মেদের কারণে চাপ পড়ছে হৃদযন্ত্রেও।
ভারতীয়দের মধ্যে মেটাবলিক সিনড্রোমের ঝুঁকি বেশি। আর এর হাত ধরে আসে আচমকা হৃদরোগের আশঙ্কা। মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায় জানালেন, একাধিক শারীরিক সমস্যাকে একসঙ্গে মেটাবলিক সিনড্রোম বলে।
মেটাবলিক সিনড্রোম বা সিনড্রোম এক্সের কারণ
• স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি ওজন।
• উদ্বেগ এবং উচ্চ রক্তচাপ।
• রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড বেড়ে যাওয়া।
• রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি কিন্তু ডায়াবিটিস নয়।
• রক্তে ইউরিক অ্যাসিড বেশি।
এ ছাড়া আরও কিছু কারণে মেটাবলিক সিনড্রোম হতে পারে বলে জানালেন ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট প্রকাশচন্দ্র মণ্ডল। নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার, নাক ডাকার অসুখ স্লিপ অ্যাপনিয়া এবং পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজ বা পিসিওডির সঙ্গে ওবেসিটির সরাসরি সম্পর্ক আছে। এই তিনটি সমস্যা থাকলে সিনড্রোম এক্সের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
কী করে বুঝবেন
বোঝার উপায় নিয়মিত পরীক্ষা। রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড, গ্লুকোজ, ইউরিক অ্যাসিড, কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়লে, রক্তচাপ স্বাভাবিকের থেকে বেশি হলে এবং কোমর চওড়া হয়ে ভুঁড়ি বাড়লেই মেটাবলিক সিনড্রোমের ব্যাপারে সতর্ক হতে পরামর্শ দিলেন সুকুমার মুখোপাধ্যায়। ভুঁড়ি বাড়লেই সতর্ক হওয়া উচিত বলে মনে করেন প্রকাশ মণ্ডল।
পেটের বাড়তি মেদ শুধু যে বাইরের দিকেই জমে, তা নয়। ভিতরেও চর্বি জমে আভ্যন্তরীণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গে চাপ দেয়। অগ্ন্যাশয় ঠিক করে কাজ করতে পারে না। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে থাকে। ডায়াবিটিসের আশঙ্কা বাড়ে।
ছোটবেলাতেই সূত্রপাত
বদলে যাওয়া লাইফস্টাইলে ছোটবেলার খেলাধুলো কমে গিয়েছে। এখন লকডাউনে বাড়িতে আটকে থেকে বেশিরভাগ মানুষের ওজন ও ভুঁড়ি দুইই বেড়েছে। প্রকাশচন্দ্র মণ্ডল জানালেন, মাঝ বয়সী মানুষদের মেটাবোলিক সিনড্রোমের প্রবণতা বেশি। কিন্তু ইদানীং অল্পবয়সীদের মধ্যে এর প্রবণতা বাড়ছে। হৃদরোগের আশঙ্কাও বাড়ছে। সুকুমার মুখোপাধ্যায় জানালেন, মেয়েদের মধ্যে মেটাবলিক সিনড্রোমের ঝুঁকি তুলনায় বেশি। পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম থাকলে মেদ বেড়ে যায়। সঠিক ডায়েট ও জীবনধারায় বদল না করায় সিনড্রোম এক্সের আশঙ্কা বাড়তে থাকে।
চিকিৎসকদের মত, ছোট থেকেই খেলাধুলোর ওপর জোর দিতে হবে। বাবা-মায়েদের এ ব্যাপারে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি স্কুলগুলোরও সচেতন হওয়া উচিত। মেটাবলিক সিনড্রোম প্রতিরোধে স্কুলে স্কুলে খেলার জায়গা রাকা জরুরি বলে মনে করচেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রতিরোধের উপায়
প্রতিরোধের উপায় আমাদের হাতের মধ্যে। প্রথম এবং প্রধান উপায় ভুঁড়ি কমান। প্রত্যেক দিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট পরিশ্রম করতে হবে, সপ্তাহে ১৫০ মিনিট গা ঘামিয়ে ব্যায়াম আবশ্যক। পর্যাপ্ত শাকসবজি, ফল খাওয়ার পাশাপাশি কার্বোহাইড্রেট ও চিনি খাওয়া কমান। রোজকার ডায়েটে থাকুক ডাল, মাছ, মুরগির মাংস আর সয়া প্রোটিন। ধূমপান একেবারেই নয়। এই নিয়ম মেনে চললে মেটাবলিক সিনড্রোমকে বুড়ো আঙুল দেখানো যাবে সহজেই।