Storytelling

সন্তানকে গল্প শোনান, পড়াও বোঝান গল্পের মতো করেই? দেখবেন, খুদে মোবাইল চাইছেই না

গল্প শোনানোর মতো ভাল অভ্যাস আর হয় না। ছোট থেকেই শিশুর ভাবনাচিন্তার পরিসর আরও প্রশস্ত হবে। শোনার আগ্রহ তৈরি হবে। একাগ্রতাও বাড়বে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৪ ০৯:২০
Share:

শিশুকে নিয়ে চলুন গল্পের দুনিয়ায়। ছবি: ফ্রিপিক।

মায়ের কোলে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে গল্প শোনার দিনগুলো মনে আছে? গরমের ছুটির দুপুরগুলোতে মা বা ঠাকুমার কোল ঘেঁষে বসে রূপকথা, কথামালার গল্প শুনতে শুনতে মন কোথায় যেন হারিয়ে যেত। গল্পের চরিত্রেরা জীবন্ত হয়ে উঠত কল্পনায়। গল্প শুনেই খাওয়া, গল্প শুনতে শুনতেই দু’চোখের পাতা বুঝে আসত। এখনকার খুদেদের এই অভ্যাস আর কোথায়! মায়েরা খাওয়াতে বসেন মোবাইল বা ট্যাবে কার্টুন চালিয়ে। মোবাইল না দেখলে ঘুমোবেই না বাচ্চা। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় বলছেন, ছোটদের গল্প শোনানোর অভ্যাস কত যে ভাল, তা বলে বোঝানোর নয়। এতে শিশুর একাগ্রতা বাড়ে, ভাবনাচিন্তার পথ আরও প্রশস্ত হয়।

Advertisement

মা বা বাবা যখন গল্প শোনান, তখন তাঁর সঙ্গে মনের যোগও তৈরি হয় শিশুর। অনিন্দিতার কথায়, গল্পের মধ্যে এমন এক জাদু রয়েছে, যা শিশুদের ধৈর্য যেমন বাড়ায়, তেমনই শোনার প্রতি আগ্রহও তৈরি করে। সন্তানকে কী ধরনের গল্প পড়ে শোনাবেন, কেমন ভাবে শোনাবেন, এ সবের উপরেও অনেক কিছুই নির্ভর করে। টিভি, ল্যাপটপ, মোবাইলের বাইরেও যে অন্য জগৎ রয়েছে, তার সঙ্গে পরিচয় করানোর জন্য এর চেয়ে ভাল উপায় আর হয় না বলেই মনে করেন অনিন্দিতা। তাঁর মতে, যে কোনও কিছুই গল্পের মতো করে বোঝানো যায় শিশুকে। যদি গল্প শোনায় আগ্রহ তৈরি করতে পারেন, তা হলে জীবনের অনেক ছোট ছোট পাঠ গল্পের মতো করেই ধীরে ধীরে শেখাতে পারবেন শিশুকে। কোনটা ঠিক, আর কোনটা নয়, সেটা বকাবকি করে বললে শিশু বুঝবে না। বরং তাতে ওর জেদ আরও বেড়ে যাবে। মা-বাবার প্রতি অভিমানও বাড়বে। তার চেয়ে উদাহরণ দিয়ে গল্পের মতো করে বলুন। এতে কাজ হবে বেশি।

গল্প শোনানোর আরও অনেক ভাল দিক আছে। গল্প শুনতে শুনতে গল্প পড়ার প্রতি আগ্রহও তৈরি হবে শিশুর। এখনকার সময়ে শিশুরা গল্পের বই পড়ার চেয়ে মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি করতেই বেশি পছন্দ করে। কিন্তু যদি এক বার গল্পের বই পড়ানোর নেশা ধরাতে পারেন বাবা-মায়েরা, তা হলে আর চিন্তা করতে হবে না। এখন অনেক বইয়ের দোকানেই শিশুদের উপযোগী গল্পের বই পাওয়া যায়। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ শর্মিলা সরকার বলছেন, শুরুতেই কঠিন কোনও বই দেবেন না। বরং রঙিন ছবি দেওয়া বই দিন। প্রতিটা গল্প আপনিই পড়ে শোনান। পাশাপাশি, রোজের জীবনের সঙ্গে মিল আছে, এমন ছোট ছোট উদাহরণ তুলে ধরুন। তা হলে শিশু ছোট থেকেই বাস্তবের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে।

Advertisement

শর্মিলা বলছেন, গল্প পড়ে শোনানোর বা বলার সময় সহজ করে বলুন। প্রয়োজন হলে চরিত্রগুলিকে অভিনয় করে দেখান। শিশুকেও তেমনই করতে বলুন। সন্তানের মধ্যে গল্প শোনার বা গল্পের বই পড়ার আগ্রহ তৈরি করতে হলে মা-বাবাকেও পড়ার অভ্যাস করতে হবে। বাড়িতে শিশু যদি ছোট থেকেই দেখে বাবা-মা, সময় পেলেই বই, ম্যাগাজ়িন, খবরের কাগজের পাতা উল্টোচ্ছেন, তা হলে স্বাভাবিক ভাবেই ওর মধ্যেও পড়ার ঝোঁক বাড়বে। কারণ, শিশু সব সময়ে বড়দেরই অনুকরণ করার চেষ্টা করে। তাই আগে মা বা বাবাকে নিয়মিত পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। তবেই সন্তানের মধ্যে সেই অভ্যাস বুনে দেওয়া সহজ হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement