প্রতীকী ছবি।
শীত বিদায় নিয়েছে বেশ কিছু দিন। বসন্তের আমেজ এ বার সে ভাবে অনুভব করা যাচ্ছে না। ফ্যান চালাতে হচ্ছে বেশ জোরে। শীতপোশাকের ব্যবহার বহু দিন আগেই শেষ। সময়ের আগেই শীত চলে যাওয়ায় বেশ কিছু শীতের জিনিস এখনও আলমারিতে তোলা হয়নি। দীর্ঘ সময়ের জন্য এ সব পোশাক তুলে রাখার আগে জেনে নেওয়া জরুরি জরুরি কিছু বিষয়, যাতে আগামি শীতে ফের ঝকঝকে অবস্থায় ফিরে পাওয়া যায় তাকে।
উল বা পশমের সোয়েটার, চাদর-স্টোলের যত্ন
কিছু শীতবস্ত্র ঘরেই ধোয়া যায়। কাচার জন্য বিশেষ লিকুইড ডিটারজেন্ট বাজারে পাওয়া যায়। গরম জল নয়, ঠান্ডা জলে তা মিশিয়ে ধুয়ে ফেলুন। উল রঙিন হলে, ধোয়ার সময়ে জলে অল্প ভিনিগার আর সাদা হলে লেবুর রস দিতে হবে। কোথাও দাগ লাগলে সেই অংশটুকু ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। তবে উলের পোশাক অজান্তে ঘাম বা খাবারের তেল-মশলা লেগে থাকা অবস্থায় আলমারিতে রাখা হলে, তা পোকায় কাটতে পারে। সেই অংশটুকু বাড়তি যত্ন নিয়ে পরিষ্কার করুন। ঘণ্টাখানেকের বেশি ভেজানোরও দরকার নেই। এ জাতীয় পোশাক ধোয়ার সময়ে ব্রাশ ব্যবহার করবেন না, তাতে নষ্ট হতে পারে। অল্প ঘষে নিয়ে, অন্তত তিনবার জল বদলে ধুয়ে নিন। বেশি নিংড়ানোর দরকার নেই।
শীতপোশাক সাধারণত ভারী হওয়ার কারণে শুকোতে বেশি সময় লাগে। তবে তা কড়া রোদে শুকোবেন না। রোদ কম লাগে, এমন জায়গাতেই তা শুকোতে দিন। এতে রং নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে না। কখনওই ঝুলিয়ে শুকনো করবেন না। পোশাকের শেপ নষ্ট হয়ে যায়। পরিষ্কার জায়গায় মাদুরের উপরে বিছিয়ে রেখে শুকোবেন।
উলের চাদর-সোয়েটার ওয়াশিং মেশিনে না ধোয়াই ভাল। তবে ধুতে চাইলে, ওয়াশিং মেশিনের সেই অপশনে গিয়ে ধুতে হবে।
পোশাক কেচে শুকিয়ে নেওয়ার পর বাইরে ফেলে রাখবেন না। দামি শীতপোশাক সুতির কাপড় দিয়ে মুড়ে রাখবেন, যাতে তাতে ধুলোবালি না জমে। আলমারিতে তুলে রাখলে, কখনওই তা হ্যাঙ্গারে ঝোলাবেন না। পোশাকের আকৃতি নষ্ট হয়ে যাবে। সব সময়ে ভাঁজ করে রাখলে ভাল। আলমারিতে পোশাক রাখার পরে অবশ্যই ন্যাফথলিন দিয়ে রাখবেন। তবে তা কাপড়ের ভিতরে বা উপরে সরাসরি দেবেন না। সুতির কাপড়ে কয়েকটি ন্যাফথলিন মুড়ে, আলমারির তাকের এক কোণে
রেখে দিন।
পশমিনা শালের সতর্কতা
পশমিনা বা উলের শাল সব সময়ে ড্রাই-ক্লিন করা উচিত। আলমারি বা অন্য কোথাও শাল রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই মসলিন কাপড়ে জড়িয়ে বা কোনও বাক্সে সংরক্ষণ করতে হবে। তবে প্লাস্টিকের কভার ব্যবহার করা যাবে না। ন্যাফথলিনের ব্যবহারও চলবে না। আর্দ্রতায় পশমিনা নষ্ট হয়। ব??? ????? ?????? ???? ??? ???? ??????
ছরে অন্তত দু’বার ভাঁজ বদল করার দরকার।
লেদার জ্যাকেটের যত্নআত্তি
লেদারের কাপড় বাড়িতে পরিষ্কার না করে লন্ড্রিতে দিন। এগুলো কখনওই রোদে দেওয়া উচিত নয়। ব্যাগে ভরে ঝুলিয়ে রাখুন, ভাঁজ করবেন না।
তবে ফোমের জ্যাকেট ডিটারজেন্ট দিয়ে একই উপায়ে ধুয়ে নিতে পারেন। শুকোনোর জন্য পুরনো তোয়ালেতে মুড়ে শুষে নিন বাড়তি জল। উলের পোশাক ড্রাই ক্লিন করলে বাড়িতে এনে, অবশ্যই একবার রোদে দেওয়ার পর আলমারিতে তুলুন।
ফ্লানেলের যত্ন
ফ্লানেল কাপড় শ্যাম্পু দিয়ে ধুতে হবে। জলে ভেজানোর এক ঘণ্টার মধ্যেই ধুয়ে ফেলুন। কয়েক বার ভাল জলে ধুয়ে নিন। তার পর ছায়ায় রেখে শুকিয়ে নিন।
মোজা-মাফলার-টুপির খেয়াল
শীতে যে সব জিনিস বেশি ময়লা হয় সেগুলো হল মাফলার, টুপি ও মোজা। এত দিন এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতেই হয়েছে। এ বার তুলে রাখার আগে ভাল করে ঠান্ডা জলে মাইল্ড শ্যাম্পু মিশিয়ে চুবিয়ে রাখুন আধঘণ্টা। সঙ্গে অল্প লেবুর রস মেশান। যেখানে ময়লা বেশি জমে, হাত দিয়ে কচলে ধুয়ে নিন। শুকিয়ে নিন হালকা রোদে।
লেপের যত্ন
লেপ যদি শিমুল তুলোর হয়, তা হলে ধোয়া তো দূরের কথা, ড্রাই ওয়াশও করা যাবে না। তুলে রাখার আগে ভাল ভাবে উল্টেপাল্টে রোদ খাইয়ে রাখুন। এতে অনেক বছর পর্যন্ত লেপ ভাল থাকবে। পাতলা কাপড়ে মুড়ে ভাঁজ করে তুলে রাখুন।
কম্বলের যত্ন
লেপের মতোই কম্বলও রোদে দিয়ে তুলে রাখতে হয়। তবে কম্বল জল দিয়ে ধোয়া যায়, ড্রাই ওয়াশও করা যায়। জলের সঙ্গে প্রয়োজন মতো মাইল্ড শ্যাম্পু মিশিয়ে অল্প কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন। এর পর রোদে শুকিয়ে নিন। তবে কম্বলের ওজন বেশি হলে, জলে ভেজালে তা আরও ভারী হয়ে যায়। তাই লন্ড্রিতে দেওয়া সুবিধেজনক।
ভাল থাকুক কাঁথা
শীতে কাঁথা বা রজ়াইয়ের ওয়াড় খুলে নিন। তাকে আলাদা করে কাচুন সাধারণ ডিটারজেন্টে। রোদে শুকিয়ে পুনরায় ব্যবহার করুন।
তবে বছরশেষে ফের শীতের আমেজ পড়লে আলমারি থেকে বার করে শীতের পোশাক বা কম্বল সরাসরি গায়ে দেবেন না। তাদের যতই যত্নে রাখুন, অনেক দিন ব্যবহার না করার কারণে এক ধরনের ভ্যাপসা গন্ধ আসেই। তাই পুনরায় ব্যবহার করার আগে অবশ্যই রোদ লাগিয়ে নেবেন।