Child

সন্তানের ভ্যাকসিনে দেরি হলে ভয় নেই

শিশুদের ভ্যাকসিন দেওয়ায় মাস দুয়েক এ দিক-ও দিক হলে চিন্তা করবেন না। আগামী দিনে করোনা ও ডেঙ্গির প্রকোপ থেকে সাবধানে রাখুন সন্তানকেখুব জরুরি না হলে, গত দু’মাসে শিশুদের চেম্বারে বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা ছিল চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে।

Advertisement

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২০ ০০:০২
Share:

করোনার সংক্রমণ ছড়ানোর শুরুতেই শিশুদের ঘরবন্দি রাখার নিদান দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। সেই নিদান এখনও বলবৎ। কিন্তু বাচ্চারা অসুস্থ হলে বা তাদের ভ্যাকসিনের সময় হয়ে এলে সে ক্ষেত্রে কী করা উচিত?

Advertisement

খুব জরুরি না হলে, গত দু’মাসে শিশুদের চেম্বারে বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা ছিল চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে। সাধারণ ছোটখাটো সমস্যার চিকিৎসা হয়েছে ফোনের মাধ্যমেই। তবে এখন লকডাউন চলার পাশাপাশি নানা ক্ষেত্রে বিভিন্ন ছাড় দেওয়া হচ্ছে। ফলে আগামী দিনে করোনার সংক্রমণ আরও বাড়ার একটা ভয়ও রয়েছে। তাই শিশুদের জন্য বাড়তি সাবধানতা প্রয়োজন।

Advertisement

ভ্যাকসিন সংক্রান্ত

লকডাউনের পরিস্থিতিতে শিশুদের টিকাকরণের সমস্যা হচ্ছে, এ খবর আমরা সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে দেখেছি। কোথাও ভ্যাকসিন সাপ্লাইয়ে সমস্যা, কোথাও হাসপাতালে পরিষেবা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। বিশেষত শহরতলি, গ্রাম ও প্রান্তিক অঞ্চলে সমস্যাগুলি অনেক বেশি জোরালো। তবে ধীরে ধীরে পরিষেবা স্বাভাবিক করার চেষ্টা হচ্ছে। তবে চেষ্টা করুন, অত্যন্ত জরুরি ভ্যাকসিনগুলিই এখন দিতে। সদ্যোজাতের জন্য যেগুলি আবশ্যিক, সেগুলি বাদ দিয়ে বাকি ভ্যাকসিন দিতে মাস দুয়েকের হেরফের হলে তেমন কোনও সমস্যা হবে না। চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে শিশুর টিকাকরণের চার্ট দেখে ঠিক করে নিন, কোনগুলি জরুরি। যেমন, নবজাতকদের ক্ষেত্রে বিসিজি, ওপিভি, হেপাটাইটিস বি। তার পর এক-দেড় মাসের শিশুদের রোটাভাইরাস, নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিন দেওয়া গেলে ভাল।

শিশুচিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ জানালেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিশুদের টিকাকরণ প্রক্রিয়া কিন্তু চলছে। ‘‘হুপিং কাশি, নিউমোনিয়া, চিকেন পক্স, এমএমআর, ফ্লু ভ্যাকসিনগুলি সুবিধে মতো দিয়ে নিন। তবে তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই। কিছু দিনের হেরফেরে সমস্যা হবে না,’’ আশ্বাস তাঁর। ভ্যাকসিন না পাওয়ার সমস্যাও আগামী দিনে মিটে যাবে বলে জানালেন তিনি। তবে যত দিন না যাতায়াত ব্যবস্থা মসৃণ হচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত কিছু জটিলতা থাকবেই।

আরও পড়ুন: লকডাউনে সন্তান বেশি অশান্ত, কথাই শুনছে না? কী ভাবে সামলাবেন তাকে

ডেঙ্গির আশঙ্কা

প্রতি বছর ঠিক এই সময়টাতেই ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ে। এক দিকে করোনা, অন্য দিকে ডেঙ্গি। শিশুদের সুরক্ষিত রাখা নিয়ে অভিভাবক থেকে চিকিৎসক দু’পক্ষই চিন্তিত। বাড়িঘর স্যানিটাইজ় করা, চারপাশে কোথাও জল জমতে না দেওয়া, নিয়মিত মশা মারার ওষুধ স্প্রে করা... এগুলো কিন্তু চালিয়ে যেতে হবে। বলা হয় ডেঙ্গির মশা রাতে কামড়ায় না, তা সত্ত্বেও শিশুদের রাতে মশারির ভিতরে শোয়ান। ফ্লুয়িড খেতে হবে প্রচুর। শিশুকে পর্যাপ্ত জল, ফলের রস খাওয়ান। আর জল ফুটিয়ে খাওয়াতে পারলে, আরও ভাল। শিশুর সুরক্ষার ব্যাপারে অভিভাবককেও বিশেষ সচেতন হতে হবে। তাই মা-বাবাদের নিয়ম মেনে চলতে হবে।

অন্যান্য রোগব্যাধি

গরম কালে শিশুদের সর্দি-জ্বরের প্রবণতা থাকে। ঘাম বসেও কিন্তু সর্দি হয়। দিনে একবার ভাল করে শিশুকে স্নান করান। আর গা ঘেমে গেলে, তা মুছিয়ে দিয়ে পোশাক বদলে দিন। বর্ষা শুরু হয়ে গেলে স্নান করানোর সময়ে জলটা হালকা গরম করে নেবেন। শিশু অসুস্থ হলে চিকিৎসকের পরামর্শের উপরে ভরসা রাখুন। সেই সঙ্গে শিশুর অবস্থার কথা যথাযথ ভাবে চিকিৎসককে জানানোটাও জরুরি। পরিস্থিতি জটিল বুঝলে তিনি নিজেই শিশুকে দেখতে চাইবেন। হাসপাতাল বা ডাক্তারের চেম্বারে সন্তানকে নিয়ে গেলে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন। ফিরে এসে বাচ্চার এবং নিজের পোশাক বদলে, সাবান দিয়ে হাত-পা ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে নিন। শিশুর যদি ক্রনিক কোনও সমস্যা থাকে, তা হলে তার চিকিৎসা বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। এ সব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শই শেষ কথা।

জরুরি তথ্য

এত সঙ্কটের মধ্যে একটু আশার আলোও কিন্তু রয়েছে। লকডাউনের ফলে বাড়িতে থাকার জন্য শিশুদের অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম। সর্দি-জ্বর, পেটের রোগের মতো সাধারণ অসুখও কমই হচ্ছে। ‘‘আইসোলেশনে থাকার একটা সুবিধে রয়েছে। এতে জার্ম কম ছড়ায়। তার উপরে বারবার হাত ধোয়ার অভ্যেসটা আমাদের মধ্যে তৈরি হয়ে গিয়েছে। এর ফলে সাধারণ অসুখবিসুখের উদাহরণ খুব একটা পাওয়া যায়নি। পলিউশন কমে যাওয়াও এর একটা কারণ। এ ছাড়া বাইরের খাবার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পেটের গোলমালও কম হচ্ছে,’’ মন্তব্য চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষের।

বাড়িতে বাচ্চা থাকলে অভিভাবক ও বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের অনেক বেশি সাবধান হতে হবে। মা-বাবাকে যদি বাইরে যেতে হয়, তা হলে ফিরে এসে গা-হাত-পা ভাল করে ধুয়ে পোশাক বদলে ফেলতে হবে। বাইরের পোশাক কেচে ফেলুন তখনই। বাইরে নিয়ে যাওয়া ব্যাগ রাখার আলাদা জায়গা করুন, শিশুর নাগাল এড়িয়ে। মোবাইল ফোন স্যানিটাইজ় করুন নিয়মিত। ডা. ঘোষের মতে, ‘‘আমরা সকলে হাত ধুচ্ছি, স্যানিটাইজ়ার লাগাচ্ছি ঠিকই। কিন্তু হাতে আংটি পরে আছি। এখন আংটি, ঘড়ি... এগুলো খুলে রাখুন।’’

পরিচ্ছন্নতার বিষয়গুলো রুটিনে পরিণত করে ফেলতে হবে সকলকে। যে সব অভিভাবক চিকিৎসা, পুলিশ বা অন্যান্য জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের নিজেদের আলাদা রাখা ছাড়া কোনও উপায় নেই। সবটাই করতে হবে সন্তান ও পরিবারের বাকিদের মুখের দিকে তাকিয়ে।

আরও পড়ুন: ভাষা হোক ভালবাসার

মডেল: আমন মেহরা

ছবি: শুভদীপ ধর

লোকেশন: ভর্দে ভিস্তা ক্লাব, চক গড়িয়া

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement