ত্বকের লাবণ্য ও বয়স ধরে রাখতে ফেস অয়েলের জুড়ি নেই। এর কাজও অনেক। ত্বককে ময়শ্চারের জোগান দেয়। তার সঙ্গেই বলিরেখা, চোখের তলার কালি দূর করতেও এক নম্বর। কিন্তু গোড়াতেই জেনে রাখা ভাল, এই ধরনের তেলের দাম বেশি হয়। তাই নিজের ত্বকের প্রয়োজন বুঝে ফেস অয়েল কিনতে হবে।
ফেস অয়েলের কাজ কী?
সাধারণত ত্বককে ময়শ্চারাইজ় করতেই ফেস অয়েল ব্যবহার করা হয়। তা ছাড়াও ভাল লিপ বাম, আন্ডারআই ক্রিম হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। অন্য দিকে মেকআপ তুলতে বা মেকআপ টাচ আপ করতেও কাজে লাগে। সে ক্ষেত্রে মেকআপ শুরুর আগেই কয়েক ফোঁটা ফেস অয়েল আঙুলের ডগায় নিয়ে ভাল করে পুরো মুখে মেখে নিন। এতে মেকআপ দীর্ঘস্থায়ী হবে। ত্বকেও ঔজ্জ্বল্য আসবে।
কোন ত্বকে কী তেল?
তৈলাক্ত ত্বকে: অনেকেই ভাবতে পারেন, তৈলাক্ত ত্বকে আবার তেল দিয়ে কী হবে? এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, এমন অনেক তেল আছে, যা ত্বকের অতিরিক্ত তেলতেলে ভাব নিয়ন্ত্রণ করে। অন্য দিকে ত্বকের সেবাম উৎপাদন নিয়ন্ত্রিত করে তৈলাক্ত ভাব কমায়। ত্বক খুব তৈলাক্ত হলে হোহোবা এবং গ্রেপসিড অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। হোহোবা খুব হালকা তেল। অন্য দিকে ত্বকের অতিরিক্ত শাইনকেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে এই তেল। গ্রেপসিড অয়েল ভাল সমতা বজায় রাখে। ফলে ত্বকে শুষ্ক প্যাচও থাকে না, আবার তৈলাক্তও হয় না। এই তেল হোহোবার চেয়েও তাড়াতাড়ি ত্বকে বসে যায়।
• শুষ্ক ত্বকে: এই ধরনের ত্বকে সেবাম কম পরিমাণে উৎপাদন হয়। ফলে ত্বক শুষ্ক হওয়া, ফাটার মতো সমস্যা দেখা দেয়। অন্য দিকে হোহোবা বা গ্রেপসিড মূলত অ্যাস্ট্রিনজেন্টের মতো কাজ করে। তাই শুষ্ক ত্বকে এমন তেল লাগাতে হবে, যাতে ওলেইক অ্যাসিড আছে। এই ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকে ময়শ্চার বজায় রেখে ত্বককে করে তোলে উজ্জ্বল। যেমন মারুলা অয়েল। এই তেলে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় তা ত্বকের পক্ষে বেশি স্বাস্থ্যকর। আরও আছে আমন্ড অয়েল। এই তেলও হাইড্রেটিং। আবার ভিটামিন এ-সমৃদ্ধ।
আর আছে অ্যাভোকাডো অয়েল। এই তেল ভিটামিন ই, লেসিথিন এবং পটাশিয়ামে সমৃদ্ধ হওয়ায় ত্বককে ময়শ্চারাইজ় করার সঙ্গে সঙ্গে পুষ্টি জোগায়। ত্বকের এপিডার্মিসে এই তেল শোষিত হয় সহজেই।
• অ্যাকনে থাকলে: এই ধরনের ত্বকে এমন তেল দরকার, যাতে অ্যান্টব্যাকটিরিয়াল প্রপার্টি আছে। যেমন রোজ়হিপ অয়েল বা পোমেগ্র্যানেট অয়েল। রোজ়হিপ তেলে ফেনলস থাকে। রোমকূপের মুখ বন্ধ না করেই ত্বকে অ্যান্টি-ব্যাকটিরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল চিকিৎসা চালিয়ে ত্বকের ব্রণ, অ্যাকনে দূরে রাখে। পোমেগ্র্যানেট অয়েলও ব্যাকটিরিয়া দূরে রেখে ত্বককে করে তোেল সজীব।
• স্বাভাবিক ত্বকে: এই ত্বকে শুষ্কতা, তৈলাক্ত ভাব বা অ্যাকনের সঙ্গে মোকাবিলা করার দরকার নেই। তাই এমন তেল মাখাই ভাল, যার গুণাগুণ বেশি। আর্গন অয়েলে ভিটামিন ই থাকায় তা ত্বকের দাগছোপ, বলিরেখা দূরে রাখতে সক্ষম। রেটিনল অয়েল ত্বক হাইড্রেট করে ত্বকের টেক্সচার সমান করে, ঔজ্জ্বল্য বাড়াতেও সহায়ক। স্বাভাবিক ত্বকে এই ধরনের তেল ব্যবহার করা যায়।
• স্পর্শকাতর ত্বকে: এই ধরনের ত্বকে কোনও তেল ব্যবহার করার আগে প্যাচ টেস্ট জরুরি। কিছুটা তেল লাগিয়ে ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করে দেখুন, কোনও ইরিটেশন হচ্ছে কি না। তার পরে তা ব্যবহার শুরু করুন। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানে ভরপুর থাকায় মরিঙ্গা অয়েল বা অ্যালো ভেরা অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এই তেল খুব হালকাও হয়।
ত্বকের ধরন বুঝে তেল কিনুন। একাধিক তেল একসঙ্গে মিশিয়েও ত্বকে লাগাতে পারেন। তবে ফেস অয়েল বেশি ঘষবেন না। হালকা হাতে পুরো মুখে লাগান।