কলকাতার রাস্তায় ছবির প্রদর্শনী। নিজস্ব চিত্র।
ছবি কথা বলে। ছবির মতো মুখর আর বাগ্মী এ পৃথিবীতে খুব কম জিনিসই রয়েছে। নিশ্চল, স্থির, শান্ত ছবি যে অনর্গল কত কথা বলে চলে, তার হিসাব নেই। মুহূর্ত অনেকটা কচু পাতায় জলের মতো। ধরে রাখা সহজ নয়। ধরতে গেলেই পালিয়ে যায়। আবার এমন অনেক দামি মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি হয়, যা দেখে তৃপ্ত হয় মন। তেমনই কিছু ফ্রেমবন্দি মুহূর্তের প্রদর্শনী চলছে সিদো-কানহু ডহার, ৬ এসপ্ল্যানেড ইস্ট— এই ঠিকানায়। ভাবনায় ‘কলকাতা প্রেস ফোটোগ্রাফার অ্যাসোসিয়েশন’। মূলত সরস্বতী পুজো উপলক্ষেই ফাল্গুনের কলকাতায় চিত্র সাংবাদিকদের এই আয়োজন। শুরু হয়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারি। প্রদর্শনী চলার কথা ছিল ১৫ তারিখ পর্যন্ত। কিন্তু দর্শকের ভালবাসা আর উচ্ছ্বাসে সেই সময়সীমা বৃদ্ধি করতে হয়েছে। ১৭ তারিখ রাত পর্যন্ত এই প্রদর্শনী চলবে। প্রদর্শনীর নাম, ‘চিত্র যেথা ভয়শূন্য’
প্রদর্শনী ঘুরে দেখছেন উৎসুক ছবি-প্রেমীরা। নিজস্ব চিত্র।
এই প্রদর্শনীতে রয়েছে মোট ২৪৭টি ছবি। এর মধ্যে সিংহভাগ ছবি অপ্রকাশিত। কয়েকটি প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। প্রতিটি ছবি যেন এক একটি জানলা। সেই জানলায় চোখ রাখলে স্পষ্ট দেখা যায় শতরান করে বিরাট কোহলির চোখের কোণে চিক চিক করছে জল, সঙ্গী হওয়া যায় বনধের ফাঁকা রাস্তায় একা হেঁটে যাওয়া এক বৃদ্ধের, সাক্ষী থাকা যায় রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সঙ্গে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথোপকথনের। কোনও ছবি করোনার স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। সুধীর উপাধ্যায়, রনি রায়, হিল্টন ঘোষ এবং প্রদীপ আদক— এই প্রদর্শনীতে চার জন প্রয়াত চিত্রসাংবাদিককে সম্মান জানানো হয়েছে।
এই অভিনব উদ্যোগের ভাবনার নেপথ্যে চিত্র সাংবাদিকেরা থাকলেও, এমন একটি কর্মকাণ্ডের আয়োজন করা সম্ভব হত না ফুটপাথের দোকানের তিন মালিক না থাকলে। যে জায়গায় এই প্রদর্শনীটি হচ্ছে, সেখানে দোসা, শরবত আর ফলের দোকান ছিল। কিন্তু প্রদর্শনীর জন্য জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন তিন ছবি-প্রেমী মানুষ। তেমনটাই জানালেন কলকাতা প্রেস ফোটোগ্রাফার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে পিন্টু প্রধান। তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা আমাদের জায়গা ছেড়ে না দিলে হয়তো এটা করা সম্ভব হত না। এই তিন দিনে প্রভূত সাড়া পেয়েছি। সকলেই খুব প্রশংসা করেছেন। আমাদের ভাল লাগছে যে ক্যামেরায় তোলা ছবি দেখতেও অনেকের আগ্রহ আছে।’’