প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। ছবি : সংগৃহীত।
অপমান বা দুঃখ সবার কাছে সমান আঘাত নিয়ে আসে না। কেউ গভীর ভাবে আহত হন। কেউ সেই ধাক্কা দ্রুত কাটিয়ে ভেঙে পড়ার আগের মুহূর্তে সামলে নিতে পারেন নিজেকে। যাঁরা প্রথম পর্যায়ের, তাঁদের মধ্যে অভিনেত্রী প্রিয়ঙ্কা চোপড়া এক জন। আঘাত এলে আবেগ সামলাতে পারেন না। চোখে জল আসে। কেঁদে ফেলেন। এক সাক্ষাৎকারে সে কথা জানিয়েছেন প্রিয়ঙ্কা নিজেই। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি অত্যন্ত আবেগপ্রবণ। কিছু এ দিক ও দিক হলেই আমার চোখ থেকে জল পড়তে শুরু করে।’’
পেশাদার জীবনে বা পারিবারিক বা ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে অপছন্দের অনেক ঘটনাই ঘটে নিত্য দিন। সেই সব ঘটনার কয়েকটি অন্তঃস্থলে গিয়ে আঘাতও করে। আবার কখনও সখনও আনন্দের অনেক ঘটনাও ঘটে, যা আবেগের বাঁধন আলগা করে দিয়ে যায়। কিন্তু সব পরিস্থিতিতেই কি চোখে জল আসে? না আসা উচিত? কথায় কথায় চোখে জল এলে তো অপ্রস্তুতও হতে হয়! মনোবিদ সৃষ্টি বৎসা বলছেন, ‘‘চোখের জল হল আবেগের বহিঃপ্রকাশ। আমাদের শরীর যখন আচমকা উদ্ভুত আবেগকে সামলাতে চায়, তখনই চোখে জল আসে এবং এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। ঘরোয়া উদাহরণের সঙ্গে তুলনা টানলে বলা যেতে পারে বিষয়টা অনেকটা প্রেসার কুকার থেকে বাষ্প নির্গত হওয়ার মতো। বেশি হলেই বেরিয়ে আসে।’’ কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে ওই আবেগের বহিঃপ্রকাশের অন্য কারণও থাকে বলে জানাচ্ছেন মনোবিদ। তাঁর মতে, কারও কারও ক্ষেত্রে আবেগ সামলাতে না পারার কারণ মানসিক চাপ, পুরনো কোনও অভিজ্ঞতা এমনকি, হরমোনজনিত সমস্যার কারণেও হতে পারে।
ঠিক কী কী কারণে সহজে কেঁদে ফেলেন মানুষ?
১। অতি সংবেদনশীলতা: এটি আসলে একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। বহু মানুষই প্রকৃতিগত ভাবে যে কোনও ঘটনার প্রতি বেশি সংবেদনশীল হন। যে কোনও ঘটনা তাঁদের মনের গভীর গিয়ে স্পর্শ করে। তাঁদের মনে দয়ার বোধও বেশি। মনোবিদ বলছেন, ‘‘ওই ধরনের প্রকৃতি যাঁদের তাঁদের আবেগের তার আলগা ভাবে বাঁধা থাকে। সহজেই প্রভাব পড়ে তাতে।’’
২। পুরনো ক্ষত: মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা পুরনো কোনও ক্ষত, যার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা আবেগকে সামলে উঠতে পারেননি— সেই সব কিছু মানসিক ভাবে দুর্বল করে রাখতে পারে। ছোট ছোট বিষয়ে সেই সমস্ত আবেগের বহিঃপ্রকাশ হতে পারে। মনোবিদ সৃষ্টি ওই ধরনের পরিস্থিতিকেই তুলনা করছেন প্রেসার কুকারের সঙ্গে। তিনি বলছেন, ‘‘দিনের পর দিন দিন ভিতরে আবেগ জমতে থাকছে। অথচ বেরোতে পারছে না। এমন পরিস্থিতির মধ্যে থাকলে সামান্য ঘটনাও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে।’’ সৃষ্টি জানাচ্ছেন, কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত চাপ নিয়ে কাজ করেন যাঁরা, তাঁদের ক্ষেত্রেও এমন হতে পারে।
৩। হরমোন: হরমোনের বদল চোখে জল আনতে পারে। ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের ক্ষরণে তারতম্য হলে, বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় কিংবা ঋতুস্রাব চলাকালীন ওই সমস্যা হতে পারে। সেই সময় তাঁরা অল্পেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে পারেন। কেঁদে ফেলতেও পারেন।
৪। ঘুম: ঘুম পর্যাপ্ত না হলে আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে অসুবিধা হতে পারে। মাঝে মধ্যে সেই নিয়ন্ত্রণের অভাবে কান্না মাত্রাও ছাড়াতে পারে।
৫। মানসিক স্বাস্থ্য: মাঝে মধ্যেই যদি কেউ কেঁদে ফেলেন, তবে বুঝতে হবে তিনি গভীর মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এমনও হতে পারে তিনি অবসাদ বা উদ্বেগের সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। সৃষ্টি বলছেন, কান্না যদি দৈনিক কাজের উপর প্রভাব ফেলে তবে অবশ্যই মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।