পঞ্চাশের কাছাকাছি পৌঁছে চেহারা ক্রমশ ভারী হওয়ার নজির আমাদের আশপাশে প্রচুর। আমরা মুখে বলি, বয়সজনিত কারণে ওজন বাড়ছে। কিন্তু নির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে ধন্দে থাকি। সুষম খাবার এবং শারীরচর্চা সব বয়সেই জরুরি। প্রশ্ন হল, ডায়েট এবং এক্সারসাইজ়ে কোনও ফাঁকি থেকে যাচ্ছে না তো? এই দু’টি জিনিস ঠিক থাকার পরেও যদি ওজন বাড়ে, তা হলে বুঝতে হবে অন্য কোনও অসুস্থতা রয়েছে।
কী কী কারণে ওজন বাড়ে
চিকিৎসকদের মতে, থাইরয়েডের কারণে ওজন বাড়তে পারে। মহিলাদের মেনোপজ় হলে শরীরে হরমোনের বড় ধরনের বদল আসে, তাতেও ওজন বাড়ে। এ ছাড়া এই বয়সে জয়েন্ট পেন, অস্টিয়োপোরোসিস, আর্থ্রাইটিসের মতো অসুখগুলো বাসা বাঁধে। ফলে কর্মক্ষমতা কমতে থাকে। এতে ওজন বাড়ে এবং হাড় সংক্রান্ত রোগগুলো শরীরে আরও জাঁকিয়ে বসে। ‘‘থাইরয়েড বা হরমোনাল সমস্যা ছাড়া ইমমোবিলিটি হল ওবেসিটির অন্যতম কারণ। ব্যথার কারণে রোগী অনেক কাজ আগের মতো করতে পারেন না, এ দিকে ওজন চড়চড় করে বাড়ছে,’’ বললেন জেনারেল ফিজ়িশিয়ান ডা. সুবীর মণ্ডল।
তিনি জানালেন, ওজন বাড়ে মেটাবলিক ডিজ়িজ়ের কারণেও, যার মধ্যে সুগার, ব্লাড প্রেশার, থাইরয়েড সব সমস্যাই চলে আসে। এই অসুখগুলি নিয়ন্ত্রণে না রাখলে ওজন বাড়বে। যাঁদের ওবেসিটির সমস্যা এবং সুগারও রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা সাধারণত ইনসুলিন এড়িয়ে যান। অনেকের ইনসুলিনে ওজন বাড়ে, এটা তাঁর মেটাবলিক সমস্যার ফল। ডা. মণ্ডল আরও একটি কারণ বললেন, ‘‘বয়স হয়ে গেলে অনেক মহিলা মাছ, মাংস খেতে চান না। ফলে প্রোটিন প্রায় বন্ধ হয়ে যায় আর কার্বোহাইড্রেট বেড়ে যায়। এটিও ওবেসিটির একটা কারণ। আর একটা বয়সের পরে সুগার নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে।’’
কী কী এক্সারসাইজ় করবেন
জয়েন্ট পেন, আর্থ্রাইটিসের মতো অসুখ থাকলে পায়ে ব্যথা স্বাভাবিক। কিন্তু ওজন বৃদ্ধির কারণেও ব্যথা হতে পারে। কারণ অতিরিক্ত ভার বইতে অক্ষম আপনার পা। হাড় সংক্রান্ত সমস্যা না থাকলে, জোরে হাঁটা, জগিং কাজে দেবে। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ওয়াল পুশ আপ, স্কোয়াট, লাঞ্জেস এইগুলো করতে পারেন। এমন অনেক ব্যক্তি আছেন অসুস্থতার কারণে সব ধরনের শারীরচর্চা যাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাঁদের জন্য কয়েকটি এক্সারসাইজ়ের পরামর্শ দিলেন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ সৌমেন দাস। তাঁর কথায়, ‘‘হাড়ের সমস্যা আছে, ডায়াবেটিক, ডায়ালিসিস করাচ্ছেন এমন রোগীও আমাদের ক্লায়েন্ট। এঁদের প্রত্যেকের জন্য আলাদা ভাবে ওয়র্কআউট নির্দিষ্ট করে দিতে হয়। বয়স হলে শরীর ভারী হয়ে যায়। তখন স্ট্রেংদেনিং, টোনিং জরুরি। ২৫ মিনিটের এক্সারসাইজ়ও এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট।’’
• চেয়ার জগিংয়ে হাঁটু ব্যথা করবে না। পা মাটি স্পর্শ করবে এমন চেয়ারে পিঠ সোজা রেখে বসুন। হাত দুটোকে সামনের দিকে ঘুষি পাকিয়ে ছুড়তে থাকুন। এতে শরীরের উপরের অংশের সঞ্চালন হবে। ৫০ বার করে ৩-৪ সেট করে দেখবেন ঘাম দিচ্ছে। দিনে বার কয়েক এটা করলে ভাল।
• হাঁটার সময়ে যে ভাবে স্টেপ ফেলেন, সেটাই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে হাঁটু না ভেঙে করুন। প্রথমে মিনিট পাঁচেক করুন। সপ্তাহখানেক বাদে সময় বাড়ান।
• সোজা হয়ে চেয়ারে বসে একটা পা সামনের দিকে তুলে দিন, মাটির সমান্তরালে। এ বার ফিঙ্গারটিপগুলো নিজের দিকে করুন। এতে হাঁটু স্টিফ হয়ে যাচ্ছে মনে হবে। এই অবস্থায় ধরে রেখে ১৬ গুনতে থাকুন, প্রতি পায়ে দশ বার করে। দিনে যতবার পারবেন এটি করুন। এতে পায়ের পেশি টোনড হবে, শক্তি বাড়বে।
• দেওয়ালে পিঠ রেখে নিজেকে একেবারে সেঁটে দিন। এ বার দেওয়াল ঘেঁষে হাত উপরে তুলে লক করে নিন। পায়ের আঙুলের উপরে ভর করে শরীরটা উপরের দিকে স্ট্রেচ করুন, পেট টেনে রাখবেন। এ ভাবে ১৬ পর্যন্ত গুনতে থাকুন। ১০-১২ বার করুন। গোটা শরীরের টোনিং হবে। এটি চেয়ারে বসেও করা যায়।
সমস্যা কিছুটা মানসিকও
মেনোপজ়ের সময়ে হরমোনাল চেঞ্জের কারণে মুড সুইং হয় মহিলাদের। ওজন বৃদ্ধি মন খারাপ করে দেয়। তখন নিজেকে বোঝাতে হবে, শরীরের জন্য সুষম ডায়েট এবং এক্সারসাইজ় কতটা জরুরি। অনেকে চার দিন ডায়েট চার্ট অনুযায়ী চলেন তো বাকি তিন দিন নয়। শারীরচর্চার ক্ষেত্রেও তাই। তাই আলসেমি দূরে সরিয়ে নিজের যত্ন নিন। খেয়াল রাখুন, শরীর সঞ্চালন বন্ধ করে দিলে ওজন আর রোগ দুই বাড়বে।