চিকেন কাতসু টেম্পুরা রোল
মাছ-ভাতের এই খাবার জাপান ও চিনে দারুণ জনপ্রিয়। একে সুশি প্রস্তুত করার খুব বেশি ঝক্কি নেই, তায় এক কামড়ে প্রায় সাবাড়। তবে সুশি বহু পুরনো খাবার। এর সম্ভাব্য উৎস ধরা হয় নারে-জুশি নামে এক ধরনের খাবার, যা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় তৈরি করা হত। নুনে জারিত মাছ ফারমেন্টেড ভাতের মধ্যে অনেক দিন ধরে সংরক্ষণ করে রাখা হত। এতে ভাতের ল্যাক্টো-ফারমেন্টেশন মাছ নষ্ট হতে দেয় না। পরে সেই ভাত ফেলে দিয়ে মাছ খাওয়া হত। পরবর্তী কালে অপচয় বন্ধ করার জন্য সেই ভাত খাওয়া শুরু হয়। জাপানি সুশির অর্থ টক ভাত।
তবে এখনকার যুগে ভিনিগারে ভেজানো ভাতের উপরে টাটকা মাছ পরিবেশন করা হয়। ফলে ভাতের স্বাদও সুন্দর ও টাটকা থাকে। তার পদ্ধতিও আবার বিভিন্ন রকম। কখনও ভাতের উপরে মাছের সাশিমি (একদম পাতলা করে কাটা মাছের ফিলে), কখনও ভাতের রোলে মাছ পুরে, আবার নরি রোলে ভাত পুরে... বিভিন্ন কায়দায় সুশি পরিবেশন করা হয়। সুশির এই পরিবেশনের পদ্ধতিতে এর নামও বদলে যায়। তবে সুশি তৈরি করার আগে দরকার সুশি রাইস, সুশি ভিনিগার ও মাছ। একে একে জেনে নেব কোনটা কী ভাবে তৈরি করা হয়,
সুশি রাইস
অনলাইন বা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে জাপানিজ় রাইস বা উরুচিমাই কিনতে পেয়ে যাবেন, যা সুশি তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়। এই ভাত রান্না করার আগে চাল ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। জল পরিষ্কার হলে সেই জলে চাল আধ ঘণ্টা থেকে চল্লিশ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। শীতকালে সময়টা আর-একটু বাড়বে, তখন ঘণ্টাদুয়েক ভিজিয়ে রাখতে হবে। চার কাপ চালে পাঁচ কাপ জল দিয়ে ভাত বসান। মনে রাখবেন ভাত সিদ্ধ হবে আর একটু আঠালো হবে। ভাত সুসিদ্ধ হলে নামিয়ে নিতে হবে।
সুশি ভিনিগার
এটি দোকান থেকে কিনে নিতে পারেন। না হলে ৪ টেবিল চামচ রাইস ভিনিগার, ২ টেবিল চামচ চিনি ও ১ চা চামচ সি সল্ট বা কোশার সল্ট মিশিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন। রান্না করা ভাতের মধ্যে এই ভিনিগার দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে। এই ভাতের সঙ্গেই মাছ দিয়ে পরিবেশন করা হয়। এ বার একে একে শিখে নেব বিভিন্ন রকমের সুশি তৈরি করার পদ্ধতি।
মাকি ও উরামাকি
সিউইড রোলের মধ্যে ভাত আর তার ভিতরে থাকবে মাছ ও আনাজ। এ ভাবে তৈরি হয় মাকি রোল।
উপকরণ: সুশি রাইস ১ কাপ, নরি শিট (সিউইড দিয়ে তৈরি) ১টি, সুশি ভিনিগার ২ টেবিল চামচ, সয় সস অল্প, ওয়াসাবি পেস্ট পরিমাণ মতো, পিকলড জিঞ্জার ১ টেবিল চামচ, রোস্টেড তিল (ইচ্ছে অনুযায়ী), পুরের জন্য: টুনা, স্যামন, অ্যাভোকাডো অর্ধেক, শসা ১টি (পাতলা করে কাটা), অল্প চিংড়ি দিতে পারেন।
প্রণালী: প্রথমে সুশি রাইস জল দিয়ে সিদ্ধ করে নিন। তার পর ভিনিগার মিশিয়ে নিন ভাতের সঙ্গে। এ বার নরি শিট বিছিয়ে দিন বেতের ম্যাটের উপরে। এর উপরে ভাত ছড়িয়ে দিতে হবে। খেয়াল রাখবেন ভাতের স্তর যেন ১ সেন্টিমিটার পুরু হয়। এর মধ্যে এ বার শসার টুকরো, টুনা, স্যামন, অ্যাভোকাডো বা অন্য পুর যা দিতে চান, একে একে দিয়ে দিন। জাপানি মেয়োনিজ় ছড়িয়ে দিতে পারেন। এ বার এক পাশ থেকে ধরে খুব আস্তে-আস্তে চেপে রোল করতে হবে। পুরো রোল করা হয়ে গেলে সেটি ৬-৮ টুকরো করে ওয়াসাবি (হর্সর্যাডিশ কুরিয়ে নিয়ে এটা তৈরি করা হয়), সয় সস ও পিকল জিঞ্জার দিয়ে পরিবেশন করুন। আর এক ভাবেও রোল তৈরি করা হয়। এ ক্ষেত্রে নরি শিট বা সিউইড রোল থাকে ভিতরে আর বাইরে থাকে ভাতের স্তর। একে বলে উরামাকি। মোটামুটি সব ধরনের সুশি তৈরি করতেই মূলত এই প্রণালী অনুসরণ করা হয়। তবে পুর ও তা তৈরি করার পরে গড়নভেদে নামও পাল্টাতে থাকে।
তেমাকি
তেমাকি
সুশি অনেক সময়েই হাতেও রোল করা হয়। নরি শিটের (সিউইডের কোন) মধ্যে ভাত, স্যামন, অ্যাভোকাডো, শসা, বেগুনি বাঁধাকপির কুচি পুরে পানের খিলির মতো গড়ে নিলে পেয়ে যাবেন তেমাকি। স্যামন কাটার সময়ে খেয়াল রাখতে হবে তা যেন খুব পাতলা হয়। শসা, বাঁধাকপির টুকরোও খুব পাতলা করে কাটতে হবে।
নিগিরি
নিগিরি
আয়তাকার এই সুশিতে ভাতের উপরে মাছের টুকরো দিয়ে পরিবেশন করা হয়। তার জন্য উপরোক্ত পদ্ধতিতে ভাত তৈরি করে নিতে হবে। এ বার কাঁচা মাছ (স্যামন), চিংড়ি ব্লাঞ্চ (গরম জলে ডুবিয়েই তুলে নিয়ে ঠান্ডা জলে দিতে হবে) করে নিন। ব্লাঞ্চের সময়ে ঠান্ডা জলে বরফ দিয়ে রাখুন কয়েক টুকরো। এ বার ২ টেবিল চামচ ভাত নিয়ে হাতের চাপে আকার দিন। এর উপরে অল্প ওয়াসাবি দিয়ে মাছের ফিলে বা চিংড়ি সাজিয়ে দিন। পিকল জিঞ্জার আর সয় সস দিয়ে পরিবেশন করুন। নিগিরি অনেক ধরনের হয়। এবি নিগিরি (প্রন), সাকি নিগিরি (স্যামন), ইকা নিগিরি (কালামারি)। শুধু মাছের সাশিমিও তৈরি করা যায়।
টেম্পুরা রোলস
টেম্পুরা রোলস
এগুলো ডিপ-ফ্রায়েড মাকি বা উরামাকি রোল। পুর হিসেবে চিকেন কাতসু বা প্রন, অ্যাভোকাডো ব্যবহার করা হয়। তার পরে টেম্পুরা ব্যাটার তৈরি করতে হবে। টেম্পুরা ব্যাটার তৈরি করার জন্য ১:১ অনুপাতে ময়দা ও কর্নফ্লাওয়ার মিশিয়ে তার মধ্যে বরফঠান্ডা জল ঢেলে ব্যাটার তৈরি করুন। পছন্দমতো সিজ়নিং দিন। রোলগুলি টেম্পুরা ব্যাটারে ডুবিয়ে নিয়ে গরম তেলে ভেজে নিন।
ড্রাগন রোল
ড্রাগন রোল
নুন, পাতিলেবুর রস ও গোলমরিচ দিয়ে চিংড়ি ম্যারিনেট করতে হবে। তার পরে টেম্পুরা ব্যাটারে ডুবিয়ে ভেজে নিন। এ বার উরামাকির মতো রোল করে উপরে অ্যাভোকাডোর স্লাইস দিয়ে পরিবেশন করুন।
ক্যালিফর্নিয়া রোল
ক্যালিফর্নিয়া রোল
এ ক্ষেত্রে উরামাকির মতো রোল তৈরি করতে হবে। তবে পুর হিসেবে ব্যবহার করা হবে ক্র্যাব মিট, অ্যাভোকাডো এবং শসা।
এ ছাড়াও অনেক ভাবে সুশি রোল তৈরি করা যায়। মূল প্রণালী অনুসরণ করে নিজের মতো পুর ভরে নিতে পারেন।