সপ্তাহখানেক আগে রেডিওলজিস্ট ছুটিতে যাওয়ায় ক্যানিং হাসপাতালে আলট্রাসোনোগ্রাফি বন্ধ। এতে সমস্যায় পড়েছেন রোগীরা।
হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল সরকার বলেন, ‘‘ওই চিকিৎসক ছুটি নেওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। হাসপাতালে ইউএসজি বিভাগ বন্ধ আছে। এ ব্যাপারে জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে জানিয়েছি।’’ পরিমল পাইক নামে ওই রেডিওলজিস্ট বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত কারণে ছুটি নিয়েছি। কোনও মন্তব্য করব না।’’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কিছু দিন আগে জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি তথা ওই হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য শৈবাল লাহিড়ি হঠাৎ হাসপাতাল পরিদর্শনে আসেন। তিনি দেখেন, ইউএসজি বিভাগের সামনে রোগীদের লাইন। অথচ সাড়ে ১১টা বেজে গেলেও পরিমলবাবুর আসেননি। শৈবালবাবু ওই বিভাগেই পরিমলবাবুর জন্য অপেক্ষা করেন। তিনি আসার পরে শৈবালবাবু দেরিতে আসার কারণ জানতে চান। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরপরেই পরিমলবাবু ছুটি নেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রথমে তিনি এক সপ্তাহের ছুটির আবেদন করেছিলেন। কিন্তু পরে দফতরকে ছুটি বাড়ানোর আবেদন করেন। কেউ কেউ জানান, ওই চিকিৎসক হাসপাতালে আসেন না ঠিকই, কিন্তু নিয়মিত কলকাতা থেকে ক্যানিংয়ে নিজের চেম্বার করছেন। সম্প্রতি ক্যানিং হাসপাতালে পিপিপি মডেলে সিটি স্ক্যান চালু হয়। চিকিৎসক পরিমল পাইক ওই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে সিটি স্ক্যান করেন। তিনি ছুটিতে থাকলেও হাসপাতাল চত্বরের মধ্যেই সিটি স্ক্যান বিভাগে নিয়মিত আসছেন বলে জানা গিয়েছে।
শৈবালবাবুর বক্তব্য, ‘‘বার বার পরিমলবাবুর নামে অভিযোগ আসছিল। তাই হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। রোগীদের অসুবিধার কথাও তাঁকে বলেছিলাম। তাতেও কোনও লাভ হয়নি।’’ এ সব বিষয়েও অবশ্য মুখ খুলতে চাননি পরিমলবাবু। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসীম দাস মালাকার জানান, পরিমলবাবু ছুটি নিয়েছেন বলে জেনেছি। ওই হাসপাতালে আর কোনও রেডিওলজিস্ট না থাকায় একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। আপাতত অন্য একজন চিকিৎসককে পাঠিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।
রোগীরা ঠিক সময়ে রিপোর্ট পান না বলেও অভিযোগ। একাধিকবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও সমস্যার কোনও সুরাহা হয়নি বলে জানালেন স্থানীয় বাসিন্দারা। হাসপাতালের এই দশার জন্য এমনিতেই রোগীদের ভোগান্তির শেষ নেই। তার মধ্যে ইউএসজি বিভাগটি এখন পুরোপুরি বন্ধ হওয়ায় সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়েছেন প্রসূতিরা। রোগীদের বেশি খরচে বাইরে থেকে আলট্রাসোনোগ্রাফি করাতে হচ্ছে। হাসপাতালে আসা এক রোগীর মা আলোমারা বিবি বলেন, ‘‘আমার মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু এখানে ইউএসজি হচ্ছে না।’’
শান্তনু নস্কর নামে এক রোগী অসহ্য পেটের যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসক তাঁর আলট্রাসোনোগ্রাফি করার কথা বলেন। তাঁর স্ত্রী কেয়া নস্কর বলেন, ‘‘হাসপাতালের ইউএসজি বিভাগে গেলাম। সেখান থেকে বলা হল, চিকিৎসক নেই। তাই বাধ্য হয়ে অনেক বেশি টাকা দিয়ে বাইরে থেকে ইউএসজি করাতে হয়েছে।’’