Contact Lens

কনট্যাক্ট লেন্সের সাবধানতা

কনট্যাক্ট লেন্স থেকে ক্ষতি হতে পারে চোখের। সাবধানে ব্যবহার করুন তা।

Advertisement

কোয়েনা দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২৪ ০৯:৩৫
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

দিনকয়েক আগে কনট্যাক্ট লেন্স থেকে চোখের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছিলেন হিন্দি টেলিভিশন অভিনেত্রী জ্যাসমিন ভাসিন। জানা গিয়েছিল, এক অনুষ্ঠানের আগে লেন্স পরতে গিয়ে চোখে ব্যথা হয় তাঁর। তড়িঘড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নিলেও সাময়িক ভাবে আংশিক দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন তিনি। তবে এ ঘটনা কিন্তু বিচ্ছিন্ন কোনও সমস্যা নয়। কনট্যাক্ট লেন্স থেকে চোখের নানা সমস্যায় ভোগেন অনেকেই।

Advertisement

কারণ এবং উপসর্গ

চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মৃণ্ময় দাস বলছেন, “অধিকাংশ মানুষ যে কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন, তা হল সফট কনট্যাক্ট লেন্স। যাঁদের চোখে কোনও সমস্যা নেই, শুধুই পাওয়ার রয়েছে, তাঁরা চশমার বদলে এই লেন্স ব্যবহার করেন। একটা লেন্স ব্যবহারের নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। কোনও লেন্স এক মাসের জন্য হয়, কোনওটা আবার তিন মাস, ছয় মাস, কোনওটা এক বছরের জন্য হয়। রোজের ব্যবহারের জন্যও লেন্স পাওয়া যায়। কেনার সময়েই রোগীকে তার সময়সীমা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও সেই একই লেন্স ব্যবহার করা চোখের পক্ষে ক্ষতিকর। পাশাপাশি লেন্স পরতে হয় কর্নিয়ার উপরে। অথচ কর্নিয়া অক্সিজেন পায় বাতাস থেকে। চশমা ব্যবহারে বাতাস থেকে স্বাভাবিক অক্সিজেন কর্নিয়া গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু লেন্সের মধ্য দিয়ে অক্সিজেন ঢুকতে পারলেও, স্বাভাবিকের তুলনায় চোখে অনেকটাই অক্সিজেনের ঘাটতি হয়। তা ছাড়া, কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহারের কিছু নির্দিষ্ট নিয়মও রয়েছে। তা মেনে না চললে অনেক সময়েই ব্যাক্টিরিয়াল ইনফেকশন, ড্রাই আইজ় ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে অধিকাংশ ক্ষেত্রে লেন্স পরার সময়ে বা পরা অবস্থায় চোখে ব্যথা, চুলকানি, লাল ভাব দেখা দেয়। অনেক সময়েই রোগী চোখ টানা খুলে রাখতে পারেন না। সঙ্গে ঝাপসা দেখা বা একেবারেই দেখতে পাচ্ছেন না, এমনটাও হতে পারে।

Advertisement
  • কনট্যাক্ট লেন্সের কারণে সাধারণত সিউডোমনাস নামক এক ধরনের ব্যাক্টিরিয়ায় চোখ আক্রান্ত হয়। ডা. মৃণ্ময় বলছেন, এই ব্যাক্টিরিয়াল সংক্রমণ কিন্তু গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে।
  • দীর্ঘ সময় কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহারে চোখ শুকিয়ে গিয়ে ড্রাই আইজ়ের সমস্যা হতে পারে।
  • তা ছাড়া, কর্নিয়ার আলসারও সাধারণ ঘটনা, যাকে কেরাটাইটিস বলা হয়।

কেরাটোকোনাসের মতো কিছু জটিল রোগের ক্ষেত্রে অবশ্য অনেক সময়ে চিকিৎসকেরা নিজেরাই কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহারের পরামর্শ দেন। ডা. দাস বলছেন, “অনেক বাচ্চারই জন্মের সময় চোখে ছানি থাকে। এক-দেড় মাস বয়সে তাঁদের ছানি অপারেশন করা হয়। সে সময়ে কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চলা জরুরি।”

লেন্স ব্যবহারের নিয়মাবলি

  • লেন্স খোলা-পরা করার আগে অ্যান্টিব্যাক্টিরিয়াল সাবান দিয়ে ভাল করে হাত ধুয়ে শুকিয়ে নিন।
  • লেন্স ব্যবহারের পরে তা খুলে সলিউশনে পরিষ্কার করে নিয়ে নির্দিষ্ট বাক্সে সলিউশনে ডুবিয়ে রাখা জরুরি।
  • সময়সীমা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই লেন্স বদলাতে হবে।
  • এক সলিউশন এক মাসের বেশি ব্যবহার করবেন না।
  • নিয়মিত কনট্যাক্ট লেন্স পরার অভ্যেস থাকলে মাঝেমধ্যেই লুব্রিকেটিং আই ড্রপ নিন।
  • দিনে সাত থেকে আট ঘণ্টার বেশি কনট্যাক্ট লেন্স পরা ঠিক না। একান্তই এর চেয়ে বেশি সময় কখনও লেন্স ব্যবহার করতে হলে আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা অন্তত চোখকে বিশ্রাম দিয়ে তার পর পরুন। মাঝে চোখে ড্রপ দিন।

চিকিৎসা

লেন্স থেকে ব্যাক্টিরিয়াল ইনফেকশন হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা হলেও, অধিকাংশ সময়েই তা গুরুতর আকার ধারণ করে। এমনকি স্থায়ী সমস্যাও হতে পারে। পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তিও হারাতে পারেন রোগী। সে কারণেই সফট কনট্যাক্ট লেন্সের ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা নিজে থেকে রোগীকে কখনও তা ব্যবহারের পরামর্শ দেন না। ডা. মৃণ্ময় বলছেন, লেন্স ব্যবহার যাঁরা করেন, চোখে তাঁদের সামান্য সমস্যা হলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সঙ্গে নিয়ে আসুন ব্যবহার করা লেন্স ও সলিউশনও। চিকিৎসকেরা রোগীর চক্ষু পরীক্ষার পাশাপাশি সেগুলোও পরীক্ষা করে দেখেন। এতে ঠিক কোন ধরনের ব্যাক্টিরিয়া থেকে চোখে সংক্রমণ হয়েছে, তা নির্ধারণ করা সহজ হয়। কোন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধে কাজ দেবে, তা-ও বোঝা যায়।

সতর্ক থাকুন

  • একের লেন্স অন্য জন ব্যবহার করবেন না। তাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ভয় থাকে।
  • কনট্যাক্ট লেন্স পরে কখনওই ঘুমিয়ে পড়বেন না বা চোখ রগড়াবেন না।
  • স্নান কিংবা জলের ঝাপটায় চোখ-মুখ ধোয়ার আগে অবশ্যই লেন্স খুলে নেবেন।
  • লেন্স খুলতে-পরতে গিয়ে বা লেন্স পরা অবস্থায় চোখে কখনও ব্যথা, সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে খুলে ফেলুন। অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • চোখে সমস্যা হলে তা সেরে না যাওয়া পর্যন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে ফের লেন্স পরা চলবে না।

খেয়াল রাখুন

  • কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহারের অর্থ কিন্তু চশমা না থাকা নয়। দিনে যতটা সম্ভব বেশি সময় চশমা ব্যবহার করুন।
  • রঙিন লেন্সের বদলে সাধারণ লেন্স বেছে নিতে পারেন।

তবে ডা. মৃণ্ময় আশ্বস্ত করছেন, নিয়ম মেনে ব্যবহার করলে লেন্স থেকে কোনও সমস্যা হয় না। টানা ৩০-৪০ বছরও অনেকে লেন্স ব্যবহার করে থাকেন। হাইজিন ও নিয়ম মেনে চলতে পারলে বাচ্চারাও লেন্স ব্যবহার করতে পারে। সে ক্ষেত্রে অভিভাবকদেরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

মডেল: সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়; ছবি:অমিত দাস

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement