হাজির: লালারসের নমুনা দিতে পরীক্ষা কেন্দ্রে এক বালিকা। সোমবার, পাটুলির একটি ক্লাবে। ছবি: সুমন বল্লভ
প্রথম বার দক্ষিণ কোরিয়ায় ঘটনাটি প্রকাশ্যে এসেছিল গত এপ্রিলে। তা নিয়ে তদন্তে নেমেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও ‘দ্য কোরিয়া সেন্টার্স ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ (কেসিডিসি)। ওই ঘটনায় ৯১ জন আক্রান্তের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল যে, তাঁরা সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরেও দ্বিতীয় বার তাঁদের করোনা পরীক্ষার ফলাফল পজ়িটিভ এসেছে। সেই সূত্রেই সম্প্রতি একাধিক ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বারের করোনা পরীক্ষার ফল পজ়িটিভ আসায় জনসাধারণের একাংশের মধ্যে একটি আশঙ্কাই প্রবল হয়ে উঠেছে— তা হলে কি কোনও সংক্রমিত সুস্থ হয়ে ওঠার কিছু দিনের মধ্যে ফের আক্রান্ত হতে পারেন?
বিজ্ঞানী-গবেষকদের একটা বড় অংশের বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত পুনরায় সংক্রমণ বা ‘রিইনফেকশন’-এর প্রামাণ্য তথ্য মেলেনি। কোরিয়ার ঘটনা উল্লেখ করে তাঁরা জানাচ্ছেন, ওই রিপোর্ট ‘ফলস পজ়িটিভ’ ছিল বলে পরে দেখা গিয়েছিল। ডব্লিউএইচও-র পরামর্শদাতা তথা ‘দ্য সেন্টার ফর ডিজ়িজ়, ডায়নামিক্স, ইকনমিক্স অ্যান্ড পলিসি’-র ডিরেক্টর রামানন লক্ষ্মীনারায়ণ এ বিষয়ে জানাচ্ছেন, যাঁদের সুস্থ হওয়ার পরেও করোনা পরীক্ষার ফল পজ়িটিভ এসেছে, তাঁরা আসলে পুরোপুরি সংক্রমণমুক্ত হননি। তাঁর কথায়, ‘‘পুনরায় সংক্রমণের একটা খবর শোনা গিয়েছিল বটে, কিন্তু পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, প্রথম বার সংক্রমিত হওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট রোগীরা পুরোপুরি ভাবে সুস্থ হয়ে ওঠেননি। তাই তাঁদের নমুনা পরীক্ষার ফল ফের পজ়িটিভ এসেছিল। ফলে পুনরায় সংক্রমণের কোনও সুস্পষ্ট তথ্য এখনও পর্যন্ত নেই।’’
আমেরিকার ‘সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’-ও জানাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত এমন কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি যার মাধ্যমে স্পষ্ট করে বলা সম্ভব, এক বার সংক্রমিত হওয়ার পরেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি পুনরায় সার্স-কোভ-২ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন। তবে তারা এটাও জানাচ্ছে যে, করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কত দিন পর্যন্ত কাজ করে, তা-ও এখনও পরিষ্কার নয়। ফলে এক বার সংক্রমিত হওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সতর্ক থাকা উচিত।
আরও পড়ুন: আক্রান্তের চেয়ে সুস্থের সংখ্যা বেশি, রাজ্যে এক দিনে মৃত ৪ চিকিৎসক
ডব্লিউএইচও-র ‘সাউথ-ইস্ট এশিয়া রিজিয়ন অফিস’-এর কমিউনিকেবল ডিজ়িজ়ের প্রাক্তন ডিরেক্টর রাজেশ ভাটিয়া বলছেন, ‘‘পুনরায় সংক্রমিত হওয়ার বিষয়ে কারও কাছেই কোনও নির্দিষ্ট তথ্য নেই। এটা এখনও একটা ধাঁধা!’’ তবে বিজ্ঞানী-গবেষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, সার্স-কোভ-২ যে ভাইরাস প্রজাতি, অর্থাৎ বিটা করোনাভাইরাসের (মার্স-কোভ, এইচকোভ-ওসি৪৩) অন্তর্গত, তাদের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, এক বার সংক্রমিত হওয়ার পরে তিন মাস বা তারও বেশি সময়সীমার মধ্যে আরও এক বার কেউ সচরাচর করোনায় আক্রান্ত হননি। এক গবেষকের কথায়, ‘‘কেউ সুস্থ হওয়ার পরেও তাঁর করোনা পরীক্ষার ফল পজ়িটিভ এলে এখনও পর্যন্ত দেখা গিয়েছে যে, সেই পরীক্ষার ফলাফলেই কোনও ভ্রান্তি রয়েছে। তবে সত্যিই যদি কেউ পুনরায় সংক্রমিত হন, তা হলে তা নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।’’
আরও পড়ুন: মানবিক দেওয়ালে ঝোলানো থলে, নিয়ে যাচ্ছেন দুঃস্থেরা
‘ওয়ার্ল্ড সোসাইটি ফর ভাইরোলজি’-র প্রেসিডেন্ট এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যাকাডেমির এমেরিটাস-বিজ্ঞানী অনুপম বর্মার বক্তব্য, সুস্থ হওয়ার পরে অল্প সময়ের মধ্যে ফের সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা সাধারণত ঘটে না। যদি তার পরেও পরীক্ষার ফল পজ়িটিভ আসে, তা হলে কী পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তাঁর কথায়, ‘‘যদি পরীক্ষা পদ্ধতি ঠিক থাকে, তা হলে বুঝতে হবে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের একটি নতুন স্ট্রেন ছড়াচ্ছে। সে ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে গবেষণার প্রয়োজন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও ঘটনার কথা জানা যায়নি।’’