইতিবাচক দিক। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে যত ঝড়ই বয়ে যাক, সন্তানের উপর সেই আঁচ পড়তে না দেওয়াই ভাল।
৩) সন্তান যে বয়সেরই হোক, বিচ্ছেদের কারণ সে জানতে চাইবেই। কী কারণে বাবা-মা আলাদা হয়েছেন, সেই জটিলতা বোঝার ক্ষমতা ছোটদের থাকে না। বাবা-মায়ের জবাবের উপরে নির্ভর করছে সন্তানের মানসিক গঠন। ওদের বোঝাতে হবে, বাবা-মা কোনও কারণে আলাদা হয়ে গেলেও, তাঁরা একে অপরের শত্রু নন। তাঁরা দু’জনে সন্তানের পাশে সব সময়ে থাকবেন। সন্তানের সামনে দোষারোপের চাপানউতর কখনই করা উচিত নয়।
৪) বিবাহবিচ্ছেদের পর বাচ্চা কার কাছে থাকবে সেই বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্তই শেষ কথা। যিনি বাচ্চার দায়িত্ব পেলেন না, তাঁর মনে ক্ষোভ জন্মাতে পারে। সন্তানকে যে সময়টুকু তিনি কাছে পাচ্ছেন, সেটুকুতেই বাচ্চার সব আবদার পূরণের চেষ্টা করেন। দামি জিনিস কিনে দেওয়া, রেস্তরাঁয় খেতে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। মাঝেমধ্যে সন্তানের আবদার মেটানো যেতে পারে। কিন্তু নিয়মিত নয়। এতে সন্তানের সার্বিক ভাবে ক্ষতিই হবে।