Parkinson

পরিবারে পার্কিনসন’স রোগী থাকলে কম বয়সেও সতর্ক থাকার বার্তা 

পরিবারে মা অথবা বাবা যদি পার্কিনসন’সের শিকার হন, তা হলে তাঁদের সন্তানদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৩০ শতাংশ। কী ভাবে সতর্ক থাকা যেতে পারে?

Advertisement

জয়তী রাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৩ ০৫:১৩
Share:

মূলত বয়স্কদের এই পার্কিনসন’স রোগে যে আক্রান্ত হতে পারেন কমবয়সিরাও, তা জানা নেই অনেকেরই। প্রতীকী ছবি।

আচমকা হাত শিথিল হয়ে জিনিস পড়ে যেত, মাঝেমধ্যে নিজেও পড়ে যেতেন, পেশিতে টান ধরে নড়াচড়া করতে কষ্ট হত। এ সব যে, কোনও রোগের উপসর্গ, সে কথা কোনও দিনই ভাবনায় আসেনি। কিন্তু এক দিন অফিসে পড়ে যাওয়ায় ডাক্তারের কাছে যান বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা, বছর ৩২-এর তনুশ্রী বসু। মাসখানেকের মধ্যে জানা গেল, তিনি পার্কিনসন’স রোগের শিকার।

Advertisement

মূলত বয়স্কদের এই রোগে যে আক্রান্ত হতে পারেন কমবয়সিরাও, তা জানা নেই অনেকেরই। চিকিৎসা-পরিভাষায় একে বলা হয় ‘ইয়ং অনসেট পার্কিনসন’স ডিজ়িজ়’ (ওয়াইওপিডি)। সমীক্ষা বলছে, বিশ্বে পার্কিনসন’স রোগাক্রান্তদের দুই শতাংশ এর শিকার। পার্কিনসন’স রোগের কারণ এখনও অজানা। তবে ওয়াইওপিডি অনেকটাই বংশগত, বলছেন চিকিৎসকেরা।

সম্প্রতি পার্কিনসন’স রোগ নিয়ে শহরে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই কথাই জানালেন আয়োজক সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল পার্কিনসন’স অ্যান্ড মুভমেন্ট ডিজ়অর্ডার সোসাইটি, এশিয়ান অ্যান্ড ওশিয়ানিয়ান সেকশন’-এর চেয়ারম্যান, চিকিৎসক রেমন্ড রোসালেস। তিনি জানাচ্ছেন, কারও পরিবারে মা অথবা বাবা যদি পার্কিনসন’সের শিকার হন, তা হলে তাঁদের সন্তানদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৩০ শতাংশ। কী ভাবে সতর্ক থাকা যেতে পারে? রোসালেসের মতে, ‘‘ঘন ঘন পেশি শিথিল হলে, হাত-পা কাঁপলে, বার বার পড়ে গেলে বুঝতে হবে সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।’’ তাঁর আরও পরামর্শ, ‘‘রোগের উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই নিয়মিত ব্যায়াম করুন। কারণ, পার্কিনসন’স ডিজ়িজ় দ্রুত ধরা পড়ে যথাযথ চিকিৎসা শুরু করা যেমন জরুরি, ততটাই জরুরি রোগের প্রকোপকে ওষুধ এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে ঠেকিয়ে রাখা।’’

Advertisement

সম্মেলনের যৌথ আয়োজক ‘মুভমেন্ট ডিজ়অর্ডার সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’র সেক্রেটারি, ‘ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস, কলকাতা’-র চিকিৎসক হৃষীকেশ কুমারের মত, ‘‘পার্কিনসন’স ডিজ়িজ়েরচিকিৎসায় ওষুধ, অস্ত্রোপচারে আধুনিক পথেই হাঁটছে এ শহর। তবে গবেষণায় আরও অনেক এগোতে হবে। দিনে গড়ে ৩০ জন পার্কিনসন’স রোগীকে দেখি। ফলে রোগের বিস্তার আঁচ করে ছড়িয়ে দিতে হবে চিকিৎসা পরিষেবাকে।’’

কোভিডের সময়ে থাকা কড়া বিধিনিষেধের কারণে পার্কিনসন’স রোগীদের জীবনযাত্রার মান অনেকটাই যে খারাপ হয়েছে, তা মেনে নিয়েছেন সম্মেলনে উপস্থিত অন্য চিকিৎসকেরা। তাঁদের মতে, বদ্ধ পরিসরে থেকে এই রোগীদের মানসিক সমস্যা যেমন বেড়েছে, তেমন বেড়েছে ডিমেনশিয়ার সমস্যাও। কোভিড-কালে রোগীদের ফিজ়িয়োথেরাপি বন্ধ থাকায় রোগের সঙ্গে লড়াইয়ের পর্যায়ও ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এমনই পরিস্থিতির শিকার বছর ৬৮-র করুণাময় দে। পনেরো বছর আগে পার্কিনসন’স ডিজ়িজ়ে আক্রান্ত হন কোল ইন্ডিয়ার প্রাক্তন এই কর্মী। একটি মোটরবাইক দুর্ঘটনার পরে ধীরে ধীরে সামনে আসে পার্কিনসন’স। মেয়ে নবনীতা জানাচ্ছেন, ওষুধ এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে রোগের প্রকোপ কিছুটা ঠেকিয়ে রাখা গেলেও কোভিড শুরু হতেই বাড়তে থাকে তাঁর বাবার মানসিক সমস্যা। গত নভেম্বরে বাড়ি থেকে হাঁটতে বেরিয়ে তিন দিনের জন্য হারিয়ে গিয়েছিলেন করুণাময়। পেশি শিথিল হয়ে আটকে যাচ্ছিল পা, সেই সঙ্গে বিভ্রমে (হ্যালুসিনেশন) ভুগছিলেন।

পার্কিনসন’স নিয়ে সামাজিক ছুতমার্গও রোগীর বড় বাধা। ৩২ বছর আগে যে সামাজিক আতঙ্কে নিজের রোগের কথা গোপন করেছিলেন ‘ব্যাক টু দ্য ফিউচার’-এর অভিনেতা মাইকেল জে ফক্স। ২৯ বছরে পার্কিনসন’স রোগে আক্রান্ত হলেও তার সাত বছর বাদে তিনি তা প্রকাশ্যে জানান। তার পরে অবশ্য এই রোগ সম্পর্কে গবেষণা এগিয়ে নিয়ে যেতে বহু সময় ও অর্থ ব্যয় করেছেন ফক্স। বাস্তবে কিন্তু সামাজিক প্রেক্ষাপট আজও তেমন বদলায়নি। সম্মেলনে উপস্থিত চিকিৎসকদের মতে, পার্কিনসন’স রোগীদের জীবনে অনেকটা জায়গা জুড়ে থাকেন ‘কেয়ারগিভার’। তাই রোগের সচেতনতায় প্রচার বাড়াতে হবে, রোগী এবং রোগ সম্পর্কে সহানুভূতিশীল হতেহবে পরিবারকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement