Online game addiction

Online Gaming: পড়ুয়াদের অনলাইন গেমে আসক্তিই বাড়াচ্ছে চিন্তা

গত দু’বছরে পড়ুয়াদের মোবাইল-আসক্তি বা অনলাইনে সময় কাটানোর প্রবণতা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এমন উদাহরণের সংখ্যাও বেড়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২২ ০৬:৪৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

দিনের বেশির ভাগ সময়েই অনলাইন গেম খেলায় মগ্ন থাকে ছেলে। মোবাইলের দিকেই সর্বক্ষণ তাকিয়ে থাকে সে। সেই সঙ্গে গেম খেলার জন্য টাকা চেয়ে বায়না, ফোন না দিলে খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে
তুলকালাম বাধানো— এ সবও রয়েছে। ছেলের এই অনলাইন গেমের ‘নেশা’ ছাড়াতে সম্প্রতি মনোরোগ চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন এক অভিভাবক। ওই নেশা কী ভাবে ছাড়ানো সম্ভব, তারই প্রতিকার চেয়েছিলেন তাঁরা।

Advertisement

শুধু এই একটি উদাহরণ নয়। কলকাতায় এমন ভুক্তভোগী অভিভাবকদের সংখ্যা অনেক। গত দু’বছরে পড়ুয়াদের মোবাইল-আসক্তি বা অনলাইনে সময় কাটানোর প্রবণতা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এমন উদাহরণের সংখ্যাও বেড়েছে। কম বয়সিদের এ ভাবে অতিরিক্ত সময় অনলাইনে কাটানো বা অনলাইন গেম খেলার নেশা কী মারাত্মক পরিণাম ডেকে আনতে পারে, তা ফের মনে করিয়ে দিয়েছে রবিবার বিদ্যাসাগর সেতু থেকে এক কিশোরের ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টার ঘটনা। ওই দিন বছর সতেরোর এক পড়ুয়াকে সেতু থেকে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করতে দেখে তাকে উদ্ধার করেছিলেন কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা। তার সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পারে, বেহালার বাসিন্দা ওই কিশোর শহরের একটি নামী স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। অনলাইনে গেম খেলার জন্য বাবার এটিএম থেকে ১০ হাজার টাকা তুলেছিল সে। কিন্তু গেম খেলে সেই টাকা হেরে যাওয়ায় আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই মতো ওই দিন দুপুরে গঙ্গায় ধাঁপ দিতে বিদ্যাসাগর সেতুতে এসেছিল সে। বিকেলে ওই কিশোরকে তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হলেও এই ঘটনা ফের মনে করিয়ে দিয়েছে বছর দুই আগের মারণ ‘ব্লু হোয়েল’ গেমের স্মৃতিকে।

অতিমারি-পর্বে গত দু’বছর স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় অনলাইনেই বেশির ভাগ পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয়েছে পড়ুয়াদের একটি বড় অংশকে। ফলে তাদের মধ্যে মোবাইলে সময় কাটানোর অভ্যাস অনেকটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে অনলাইন গেম খেলার প্রবণতাও বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। অনলাইনের ক্লাস ছেড়ে পড়ুয়ারা অবশেষে ক্লাসঘরে ফিরলেও কম বয়সিদের একাংশের অনলাইনে আসক্তি এখনও কমানো যায়নি, যা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অভিভাবকদের একটি বড় অংশের।

Advertisement

যদিও মনোরোগ চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, পড়ুয়াদের এই আসক্তি কমাতে অভিভাবকদের ভূমিকা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। মোবাইল কেড়ে নিয়ে বা বকুনি দিয়ে এই অভ্যাস কমানোর পথে হাঁটলে তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। বরং পড়ুয়া বা কম বয়সিদের মোবাইল দেখার সময় ধাপে ধাপে
কমানোর পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম বললেন, ‘‘আগে ভাবতে হবে, কেন কম বয়সিরা অনলাইন গেমে বা অনলাইনে সময় কাটানোয় আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। কারণ, তাদের অন্য বিনোদনমূলক জিনিসের সুযোগ কমছে। তাই শুধু অনলাইন গেম খেলতে বারণ করলেই হবে না, সেই সময়ে তারা কী করবে বা বিকল্প খেলাধুলোর ব্যবস্থা করার দিকটিও দেখতে হবে অভিভাবকদের। এ ছাড়া, সন্তানের সামনে অভিভাবকদের মোবাইলে মগ্ন থাকা, খাবার টেবিলে মোবাইল দেখার অভ্যাসেও বদল আনতে হবে।’’ মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বললেন, ‘‘আমরা যে সময়ে সন্তানকে বড় করছি, সেই সময়ের নিয়মকানুন অভিভাবকদের বুঝতে হবে। পড়াশোনার নামে সন্তান অনলাইনে কোথায় সময় কাটাচ্ছে, সেটাও নজরে রাখতে হবে। চোখ-কান খোলা রাখলেই সেটা বোঝা যাবে কিন্তু। নিজের সিদ্ধান্ত সন্তানের উপরে চাপিয়ে না দিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেই এই ধরনের প্রবণতা রুখে দেওয়া যেতে পারে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement