অটিজ়মের নতুন থেরাপি নিয়ে আশার আলো দেখছেন গবেষকেরা। ছবি: ফ্রিপিক।
অটিজ়ম এমন একটা অবস্থা, যেখানে আক্রান্ত শিশুর সামাজিক বিকাশ ঠিকমতো হয় না। এ ধরনের শিশুরা অন্যান্য স্বাভাবিক শিশুর সঙ্গে খেলাধুলা করতে পারে না। অন্যদের সঙ্গে ঠিকমতো মিশতেও পারে না। এরা একা একা থাকতে ভালবাসে। এবং অনেক ক্ষেত্রে এদের কথা বলা শুরু হতে বেশ দেরি হয়। অটিজ়ম আক্রান্তদের চিকিৎসারও নানা স্তর আছে। রোগের লক্ষণ দেখা দিলে কী করণীয়, কী ভাবে এমন শিশুদের আর পাঁচজনের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো যাবে, তা নিয়ে গবেষণাও চলছে। সম্প্রতি নতুন একটি গবেষণা আশার আলো দেখিয়েছে।
‘বিএমজে’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, প্রোবায়োটিক জাতীয় খাবার বা প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট অটিজ়মে আক্রান্তদের জন্য বিশেষ উপযোগী। অটিজ়মে আক্রান্ত শিশুদের মানসিক সমস্যার পাশাপাশি শারীরিক নানা সমস্যাও দেখা দেয়। যেমন পেটের রোগ সারতে চাইবে না, ঘন ঘন পেটখারাপ হবে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হবে। সে ক্ষেত্রে অটিজ়মের লক্ষণ দেখা দেওয়ার পরই যদি প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট দেওয়া যায়, তা হলে রোগের বাড়াবাড়ি হতে পারবে না বলেই দাবি গবেষকদের।
শিশুরোগ চিকিৎসক হিমানি নরুলা খন্না এই বিষয়ে জানিয়েছেন, অটিজ়মের নানা কারণ রয়েছে। এর মধ্যে যেমন জিনঘটিত কারণ আছে, তেমনই অনেক অসুখ থেকেও অটিজ়ম হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্রোমোজ়োমের সংখ্যার হ্রাস বা বৃদ্ধির কারণেও এই রোগ হয়। স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন কোষগুলির পারস্পরিক সংযোগ কমে যাওয়া অথবা স্নায়ু থেকে নিঃসৃত কিছু রাসায়নিক পদার্থের অভাব ইত্যাদি কারণেও এই রোগ হতে পারে। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে তার শারীরিক অবস্থার কোনও ত্রুটি থাকলে মস্তিষ্কের উপরে চাপ পড়ে। ফলে মস্তিষ্কের অভ্যন্তরীণ গঠন পরিবর্তিত হতে পারে। এ দেশে এই রোগ সম্পর্কে ধারণা কমই আছে। অনেকেই প্রাথমিক লক্ষণ বুঝতে পারেন না। অটিজ়মে আক্রান্ত শিশুর জন্য স্পিচ থেরাপি, নানা রকম কাউন্সেলিংয়ের পদ্ধতি আছে। তবে সবচেয়ে উপযোগী হল ‘প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট থেরাপি’ । অটিজ়ম আক্রান্তদের উপর প্রয়োগ করে দেখা গিয়েছে, রোগের তীব্রতা ৪৭.৭৭ শতাংশ কমে গিয়েছে। কেবল তা-ই নয়, কথাবার্তায় অসংলগ্নতা, অসংযত আচরণও কমতে দেখা গিয়েছে।
গবেষণা বলছে, পেটের সঙ্গেও মস্তিষ্কের সম্পর্ক রয়েছে, যাকে ‘গাট-ব্রেন সংযোগ’ বলে। ক্ষুদ্রান্ত্রে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ হতে থাকলে তার প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কেও। সে ক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক কাজে আসতে পারে। শরীরে যে কোনও রকম প্রদাহ কমাতে পারে প্রোবায়োটিক। স্নায়বিক উত্তেজনাও দমন করতে পারে। প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট অটিজ়মে কতটা কার্যকরী হতে পারে, তা নিয়ে গবেষণা এখনও চলছে। আরও অনেকের উপর প্রয়োগ করেই নিশ্চিত তথ্য দিতে পারবেন গবেষকেরা।