প্রথমে নিজেকে বোঝান যে মাধ্যমিকের পরীক্ষাই শেষ নয়। ছবি: সংগৃহীত
জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার ফল। মাধ্যমিকের নম্বরের ভিত্তিতে আগামী দিনে কোন বিষয় নিয়ে পড়া সম্ভব, তা নির্ধারিত হয়। স্বাভাবিক ভাবেই এই নিয়ে বাড়তি মানসিক চাপ সৃষ্টি হয় পড়ুয়াদের উপর। বাবা-মায়েরাও দুশ্চিন্তায় থাকেন। কিন্তু জীবন সব সময় পরিকল্পনা মাফিক চলে না। হতেই পারে আশানুরূপ ফল করতে পারেনি আপনার সন্তান। এমনিতেই হয়তো সে ভেঙে পড়বে। তার উপর বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী বা আত্মীয়দের মধ্যে অহেতুক কৌতূহল ও ঘন ঘন ফোন তাকে আরও বিচলিত করে তুলতে পারে। তাই এই সময়ে বাবা-মায়েদের যথেষ্ট সংবেদশীল হয়ে উঠবে হবে। আপনার নিজের আশাভঙ্গ হলেও সন্তানের পাশে থাকাটাই এই সময়ে প্রথম কর্তব্য। কী করণীয়, জেনে নিন।
১। প্রথমে নিজেকে বোঝান যে, মাধ্যমিকের পরীক্ষাই শেষ নয়। ফল আশানুরূপ না হওয়া মানেই যে সন্তানের ভবিষ্যৎ অন্ধকার,তা হতে পারে না। আপনি যদি সন্তানের সামনে আপনার হতাশা প্রকাশ করে ফেলেন, তা হলে সে আরও বেশি অপরাধবোধে ভুগবে।
২। কৌতূহলী আত্মীয়রা এ সময়ে ফোন করবেনই। তাদের যথা সম্ভব এড়িয়ে যান। ফোন ধরলেও স্বাভাবিক ভাবে কথা বলুন। ‘না তেমন ভাল হল না...’ জাতীয় মন্তব্য করবেন না।
৩। কারা ভাল ফল করেছে, কত নম্বর পেয়েছে তা বার বার আলোচনা করবেন না। বন্ধুরা কেমন ফল করেছে, তা জিজ্ঞেস করে বিব্রত করবেন না সন্তানকে। অহেতুক তুলনায় যাবেন না।
৪। বাড়ির পরিবেশ স্বাভাবিক রাখুন। একটা পরীক্ষায় ফল খারাপ হওয়া মানে গোটা পরিবার মিলে শোক পালন করার কোনও অর্থ নেই।
৫। সকলের ক্ষমতা বা মেধা এক হয় না। সারা জীবন আপনার সন্তান যেমন ফল করে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায়, সেই অনুযায়ী প্রত্যাশা রাখুন। কোনও মিরাক্লের আশা করবেন না।
৬। সন্তানকে বোঝান, মাধ্যমিকের ফলই তার একমাত্র পরিচয় নয়। সে কেমন মানুষ, সেটাই আসল।
সকলের ক্ষমতা বা মেধা এক হয় না।
আপনাদের তার প্রতি মনোভাব কিছু নম্বরের জন্য বদলে যাবে না।
৭। সন্তানকে এ সময়ে খুব বেশি একা থাকতে দেবেন না। গল্পগুজব করুন। পরিবারের সকলে মিলে একসঙ্গে কিছু করতে পারেন। তার সঙ্গে ধীরে ধীরে তার ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করুন।
৮। অনেক ছাত্র-ছাত্রী মাধ্যমিকে সে ভাবে ভাল ফল করতে পারে না। কিন্তু তার পর পছন্দের বিষয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে বাড়তি উৎসাহ পায়। ফলও ভাল করে। সন্তানকে তাদের উদাহরণ দিন।
৯। একটা পরীক্ষাই জীবনের শেষ কথা নয়। এর পর আরও অনেক পরীক্ষা থাকবে জীবনে। তাই এইটুকুতে যাতে ভেঙে না পড়ে আপনার সন্তান, তা ভাল করে বুঝিয়ে দিন। এমন অজস্র মানুষ রয়েছেন যাঁরা জীবনে সফল হয়েছেন। তাঁদের মাধ্যমিকের ফল কেউ পরবর্তী জীবনে জানতেও চান না, সে কথা বুঝিয়ে বলুন।
১০। খারাপ ফল যদি আপনার সন্তান একদমই মেনে নিতে না পারে, তা হলে অবশ্যই কোনও মনোবিদের কাছে কাউন্সিলিংয়ের জন্য নিয়ে যান। পেশাগত সাহায্য নেওয়ায় কোনও লজ্জা নেই।