মনোবিদের সঙ্গে ছিলেন অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত এবং মনোসমাজকর্মী পিয়া চক্রবর্তী। ছবি সৌজন্যঃ সনৎ সিংহ।
পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি মুহূর্তে বদলে দিতে পারে। এমন ঘটনা কমবেশি সকলের জীবনেই ঘটে। সেই ঘটনার রেশ ছড়িয়ে-ছিঁটিয়ে থাকে জীবনের আনাচ-কানাচে। ঘটনার অভিঘাত কতটা তীব্র ভাবে আছড়ে পড়ছে জীবনে, তার উপর নির্ভর করে পরবর্তী যাপন। পরিস্থিতির অভিঘাতের তীব্রতায় কেউ লড়াই করার শক্তি হারিয়ে ফেলেন, আবার কেউ সেই যন্ত্রণাকে খড়কুটো করেই ভাসতে থাকেন জীবনস্রোতে। ঘটনা যেমন বদলে দেয় চারপাশের পরিবেশ, সম্পর্কের সমীকরণ। তেমনই বদল আনে জীবনেও। এই বদলে যাওয়া নিয়ে সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক ও ইউটিউবে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এই সপ্তাহের বিষয় ছিল ‘বদলে গেছি’। গত সপ্তাহেও জীবনের এই আকস্মিক বদল নিয়ে কথা বলেছিলেন মনোবিদ। এটি তার দ্বিতীয় পর্ব। এ সপ্তাহেও মনোবিদের সঙ্গে ছিলেন অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত এবং মনোসমাজকর্মী পিয়া চক্রবর্তী।
জীবন মানে যে শুধু প্রেম আর সম্পর্ক, তা তো নয়। কাজের মধ্যে দিয়েও নিজেদের খুঁজে পাওয়ার একটা অধ্যায় থাকে। বিবাহবিচ্ছেদ হোক কিংবা আরও বড় কোনও ঘটনা, এগুলিকে সব সময়ে নেতিবাচক হিসাবে না দেখে জীবনের উত্তরণের পথ হিসাবেও দেখা যেতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে জীবনের কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। তিনি আর্থিক ভাবে কতটা প্রতিষ্ঠিত, নিজের দায়িত্ব আদৌ নিতে পারছে কি না, সেগুলিও বিবেচ্য হয়। কিন্তু এই বিষয়গুলি দিয়ে কি সম্পর্কের সিদ্ধান্ত গড়ে উঠে পারে? প্রশ্ন রাখলেন মনোবিদ। দেবলীনা বলেন, ‘‘আমি আর্থিক ভাবে কতটা স্বাধীন, তা কিছু ক্ষেত্রে নির্ভর করে বৈকি। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোজগারের জন্য একটা চাপ দেওয়া হয় পুরুষদের। কিন্তু এটা আসলে ‘নারীবাদীর’ই বিপক্ষে যায়। সংসারের দায়িত্ব শুধু ছেলেদের কাঁধে থাকবে কেন? দু’জন মানুষ এক ছাদের নীচে থাকার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তখনই, যখন তাঁরা আর্থিক ভাবে স্বাধীন।’’ কিন্তু আর্থিক ভাবে স্বাধীন হয়েও এক জন নারী যখন বিবাহবিচ্ছিন্ন হন, তখনও কিন্তু পরিপার্শ্ব থেকে একটা হিল্লোল ওঠে এ বার তোর কী হবে? যেন বিবাহ মানেই নিরাপত্তা। বিয়ের বাইরে একটি মেয়ে এসে দাঁড়ানো মানেই তিনি যেন একটা সঙ্কটের মুখে এসে দাঁড়িয়েছেন। এটা আসলে কোন মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ?’’ দেবলীনার কথা শেষ করতেই পিয়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন অনুত্তমা। পিয়ার কথায়, ‘‘আসলে এর পিছনে কিছু আর্থসামাজিক কারণ রয়েছে। একা থাকার জন্য পুরোপুরি সব দিক থেকে এক জন নারী তৈরি না-ও থাকতে পারেন। মানে এক জন পুরুষের মতো নিজেকে হয়তো গুছিয়ে নিতে পারেন না। তাই বলে তাঁকে আলাদা চোখে না দেখে যদি তাঁর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া যায়, তা হলেও খানিকটা উপকার হয়।’’