Anuttama Banerjee

‘সারা ক্ষণ বাতিক করি, কেন যে করি লোকে বুঝতে চায় না, কী করে বলব?’ আলোচনায় মনোবিদ

‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এ সপ্তাহের বিষয় ছিল ‘অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজ়অর্ডার’।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২৩ ২০:৪৭
Share:

নিজের তৈরি করা নিয়মে নিজেই আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছেন? ছবি: সংগৃহীত।

এক বার নয়, বার বার হাত ধুয়েও স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে না, স্নান করতে ঢোকা মানেই ঘণ্টা খানেকের গল্প, বাইরের জামাকাপড় পরে কেউ বিছানার কাছে দাঁড়ালেও সমস্যা হচ্ছে! বাড়ির লোকজনও অতিষ্ট হয়ে পড়ছেন এমন আচরণে। অনবরত প্রশ্ন করা হচ্ছে, কিসের এত বাতিক তোমার? তবে এ কি শুধুই বাতিক, না কি অন্য কিছু? এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁদের মনের মধ্যে এমন কিছু উদ্বেগ কাজ করে, যার ফলে তাঁরা বাধ্য হয়ে নিজেরাও কিছু নিয়ম মানেন এবং অন্যকেও সেই নিয়মগুলি মানার জন্য জোর করেন। যেমনটা চাইছিলেন, ঠিক তেমনটা করা হলেও সেই উদ্বেগ ও আশঙ্কা কিছুতেই পিছু ছাড়ে না। এই মন শান্ত হবে কী করে? অন্যকেও বা বোঝাবেন কী করে এই আচরণ ইচ্ছাকৃত নয়? এই সব প্রশ্ন নিয়েই সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের এ সপ্তাহের বিষয় ছিল ‘অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজ়অর্ডার’। এই পর্বে অনুত্তমার সঙ্গী ছিলেন মনোবিদ শ্রীময়ী তরফদার।

Advertisement

প্রতি পর্বের আগেই অনুত্তমার কাছে পাঠানো যায় প্রশ্ন। এই পর্বেও ই-মেলে তেমন কিছু প্রশ্ন পেয়েছিলেন মনোবিদ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জন লিখেছেন, ‘পুজো করার সময়ে ঠাকুরের ছবির সামনে বসলেই নানা রকম নোংরা চিন্তা মাথায় আসতে থাকে। নিজেকে তখন অশুদ্ধ মনে হয়। অপবিত্র লাগে। বার বার পুজোর আচার-নিয়মে নিজেকে নিযুক্ত করে মনকে শান্ত করার চেষ্টা করলেও লাভ হয় না। এত খারাপ কথা মাথায় আছে যা চিঠিতে লিখে জানানোও আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।’

এক এক জনের সমস্যা এক এক রকম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর এক জন লিখেছেন, ‘আমার মাথায় এমন কিছু চিন্তা আসে, যা মূলত আমার প্রিয় মানুষদের নিয়ে। ধরুন, বাবা কোনও কাজে বাইরে গিয়েছেন। তাঁর ফিরতে দেরি হলেই আমার মনের মধ্যে নানা খারাপ চিন্তা আসতে থাকে। এই বুঝি একটা দুর্ঘটনার খবর এল! তখন ফোন এলেও আমার ভয় হয়। চারদিকে ঘটে যাওয়া নানা দুর্ঘটনা আমার চিন্তা আরও আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমার সঙ্গে আগে কখনও এ রকম কিছু ঘটেনি, তবুও কেন আমার মনে এমন চিন্তা আসে, বুঝে উঠতে পারি না।’

Advertisement

ব্যক্তি যখন কোনও একটি ভাবনার বৃত্ত থেকে নিজেকে বার করতে পারেন না, সেটা অবসেশন। এই রকমই সমস্যার কথা জানিয়ে আর এক জন লিখেছেন, ‘আমার এমন মানুষদের নিয়ে যৌন চিন্তা আসে, যাঁদের সঙ্গে আমার সেই রকম সম্পর্কই নয়। নিজেকে বড় লজ্জিত লাগে। কেন এমন হয়?’

অবসেসিভ, কমপালসিভ এবং ডিজ়অর্ডার এই তিনটি শব্দ নিয়েই মূল আলোচনা। শ্রীময়ী বললেন, ‘কোনও নেতিবাচক চিন্তা, কোনও ছবি যা চোখের সামনে আসছে, আমাদের বিরক্ত করছে, বিপণ্ণ করছে, চেষ্টা করেও মনন থেকে সরছে না সেই সব চিন্তা— এই জায়গাগুলো অবসেশনের মধ্যে পড়ে। কমপালশন কিংবা বাতিকের সঙ্গে কমবেশি আমরা পরিচিত। সব সময়ে জিনিসপত্র গোছানো, কোনও কাজ করার পর তা ঠিক হল কি না, তা জানতে বার বার সে দিকে মন দেওয়া। কমপালশন এক ধরনের ক্রিয়া, যা আমরা করে থাকি মনের উদ্বেগ, চিন্তা থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য। মাঝেমধ্যে নয়, এ রকম সমস্যা যখন বার বার আপনার ক্ষেত্রে দেখা দেয়, তখন তা ডিজ়অর্ডারের পর্যায় চলে যায়। খুব অল্প শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে এই সমস্যাগুলি বাড়াবাড়ির পর্যায় যায়। তখনই ক্লিনিক্যাল ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন পড়ে।’’

এই পর্বে কেবল অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজ়অর্ডার বিষয়টি নিয়ে আলোচা করা হল। পরবর্তী পর্বে কী ভাবে এর সঙ্গে বোঝাপড়া করা যায়, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে, বললেন অনুত্তমা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement