নববর্ষ এলে বাঙালি মায়েরা সন্তানদের দুধে-ভাতে রাখতে চাইবেন সেটাই তো দস্তুর। কিন্তু বাঙালি কি আর শুধু দুধ-ভাত কিংবা মাছ-ভাতে বাঁধা পড়ে? অন্তত কলকাতায় বাড়তে থাকা থিম কাফে বা রেস্তরাঁর সংখ্যা কিন্তু বলছে বাঙালির জিভও এখন বৈচিত্র খুঁজছে প্রতিনিয়ত। আনন্দবাজার অনলাইন দিল তেমনই কিছু অভিনব রেস্তরাঁর সন্ধান।
কয়েদি কিচেন: দেশে আইন আছে, আইন না মানলে আছে জেলখানা। কিন্তু জেলখানায় বসে খাবার খেতে চাইলে কিন্তু আইন না ভাঙলেও চলবে। ক্যামাক স্ট্রিটেই রয়েছে কয়েদি কিচেন নামক এমন একটি রেস্তরাঁ, যা দেখতে অবিকল জেলখানার মতো। খাবার খেতে হবে প্রায় লকআপে বসে। রেস্তরাঁর কর্মীদের পরনেও থাকে জেলেরই পোশাক। সব মিলিয়ে বেশ নাটকীয় পরিবেশ।
পঞ্চমের আড্ডায়: গান শুনতে যাঁরা ভালবাসেন তাঁদের জন্য, ইতিমধ্যেই সঙ্গীত কেন্দ্রিক বেশ কয়েকটি কাফে খুলেছে কলকাতায়। তেমনই একটি কাফে পঞ্চমের আড্ডায়। সঙ্গীত পরিচালক রাহুল দেব বর্মনকে নিয়ে সাজানো এই কাফে। ঠিকানা হিন্দুস্তান পার্ক।
অল্টেরা: প্রাচীন গ্রিসের বৈভব দেখতে ইচ্ছা করে? তেমনই বিলাসবহুল কায়দায় খাওয়াদাওয়া করতে অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন অল্টেরায়। প্রাচীন গ্রিসের অট্টালিকার আদলে সাজানো পার্ক স্ট্রিটের এই রেস্তরাঁয় মেলে হরেক রকমের সুরাও। ‘অল্টেরা’ নামটির অর্থই হল ‘সূরার দেশ’।
জঙ্গল সাফারি: এখানে খেতে এলে বিভূতিভূষণ বন্দ্যাপাধ্যায় ও ‘আরণ্যক’ -কে মনে পড়তেই পারে। তবে জঙ্গলের মাঝে খাওয়াদাওয়া করতে চাইলে আর রিখটারসভেল্ট যেতে হয় না। বেঙ্গল কেমিক্যালের কাছে এক শপিং মলে পৌঁছে গেলেই চলে। এখানে জঙ্গল সাফারি নামে এমন একটি রেস্তরাঁ সাজানো হয়েছে অবিকল জঙ্গলের মতো। রয়েছে হরেক রকমের পশুপাখির কৃত্রিম অবয়ব।
ফ্লাই কুজিনা: যাতায়াতের স্বার্থে বিমানে চড়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু খাবার খেতে বিমানে চাপা! সেটিও অস্বাভাবিক নয়। সল্টলেকের ফ্লাই কুজিনা বিমানের মতো করে নির্মিত এক রেস্তরাঁ। বসার জায়গা থেকে পরিবেশ সবই বিমানের আদলে তৈরি। এই রেস্তরাঁয় খাঁটি নিরামিষ খাবার পাওয়া যায়।
সপ্তপদী: উত্তমকুমার আর সুচিত্রা সেনের জুটি এখনও বাঙালির বড় প্রিয়। মনে গেঁথে গিয়েছে ‘সপ্তপদী’ ছায়াছবির ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ গানটিও। সেই ‘সপ্তপদী’ ছবিকে মাথায় রেখে গোলপার্ক, সল্টলেক-সহ কলকাতার একাধিক স্থানে খুলেছে সপ্তপদী রেস্তরাঁ। নববর্ষে বিশুদ্ধ বাঙালি খাবার খেতে অনেকেই ভিড় জমান এই রেস্তরাঁয়।
রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার কাফে: বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এখন অতি চর্চিত বিষয়। আর বাঙালির বন্যপ্রাণী বললেই প্রথমে মাথায় আসে সুন্দরবন আর রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। সেই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে কেন্দ্র করেই টালিগঞ্জে রয়েছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার কাফে। কাফের দরজায় যেমন রয়েছে বড়সড় একটি বাঘের মূর্তি তেমনই ভিতরে রয়েছে বাঘের হরেক রকম ছবি।
কাফে পজিটিভ: অনেক ক্ষেত্রেই এইচআইভি বা এড্সে আক্রান্তদের সমাজচ্যুত করে রাখার প্রবণতা দেখা যায়। সেই ধারা ভাঙতে সাত জন এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তি দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জে চালু করেছেন কাফে পজিটিভ। শুধু কলকাতা নয়, গোটা এশিয়ায় এটিই প্রথম এড্স রোগীদের দ্বারা পরিচালিত কাফে বলে মত কাফের কর্ণধারদের।
ট্রাম ডিপো কাফে: বালিগঞ্জেই রয়েছে আরও একটি কাফে যা কলকাতার ঐতিহ্যকে মাথায় রেখে তৈরি, ট্রাম ডিপো কাফে। এখন কলকাতার রাস্তায় ট্রামের সংখ্যা হাতেগোনা। কিন্তু অনেকেরই অতীতের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে থাকা ট্রাম ডিপোগুলির সঙ্গে। এই কাফে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে সেই অতীতচারিতায়। খাওয়ার জায়গাগুলি ট্রামের কামরার আদলে তৈরি।
বাইকার্স কাফে: বিদেশে বাইকারদের জন্য বিশেষ কিছু পানশালা থাকে। বর্তমানে ভারতেও এই ধরনের খাওয়ার জায়গার অভাব নেই। এলগিন রোডের বাইকার্স কাফে তেমনই একটি স্থান। দেশের জাতীয় সড়কগুলিতে যে ধরনের ধাবা থাকে, এই কাফের মেনু অনেকটা ওই আদলে তৈরি। বিভিন্ন ধরনের শৌখিন এবং বিলাসবহুল মোটরবাইক ঘিরে এই কাফের অন্দরসজ্জা তৈরি হয়েছে। খাওয়াদাওয়ার পাশাপাশি ছোটখাটো খেলাধুলো করা বা গান শোনারও ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।
উবুনটু: বিশ্ব জুড়ে বহু মানুষ এখন উদ্ভিদজাত খাদ্যাভ্যাসের দিকে ঝুঁকেছেন। কেউ পশুপ্রেমের জন্য, আবার কেউ স্বাস্থ্যের খাতিরে। এই ভিগানদের দলে কলকাতাবাসীর একাংশ যোগ দিয়েছেন। সম্প্রতি তাঁদের জন্যেই নিউ অলিপুরে খুলেছে উবুনটু নামক একটি ভিগান রেস্তরাঁ।
কাফে অফবিট: বসন্তের মাতাল সমীরণ উপেক্ষা করা বাঙালির পক্ষে সহজ নয়। বহুতলের উপর খোলা আকাশের তলায় খাওয়াদাওয়া করতে তাই অনেকেই এখন বেছে নেন বিভিন্ন রুফ টপ কাফে। তেমনই একটি স্থান, কাফে অফবিট। ইএম বাইপাসের ধারে বহুতলের ছাদে অবস্থিত এই রেস্তরাঁর বিশেষত্ব, হরেক দেশের সকালের জলখাবার। আমেরিকা থেকে ইজরায়েলের জলখাবার যেমন রয়েছে খাদ্যতালিকায়, তেমনই রয়েছে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের জলখাবারও।
বোহো ট্রাঙ্ক: হস্তশিল্প, চারুকলা আর পেটপুজো, তিনেই বাঙালির পারদর্শিতা কারও অজানা নয়। আর এই তিনটি বিষয়কে এক ছাদের তলায় এনেছে প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের বোহো ট্রাঙ্ক নামক একটি রেস্তরাঁ। এখানে একই সঙ্গে হস্তশিল্পের নানা সামগ্রী কেনাকাটা ও সঙ্গে পছন্দের খাওয়াদাওয়া করার বন্দোবস্ত রয়েছে। মাঝেমাঝেই বসে গানের আসরও।
পটবয়লার কফি হাউজ: ধোঁয়া ওঠা কফিতে চুমুক দিতে দিতে বই পড়ার অভ্যাস বাঙালির নতুন নয়। সেই পুরনো অভ্যাস আর সাম্প্রতিকতার মিশেলে পূর্ণ দাস রোডে গড়ে উঠেছে পটবয়লার কফি হাউজ। বিশেষ করে এখানকার হ্যারি পটারের ছবি দেওয়া কুশন কিংবা প্রফেসর স্নেপের উদ্ধৃতির আলো পটারপ্রেমিকদের মন কেড়ে নিতে পারে।
ক্যাফিন এন কার্বুরেটর: মোটরবাইক প্রেমীদের জন্য যদি থিম কাফে থাকতে পারে, তবে যাঁরা চার চাকা ভালবাসেন তাঁরা কী দোষ করলেন? হাঙ্গারফোর্ড স্ট্রিটে অবস্থিত ক্যাফিন এন কার্বুরেটরে দেখা মিলবে ১৯৬০ সালের শেলবি কোবরা গাড়ির।