প্রেম কি বয়স দেখে হয়, আলোচনায় মনোবিদ। ছবি: প্রতীকী।
কথায় বলে, প্রেমে পড়ার কোনও বয়স হয় না। যে কোনও বয়সে নতুন করে জীবন শুরু করাই যায়। তবে প্রচলিত একটি ধারণা, বেশি বয়সের পুরুষরা কমবয়সি প্রেমিকাই বেশি পছন্দ করেন। শুধু ধারণা নয়। বাস্তবেও এর ভূরি ভূরি উদাহরণ রয়েছে। বলিউডে শ্রীদেবী-বনি কপূর, করিনা-সইফ, মিলিন্দ-অঙ্কিতা। টলিউডে দীপঙ্কর দে-দোলন রায়। সম্প্রতি বাংলার ক্রিকেট দলের প্রাক্তন কোচ অরুণলাল-বুলবুলও কিন্তু এই তালিকায় নিজেদের নাম যুক্ত করেছেন। চোখের সামনে অজস্র উদাহরণ, তবুও আমাদের চারপাশে কোনও বেশি বয়সি ব্যক্তি স্বল্পবয়সি কারও প্রেমে পড়লেই সবার যেন বড্ড সমস্যা!
প্রেম জীবনের প্রথম বেলায় আসবে না কি দ্বিতীয়ার্ধে, তা কি আর আমাদের হাতে থাকে? সমাজের চোখরাঙানিকে উপেক্ষা করে সেই প্রেমকে কী ভাবে টিকিয়ে রাখা যায়— এ সব নিয়েই সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এ সপ্তাহের বিষয় ছিল ‘অসমবয়সি প্রেম’।
প্রতি পর্বের আগেই অনুত্তমার কাছে পাঠানো যায় প্রশ্ন। এই পর্বেও ই-মেলে তেমন কিছু প্রশ্ন পেয়েছিলেন মনোবিদ। ২৫ বছর বয়সি সৌরভ লিখেছেন, ‘‘আমাকে সাড়ে চার বছর বয়সে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করা হয়। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে আমার ক্লাসের সব মেয়েই আমার থেকে বয়সে বড় ছিল। স্কুল জীবনে যাদেরই প্রেমেই পড়েছি তাদের মধ্যে কেউ বয়সে কয়েক মাসের বড় কেউ আবার কয়েক বছরের। বছর ছয়েক আগে একজনের প্রেমে পড়ি। সে আমার থেকে দু’বছরের বড়। বাড়িতে জানাজানি হলে দু’জনের বয়সের ফারাক নিয়ে ব্যাপক অশান্তি শুরু হয়। সচেতন ভাবে, পূর্ব পরিকল্পনা করে তো আর প্রেমে পড়া যায় না! তা হলে তো প্রেমে পড়ার আগে সামনের মানুষটির জন্মপত্রিকা যাচাই করতে হয়।’’
এমনই অনেক চিঠি এসেছে মনোবিদের কাছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যক্তি লিখেছেন, ‘‘আমি যার প্রেমে পড়েছি, সে আমার থেকে ১৫ বছরের বড়। ও বিবাহিত। তবে দাম্পত্য সম্পর্কে ও মোটেই খুশি নয়। অসুখী দাম্পত্য থেকে বেরিয়ে এসে আমার হাতটা ধরা এতটা কঠিন হত না, যদি আমি বয়সে ওর থেকে বড় হতাম। এ নিয়ে দু’জনকেই সমাজের নানা কটুক্তি শুনতে হয়। ওর কি নতুন করে আমার সঙ্গে পথ চলার অধিকার নেই? আমি তো ওর বয়সটা দেখিনি, ওকে দেখেছি মাত্র!’’
কী করে এই ধরনের সামাজিক কটাক্ষকে উপেক্ষা করা যায়, তার পরামর্শ দিলেন মনোবিদ। অনুত্তমা বললেন, ‘‘আগেকার দিনে যখন বাল্যবিবাহ হত, তখন থেকেই দেখা হত, যেন মেয়েটির বয়স ছেলেটির তুলনায় অনেক কম হয়। যেন ধরেই নেওয়া হত, নরম মাটি হলে পরিবারের মতো করে গড়েপিটে নেওয়া সহজ হবে। ছোটবেলায় মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হত, যাতে তাদের সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা দীর্ঘ দিন থাকে। অল্প বয়সে একাধিক সন্তান, শরীর ভেঙে যাওয়া, এমনকি অকাল বৈধব্যের সম্মুখীনও হতেন মেয়েরা! ছোটবেলায় ক্লাস ফাইভের বাচ্চা কিন্তু ক্লাস এইটের কোনও দিদির সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করবে না। কিন্তু একটা বয়েসের গন্ডি পেরিয়ে গেলেও বন্ধুত্বে পাতাতে বয়স মোটেই বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। সেখানে ১০ বছরের ফারাক বিরাট একটা সম্পর্কের প্রতিকূলতার জমি তৈরি করে না। যাঁরা এই প্রকার চিঠি পাঠিয়েছেন তাঁদের বলব, আপনারা আপনাদের সম্পর্ক নিয়ে ভাল আছেন তো? আপনাদের মধ্যে বয়স নিয়ে কোনও সমস্যা কিংবা কথা কাটাকাটি নেই তো? তা হলে কিন্তু সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে আর কিচ্ছু যায় আসে না। নারী বয়সে বড় হলেই সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাঁরই দাপট বেশি চলবে, আমাদের চারপাশে অনেকেই এমন ধারণায় বিশ্বাসী! আপনার মনে সেই সংশয় নেই তো? সম্পর্কে আরও অনেক কারণে ঝামেলা-অশান্তি হতেই পারে। তবে বয়স দিয়ে আমরা সেই ঝামেলার বিচারে না হয় না-ই বা গেলাম!’’
অসমবয়সি প্রেমে পড়েছেন অভিনেত্রী বিদীপ্তা চক্রবর্তীও। পরিচালক বিরসা দাশগুপ্তের সঙ্গে এখন তাঁর দীর্ঘ দিনের দাম্পত্য। বিরসার থেকে বিদীপ্তা ৬ বছরের বড়। সম্পর্ক নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করলেন বিদীপ্তাও। বললেন, ‘‘প্রেমটাই তো আসল। আশপাশের মানুষজন তা নিয়ে যা বলছে, বলতে দিন। তাই নিয়ে নিজেদের সম্পর্ক খারাপ করবেন না যেন।’’