Asthma

হাঁপানি বা ফুসফুসের ক্রনিক অসুখ থাকলে জ্বর হলে সাবধান

হাঁপানি, সিওপিডি বা আইএলডি-র মতো ফুসফুসের অসুখ থাকলে কোভিড-১৯ এবং ডেঙ্গি জ্বরের জটিলতা বাড়তে পারে।

Advertisement

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায় 

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২০ ১৯:৪৩
Share:

চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে সুস্থ থাকুন। ছবি: শাটারস্টক।

করোনাভাইরাসের ভয়ে সন্ত্রস্ত বিশ্ব। করোনার মহামারির পাশাপাশি আমাদের রাজ্যে সক্রিয় ডেঙ্গি জ্বরের এডিস ইজিপ্টা মশা, ম্যালেরিয়ার জীবাণু ও স্ক্রাব টাইফাস নামক পোকার কামড়ে প্রবল জ্বর। বর্ষার জমা জলে এডিস ইজিপ্টা মশার বংশ বেড়ে চলেছে। আর মশা কামড়ালে ডেঙ্গির আশঙ্কা থাকেই। হাঁপানি, সিওপিডি বা আইএলডি-র মতো ফুসফুসের অসুখ থাকলে কোভিড-১৯ এবং ডেঙ্গি জ্বরের জটিলতা বাড়তে পারে।

Advertisement

এ দিকে মোটে তিন দিনেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা লাখে পৌঁছে যাচ্ছে। এডিস মশার বংশবৃদ্ধিতে বেড়ে চলেছে ডিইএনভি ডেঙ্গি ভাইরাসেরাও। দুই জীবাণুর সাঁড়াশি আক্রমণে মানুষ বিধ্বস্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে (তথ্য: মেডস্কেপ) শ্রীলঙ্কা, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ-সহ বিভিন্ন ট্রপিক্যাল কান্ট্রিতে প্রতি বছর প্রায় ৩৯০ মিলিয়ন (৩৯ কোটি) মানুষ ডেঙ্গি জ্বরে আক্রান্ত হন। এঁদের মধ্যে ৯৬ মিলিয়নের অসুখ গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছয়। দ্রুত চিকিৎসা না করলে রোগীকে বাঁচানো মুশকিল হয়ে ওঠে।

ডেঙ্গি ভাইরাসের (DENV) এর চারটি সেরোটাইপ আছে। এদের মধ্যে ডিইএন-২, ডিইএন-৪ ভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মক সমস্যা ডেকে আনে। অন্য দিকে কোভিড-১৯ ভাইরাসের আক্রমণের মূল লক্ষ্য শ্বাসনালী ও ফুসফুস। তাই এই সময়টায় ক্রনিক ফুসফুসের অসুখের রোগীদের বাড়তি সাবধানতা নেওয়া দরকার, বললেন পালমোনলজিস্ট সৌম্য দাস। প্রবল জ্বর, বমি, পেটে ব্যথা, সঙ্গে র‍্যাশ, শ্বাসকষ্ট ও ঝিমিয়ে পড়া, এই ধরনের উপসর্গ দেখা গেলে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে অবিলম্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা শুরু করানো দরকার।

Advertisement

আরও পড়ুন: কোন মাস্ক পরবেন? ক’দিন পরবেন? কী ভাবে ব্যবহার করবেন?

আরও পড়ুন: কেন এই সব্জির বীজ রাখতেই হবে ডায়েটে

মশা কামড়ালে ডেঙ্গির আশঙ্কা থাকেই। ছবি: শাটারস্টক।

জ্বর হলেই টেস্ট করা জরুরি

কোনও অ্যান্টিভাইরাল দিয়ে কোভিড-১৯ বা ডেঙ্গির ভাইরাসদের দমিয়ে রাখা যায় না। উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা করে রোগীর কষ্ট কমানো হয়। জ্বর হলে ডায়ারিয়ার মতোই শরীরে জলের অভাব দেখা দেয়। তাই বারে বারে অল্প অল্প করে জল না দিলে ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি থাকে। তবে একটা ব্যাপারে গুরুত্ব দিতেই হবে। জ্বর হলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনীয় টেস্ট করানো বাধ্যতামূলক, বললেন সৌম্য দাস। অ্যাজমা, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ বা সিওপিডি অথবা ব্রঙ্কাইটিসের মতো ক্রনিক অসুখ থাকলে জ্বর হলে কষ্ট বেড়ে যায়। শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। সৌম্যবাবু জানালেন, ক্রনিক ফুসফুসের অসুখে যাঁরা ভুগছেন তাঁদের জ্বর, গলা ব্যথা বা কাশি শুরু হলেই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে কোভিড-১৯ পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার পরীক্ষাও করিয়ে নেওয়া দরকার।

নিউমোনিয়ার টিকা দেওয়া থাকলে ভাল

ইদানীং বাচ্চাদের নিউমোনিয়ার টিকা দেওয়া হয়। কোভিড-১৯ বা ডেঙ্গি জ্বরই হোক অথবা ম্যালেরিয়ার জ্বর, শিশুদের ফুসফুসে মারাত্মক সংক্রমণের ঝুঁকি কম থাকে। কিন্তু মাঝবয়সী ও সিনিয়র সিটিজেনদের সিওপিডি বা অ্যাজমা বা অন্য কোনও ক্রনিক ফুসফুসের অসুখ থাকলে নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন নেওয়া জরুরি। করোনা, ডেঙ্গি ভাইরাস অথবা ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ হলে দূর্বল ফুসফুস আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে, বললেন মেডিসিনের চিকিৎসক দীপঙ্কর সরকার। বিশেষত বেশি বয়সে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়ে। করোনা, ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়ার সঙ্গে নিউমোনিয়ার জীবাণুর সংক্রমণ হলে রোগীর অবস্থা সঙ্গীন হয়ে পড়ে। কোভিড-১৯ এর সংক্রমণে ফুসফুসের সূক্ষ্ম রক্তনালীতে রক্ত জমাট বেঁধে রক্ত চলাচল কমে যায়। অন্য দিকে ডেঙ্গি জ্বরে প্লেটলেট কাউন্ট কমতে শুরু করায় শরীরের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে রক্তপাতের আশঙ্কা থাকে। একই সঙ্গে সিভিয়ার ডেঙ্গি হলে ক্যাপিলারিতে (রক্তজালিকা) ছিদ্র হয়ে ফুসফুসে জল জমতে পারে বলে সাবধান করলেন সৌম্য দাস। এর ফলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।

শ্বাসকষ্ট শুরু হলে কী করবেন

শুরুতেই সাবধান হলে অনেক জটিল পরিস্থিতির হাত এড়ানো যায়। হাঁপানি, সিওপিডি বা আইএলডি-র মতো ফুসফুসের ক্রনিক অসুখ থাকলে জ্বর হলেই সাবধান হতে হবে, বললেন দীপঙ্করবাবু। এই করোনা আবহে বাড়িতে একটা পালস অক্সিমিটার কিনে রাখতে পারলে ভাল হয়। শ্বাসকষ্ট বা জ্বর হলে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করলে জটিলতা এড়ানো যায়। অক্সিজেনের পরিমাণ ৯৫-এর নীচে নামলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।

শ্বাসকষ্ট বা জ্বর হলে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করলে জটিলতা এড়ানো যায়। ছবি: শাটারস্টক।

সর্দি কাশি, কাশির দমকে বুকে ব্যথা, কফ ওঠা এবং শ্বাসকষ্ট হলে অবশ্যই ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থাকা উচিত। অনেক সময় ভয়ঙ্কর ডেঙ্গি হলে বুকে জল জমে রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে। এই সময়ে রেসপিরেটরি ফেলিয়োর, অর্থাৎ রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা ক্ষীণ হয়ে যায়। এই অবস্থায় রোগীকে সাময়িক ভাবে ভেন্টিলেটরে রেখে স্থিতিশীল না করলে বিপদের আশঙ্কা প্রতি পদে। সময়মতো ভেন্টিলেটরে দিলে রোগীকে সুস্থ করে তোলা যায়। ডেঙ্গি আর করোনার যুগলবন্দিতে রোগীর অবস্থা মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছতে পারে। চিকিৎসকদের পরামর্শ, সেই সুযোগ না দিয়ে আগে থেকেই সাবধান হতে হবে। অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে যাবেন না। নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক বাঁধতে হবে, নাকের নীচে মাস্ক পরে রোগ ডেকে আনবেন না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement