ধমক না দিয়ে শিশুকে বুঝিয়েও কাজ হয়। ছবি: সংগৃহীত।
সন্তানকে বড় করা সহজ ব্যাপার নয়। খুদেকে মানুষ করার ঝক্কি সামলাতে গিয়ে অনেক সময়ই অভিভাবক মেজাজ হারিয়ে, বকাবকি করে ফেলেন। দুষ্টুমি হোক বা প়ড়াশোনায় অমনোযোগ, শিশুদের ক্ষেত্রে এটা খুবই স্বাভাবিক। সন্তানকে বড় করতে আদর যেমন প্রয়োজন, তেমনই শাসনেরও দরকার। কিন্তু কোন সময় শাসন দরকার, কখন ঠিক ততটাও না হলে চলবে, তা কিন্তু বুঝতে হবে। দু’বছরের পর থেকেই শিশু হাঁটতে শেখে। তিন বছর থেকেই তার দুষ্টুমিও দেখা যায়। ধীরে ধীরে সে সমাজ, বন্ধু, স্কুলের সঙ্গে পরিচিত হয়। ছোট থেকে ধীরে ধীরে বড় হওয়ার এই সময়ে খুদের কথা না শোনার জন্য বা দুষ্টুমির কারণে অভিভাবকরা কখনও বকাবকি করেন, কখনও হাতও উঠে যায়। বিশেষত মায়েদের। কারণ, তাঁদের বেশিরভাগ সময় সন্তানকে সামলাতে হয়।
শিশুকে না বকে বোঝানো কখন প্রয়োজন?
১. মা যখন অন্য কারও সঙ্গে কথা বলেন, তখন অনেক সময় খুদে বায়না করে। নানা কথা বলে মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে। সে চায় না, মা তাকে কম গুরুত্ব দিক। এদিকে খুদে কয়েকবার ডাকাডাকি করলে, মা-ও অনেক সময় মেজাজ হারিয়ে তাকে ধমক দেন। কিন্তু এতে কি লাভ হয়? শিশু কিন্তু তার সহজাত প্রবৃত্তি অনুযায়ী কাজটি করেছে। সন্তানকে বলা যেতে পারে, সে যখন বন্ধুদের সঙ্গে খেলে, কথা বলে, তখন মা ডাকলে যেমন বিরক্ত হয়, তেমন মাকেও কথা বলতে দিতে হবে। প্রয়োজনে শিশুকে কোনও আঁকার খাতা, খেলনা দিয়ে বসিয়ে রাখা যেতে পারে।
২. পড়াশোনা করতে গিয়ে খুদেরা অমনোযোগী হয়ে পড়ে। জানা জিনিস ভুল করে। তখনই ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন মায়েরা। রাগ হলেও সংযত হওয়া দরকার। পরীক্ষায় ভুল করলে বা স্কুলে ভুল লিখে এলে তাকে নানা ভাবে বুঝিয়ে শোধরানোর চেষ্টা করা ভাল। পড়াশোনা নিয়ে বকবকি করলে শিশুর মনে ভয় তৈরি হতে পারে। ভবিষ্যতে পরীক্ষা নিয়েও ভীতি জন্মাতে পারে।
৩. তিন
বছরের পর থেকে শিশুরা বাইরের জগতের সঙ্গে পরিচিত হতে শুরু করে।
তাদের
বন্ধু হয়। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে সমাজ সম্পর্কে ধারণা
তৈরি
হয়। এই সময় তারা কারও সঙ্গে এমন ব্যবহার করে ফেলতে পারে, যেটা সঠিক
নয়। সন্তানকে অবশ্যই শুধরে দিতে হবে। কিন্তু প্রকাশ্যে বকাবকি
করলে সে
বুঝবে বা শিখবে, এমনটা নাও হতে পারে।
৪. নতুন
নতুন বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত হতে গিয়ে কৌতূহল বশেই তারা ভুল করতে
পারে। হয়তো মাকে নেল পালিশ পরতে দেখে, একলা ঘরে বসে খুদেরও ইচ্ছে
হল।
সেই কাজটি করতে গিয়ে গায়ে-হাতে নেল পালিশ মেখে বসে রইল বা
লিপস্টিক নষ্ট
করে ফেলল। তার কার্যকলাপ দেখলে, সারা দিনের ব্যস্ততার পর মায়ের মাথা গরম
হতেই পারে। কিন্তু একবার ভাবুন তো, খুদে কি সেটা বুঝে করেছে? নেল পালিশ,
লিপস্টিক মায়ের মতো বড় হলে লাগাতে হয়, ছোটরা লাগালে নখ নষ্ট হয়ে
যায়,
এ ভাবে তাকে বোঝাতে হবে।
৫. শিশু ভুল করবে সেটাই তো স্বাভাবিক। ভুল শুধরে দেওয়া মায়ের কর্তব্য। কিন্তু তা কি শুধু বকাবকি করেই হবে? কোনও কাজে সে ব্যর্থ হল। হতেই পারে। ব্যর্থতাও জীবনের অঙ্গ। কোথায় ভুল ছিল, সেটা বুঝিয়ে দিতে হবে। ব্যর্থতা থেকে কী ভাবে শেখা যায়, নীতিকথার গল্প বলে তাকে বোঝানো যেতে পারে।