হাঁপানি, সিওপিডি-র লক্ষণ দেখা দিচ্ছে পোষ্যেরও? কী ভাবে সতর্ক থাকবেন? ফাইল চিত্র।
শীতকাল এলেই বাতাসে ভাসমান দূষিত কণার মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। দূষিত পরিবেশে বেশি ক্ষণ থাকলে ফুসফুসের জটিল রোগ হতে পারে কুকুর ও বিড়ালের। ঠিক মানুষের মতোই বায়ুদূষণের মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে পশুদের উপরেও। পথকুকুর তো বটেই, বাড়িতে পোষা কুকুর ও বিড়ালেরও এই মরসুম বদলের সময়ে বিভিন্ন রকম ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়া-জনিত অসুখ হয়। শীতকালীন অ্যালার্জির প্রকোপ বাড়ে। আর সেই সঙ্গে যদি দূষণের মাত্রা বেড়ে যায়, তা হলে তার প্রভাব পড়ে ওদের শরীরেও।
‘দ্য ল্যানসেট’-এর সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দৈনিক প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পিএম ১০ ও পিএম ২.৫-এর পরিমাণ যথাক্রমে ১০০ ও ৬০ মাইক্রোগ্রাম অতিক্রম করলে তা মানবশরীরের জন্য ক্ষতিকর। এই পিএম বা ‘পার্টিকুলেট ম্যাটার’ আসলে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা, যার মধ্যে কার্বন ও অন্যান্য দূষিত পদার্থ মিশে থাকে। শীতে ভারতের বড় শহরগুলিতে বাতাসের গুণগত মানের অনেকটাই অবনতি ঘটে, যার প্রভাব কেবল মানুষের উপর নয়, পশুদের উপরেও পড়ে। এই বিষয়ে কলকাতার পশু চিকিৎসক ও সার্জন চন্দ্রকান্ত চক্রবর্তী বলছেন, “খুব বেশি গরম বা খুব ঠান্ডায় রোগজীবাণুর প্রকোপ ততটা বাড়ে না। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়াতেই এমন কিছু ভাইরাস সক্রিয় হয়ে ওঠে, যা কুকুর ও বিড়ালের ফুসফুসকে সংক্রমিত করতে পারে। নভেম্বর ও ডিসেম্বরের এই সময়টাতেই তাই ভাইরাসের প্রকোপে নানা রকম অ্যালার্জি-জনিত রোগ ও ফুসফুসের রোগ হতে দেখা যায়। এমনকি, কুকুর ও বিড়ালের হাঁপানি বা সিওপিডি-র সমস্যাও হতে পারে। তখন ওদেরও ঠিক মানুষের মতোই ইনহেলার, নেবুলাইজ়ার বা স্টিম ভেপার দিতে হয়।”
বাতাসে ভাসমান দূষিত কণা, যেমন বেঞ্জিন, পলিসাইক্লিক অ্যারোম্যাটিক হাইড্রোকার্বন(পিএএইচ)শ্বাসের সঙ্গে শরীরে ঢুকে শ্বাসনালিতে জমা হতে থাকে। চন্দ্রকান্তবাবু বলছেন, “বাতাসের দূষিত কণা লাগাতার শ্বাসের সঙ্গে ঢুকতে থাকলে কুকুর, বিড়ালের মতো প্রাণীর ‘রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন’ হতে দেখা যায়। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, শ্বাসযন্ত্রের উপরিভাগ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন হাঁপানির লক্ষণও দেখা দেয়। এই হাঁপানির সমস্যা সবচেয়ে বেশি হয় বিড়ালদের। রাস্তায় থাকা বিড়াল তো বটেই, বাড়িতে পোষা বিড়ালও যদি দূষিত পরিবেশে বেশি দিন থাকে, তা হলে তারও হাঁপানির সমস্যা দেখা দেবে।”
শীতকালীন অ্যালার্জি ও দূষিত বাতাস— এই দুইয়ের প্রকোপেই রাইনোট্র্যাকেটিস, ফেলাইন ক্যালসিভাইরাসের সংক্রমণ হয় বিড়ালের শরীরে। এর প্রভাবেও শ্বাসযন্ত্রের উপরিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কুকুরদের আবার ‘কেনেল কাফ’ নামে জটিল ফুসফুসের রোগ হতে দেখা যায়। এটিও হয় বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাসের কারণে। মানুষের মতো তখন কুকুরেরও ব্রঙ্কাইটিসের সমস্যা দেখা দেয়। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। শুকনো কাশি ভোগাতে থাকে। চন্দ্রকান্তবাবুর কথায়, “ইদানীং কালে ফুসফুসের রোগ বেশি হতে দেখা যাচ্ছে কুকুর ও বিড়ালদের। বিশেষ করে বিড়ালদের শরীরে নানা রকম ভাইরাস-জনিত অসুখ বাসা বাঁধছে, যার অন্যতম প্রধান কারণ হল বাতাসে ভাসমান দূষিত কণা। কুকুর বা বিড়াল কেবল নয়, বিদেশি পাখি, যেমন গ্রে প্যারট, ম্যাকাওদের ফুসফুসেও বিভিন্ন রকম ভাইরাসের উপস্থিতি দেখা গিয়েছে। যাঁরা বিদেশি পাখি বাড়িতে পোষেন, তাঁদের সতর্ক থাকতে হবে। এমন পরিবেশে পোষ্যকে রাখবেন না, যেখানে দূষণের মাত্রা বেশি।”
পরিত্রাণের উপায় কী?
বাড়ির পোষ্যের যদি হাঁপানির মতো লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন লাগাতার কাশি, শ্বাসকষ্ট, চোখ দিয়ে জল পড়ার মতো সমস্যা হয়, তা হলে দেরি না করে পশু চিকিৎসককে দেখিয়ে নিতে হবে। সঠিক সময়ে নেবুলাইজ়ার, ইনহেলার, স্টিম ভেপার বা অক্সিজেন চিকিৎসা করলে বিপদের ঝুঁকি কমবে।
চিকিৎসক জানাচ্ছেন, কুকুর, বিড়ালদের জন্যও স্পেশ্যাল মাস্ক পাওয়া যায়। মাস্ক উইথ স্পেসার এর মাধ্যমে ইনহেলার দেওয়া হয় কুকুর বা বিড়ালকে। অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে গিয়েই তা নিতে হবে।
প্রাকৃতিক উপায়ে ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ রাখতে পারেন। যদি আশপাশের এলাকায় দূষণের মাত্রা বেশি হয়, তা হলে ঘরে এয়ার পিউরিফায়ার রাখা যেতে পারে। পোষ্যকে এমন ঘরে রাখুন, যেখানে বাইরের ধুলো বা ধোঁয়া না আসে। পোষ্য থাকলে ঘরের ভিতর ধূমপান করার অভ্যাস ছাড়ুন। সিগারেটের ধোঁয়া পোষ্যদের জন্যও ক্ষতিকর।