Prosthetic

Prosthetics: প্রস্থেসিসের জোরেই ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব

প্রস্থেসিসের ভাগ আরও বিশদে বুঝিয়ে দিলেন ফিজ়িক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশনের চিকিৎসক শঙ্করপ্রসাদ সিংহ।

Advertisement

নবনীতা দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২২ ০৭:১৪
Share:

দুর্ঘটনা ছাড়াও বিভিন্ন অসুখে পা বা হাত বা শরীরের কোনও অংশ এমন ভাবে জখম হয় যে, তা অস্ত্রোপচারে বাদ দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকে না। কিছু ক্ষেত্রে হাঁটু থেকে বা পুরো পা, কখনও কবজি বা কনুই থেকে হাত বাদ দিতে হয়। কিন্তু প্রস্থেসিসের সাহায্যে তাঁর জীবনযাপন অনেকটাই সহজ করা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, মাত্র এগারো মাস বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকান অ্যাথলিট অস্কার পিস্টোরিয়াসের হাঁটুর নীচ থেকে দু’টি পা-ই বাদ যায়। প্রস্থেটিক ব্লেডস নিয়ে প্যারালিম্পিক গেমসে একাধিক স্বর্ণপদক জয় করেছেন তিনি। তাই মনোবল ভাঙা চলবে না, এটা প্রাথমিক শর্ত। বাকিটা নির্ভর করবে চিকিৎসায়।

Advertisement

অ্যাম্পুটেশন কখন করা হয়?

অর্থোপেডিক সার্জন ডা. রঞ্জন কামিল্যা বললেন, “বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার কারণে অ্যাম্পুটেশন করা হয়। হয়তো এমন ইনজুরি হল যে, রোগীর হাত বা পায়ের কোনও অংশ কেটে প্রায় বাদ চলে গেল। আবার কিছু ক্ষেত্রে এমন ভাবে ইনজুরি হয় যে, হাত বা পায়ের নীচের অংশে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বা ইনফেকশন হয়ে যায়। ফলে সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। তখন রোগীকে বাঁচাতে অস্ত্রোপচার করে সেই অংশ বাদ দিতে হয়।”

Advertisement

এ ছাড়া আরও কিছু কারণ উল্লেখ করলেন ডা. কামিল্যা। যেমন, পেরিফেরাল ভ্যাসকুলার ডিজ়িজ়ে হাত ও পায়ের ধমনীতে রক্ত চলাচল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ ধরনের রোগ খুব সচরাচর না হলেও দেখা যায়। নিয়মিত ধূমপায়ীদের যেমন করোনারি হার্ট ডিজ়িজ়ের ভয় থাকে, তেমনই পেরিফেরাল ভ্যাসকুলার ডিজ়িজ়ের আশঙ্কাও থাকে। সে ক্ষেত্রে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে সেই হাত বা পায়ে গ্যাংগ্রিন হয়ে যেতে পারে। তখন অ্যাম্পুটেশন করা হয়। ক্রনিক ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রেও পেরিফেরাল ভ্যাসকুলার ডিজ়িজ়ের আশঙ্কা থাকে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবিটিসের ফলে ইনফেকশনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তখন আর্ম বা লেগ অ্যাম্পুট করা হয়।

অর্থোপেডিক সার্জন ডা. সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় আরও কিছু কারণ বললেন, “বড় টিউমর দেখা দিলে, সেটা রেখে দিলে হয়তো রোগীকে বাঁচানো যাবে না। তখন সেই অংশটা কেটে বাদ দেওয়া হয়। বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও টিউমর থাকলে সেই অংশ কেটে বাদ দেওয়া হয়। আর্টেরিয়াল ইনজুরি বা নার্ভ ইনজুরির জন্যও অ্যাম্পুটেশন করা হয়।”

প্রস্থেসিস কত ধরনের?

ডা. সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় বললেন, “মূলত দু’ধরনের, ফাংশনাল ও নন-ফাংশনাল। হাতের একটা আঙুল বাদ গেলে বা টো বাদ গেলে সেখানে কসমেটিক প্রস্থেটিক লাগানো যেতে পারে। এর অবশ্য ব্যবহারযোগ্যতা থাকে না, ওই জায়গাটা ঠিক দেখানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। এ বার কারও হাঁটুর নীচের অংশ বাদ চলে গিয়েছে, সেখানে ফাংশনাল প্রস্থেটিক লাগানো যেতে পারে। কারণ পায়ের কাজ করার জন্য সেটা দরকার।”

প্রস্থেসিসের ভাগ আরও বিশদে বুঝিয়ে দিলেন ফিজ়িক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশনের চিকিৎসক শঙ্করপ্রসাদ সিংহ। প্রস্থেসিসের গঠন দু’রকমের হয়, এক্সোস্কেলিটাল ও এন্ডোস্কেলিটাল। এক্সোস্কেলিটালের ক্ষেত্রে বাইরের কাঠামো নির্মাণ হয় পোক্ত ভাবে, যাতে তা হাত বা পায়ের অনুরূপ দেখতে হয়। অন্য দিকে এন্ডোস্কেলিটালে বাইরের কাঠামো যেমন তৈরি হয়, তেমনই ভিতরে হাড়ের মতো পাইপ বসানো থাকে। প্রস্থেসিসের গঠনে কিছু উপাদানও লাগে, যেমন সকেট, বডি, কন্ট্রোল সিস্টেম, জয়েন্ট ও টার্মিনাল ডিভাইস।প্রস্থেসিসের ব্যবহারপ্রস্থেসিস ব্যবহার প্রসঙ্গে ডা. শঙ্করপ্রসাদ সিংহ বললেন, “প্রস্থেসিস হল নকল অঙ্গ। আর সেটা তৈরি করার পিছনে যে বিজ্ঞান, সেই বিষয়টাকে বলে প্রস্থেটিক। আবার যখন নকল হাত বা পা অর্থে বলছি, তখন তার ব্যবহার অ্যাডজেক্টিভের মতো অর্থাৎ প্রস্থেটিক লেগ ইত্যাদি। হাত বা পায়ের কোনও অংশ বাদ গেলে প্রস্থেসিসের মাধ্যমে সেই শূন্যস্থান পূরণ করা সম্ভব। তবে স্টাম্পের (অ্যাম্পুটেশনের পরে রেসিডুয়াল নি বা লিম্ব অর্থাৎ যে অংশটা রয়ে গেল) অংশ যতটা পাওয়া যাবে, প্রস্থেসিস ব্যবহারের সুবিধে তত বাড়বে।” ভাগে ভাগে তা বুঝিয়ে দিলেন ডা. সিংহ।nপায়ের ক্ষেত্রে: হাঁটুর নীচে অ্যাম্পুটেশন হলে, সে হাঁটু ভাঁজ করতে পারবে। ফলে তাঁর পা সঞ্চালন সহজতর হবে আপার নি অ্যাম্পুটির তুলনায়। হাতের তুলনায় পায়ের প্রস্থেসিস ব্যবহারও সহজ। কারণ পায়ের ক্ষেত্রে মূলত ওজন ধরে রাখা, ব্যালান্সিং ও হাঁটাচলার কাজে ব্যবহার হয়। অ্যাঙ্কল ডিজ়ার্টিকুলেশনের ক্ষেত্রে শু ফিলার বা জুতোর মধ্যে নরম ফোম ব্যবহার করা যায়।nহাতের ক্ষেত্রে: “হাতের কাজ অনেক সূক্ষ্ম। তাই বিলো এলবো স্টাম্প (কনুইয়ের নীচে অবধি) থাকলে রিস্ট ইউনিটের মাধ্যমে হাত সঞ্চালন করা সুবিধে। কিন্তু কনুইয়ের উপরে অ্যাম্পুটেশন হলে, কনুইয়ের সন্ধির কার্যক্ষমতা বাড়াতে অতিরিক্ত কেবল লাগে। আপার আর্মের থেকে এবং স্ক্যাপুলার পেশিগুলোর সঙ্গে সেই কেবলগুলোর সংযোগ থাকবে। এতে সেই পেশি নাড়ালে কেবলগুলো সামনে-পিছনে করবে। তখন হাতের কাজটা করা যাবে,’’ বললেন ডা. সিংহ। এগুলোকে ফাংশনাল প্রস্থেসিস বলে। আবার অনেক ক্ষেত্রে শুধু হাতের গড়ন যাতে বোঝা যায়, তেমন কসমেটিক প্রস্থেসিসও ব্যবহার করা হয়। তবে তার কার্যক্ষমতা থাকে না।nমায়ো-ইলেকট্রিক প্রস্থেসিস: এ ক্ষেত্রে মায়ো-ইলেকট্রিক সিগন্যাল ব্যবহার করে এই প্রস্থেসিস ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের প্রস্থেটিক-হাত দিয়ে সব ক্ষেত্রে কিন্তু কাজ একরকম হয় না। তার মধ্যে পার্থক্য থাকে। দরকার মতো অ্যাম্পুটির কার্যক্ষমতা বাড়াতে মায়ো-ইলেকট্রিক প্রস্থেসিসের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা হয়।ট্রেনিং দরকারপ্রস্থেসিসের ট্রেনিংও দেওয়া হয় নির্দিষ্ট জায়গা থেকে। “একজন মানুষ চব্বিশঘণ্টা কৃত্রিম পা বা হাত লাগিয়ে রাখেন না। কারণ প্রস্থেসিস ব্যবহার করতে অনেক শক্তি ক্ষয় হয়। তাই যখন তিনি হাঁটবেন বা হাত দিয়ে কিছু করবেন, তখন তিনি প্রস্থেসিস ব্যবহার করবেন। সেটা ট্রেনিংয়েই শিখিয়ে দেওয়া হয়। আবার হাতের সূক্ষ্ম কাজের জন্য রিস্ট ইউনিটে হুক, ছুরি বিভিন্ন রকমের টার্মিনাল ডিভাইস বসানো যায়। তার ব্যবহারও দেখিয়ে দেওয়া হয়। এর পরে থাকে স্টাম্প হাইজিন। অঙ্গ বাদ যাওয়ার পরে যে অংশটা পড়ে রইল, সেই জায়গায় সেলাই থাকে। তা শুকিয়ে যাওয়া অবধি হাইজিন বজায় রাখা দরকার। পরে স্টাম্পের জায়গাটা শুকিয়ে গেলেও প্রস্থেসিস ব্যবহারের সময়ে সেই অংশের যত্ন নিতে হবে,” বললেন ডা. শঙ্করপ্রসাদ সিংহ।

খরচ কেমন?

বিশেষজ্ঞদের মতে, তা নির্ভর করে প্রস্থেসিসের উপরে। যেমন পায়ের প্রস্থেসিসের চেয়ে হাতের প্রস্থেসিস বেশি ব্যয়সাপেক্ষ হয়। “তবে অ্যাম্পুটেশন করার সঙ্গে-সঙ্গেই কিন্তু প্রস্থেটিক লিম্বস লাগানো যায় না। কারণ শরীরের যে অংশে অস্ত্রোপচার হয়েছে, সেই অংশটা ফুলে থাকে। ফলে প্রস্থেসিস ঠিকমতো বসানো যায় না। তাই প্রথমে তা শোকাতে দিতে হবে। ভাল করে জায়গাটা শুকিয়ে গেলে কী ধরনের প্রস্থেসিস লাগাবেন সেই সিদ্ধান্ত মতো এগোতে হবে,” বলে জানালেন ডা. কামিল্যা।

আর মনে রাখতে হবে, মানসিক দিকও অবহেলার নয়। হাত বা পায়ের অংশ বাদ চলে যাওয়ার মতো বিষয় মেনে নিতে সময় দিতে হবে রোগীকে। তবে প্রস্থেসিসের ব্যবহার নতুন নয়। বহুদিন ধরেই চলে আসছে। এখন অনেক উন্নতমানের প্রস্থেসিস এ দেশে পাওয়া যায়। সে সব দৃষ্টান্ত দেখিয়ে রোগীকে মনোবল জোগাতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement