শিলিগুড়ির একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজন। —নিজস্ব চিত্র
মাছের মেনু
‘‘ভেটকি ভেবে কিনে আনলাম, মুখে তুলে বুঝলাম পাঙ্গাস’’! উত্তরবঙ্গের ভোজনরসিকদের এমন আক্ষেপ দীর্ঘ দিনের। এবারে ট্রেনে বিশেষ কন্টেনারে চাপিয়ে ভেটকি পৌঁছেছে শিলিগুড়িতে। সর্ষের বাটা মাখিয়ে কষে রেঁধে সেই ভেটকি মুড়ে দেওয়া হচ্ছে কলাপাতায়। কাঠি দিয়ে আটকানো কলাপাতা খুললেই ধোঁয়া ওঠা গন্ধ নেশা ধরিয়ে দেবে বলে বাজি ধরতে রাজি দেবতোষ পাল। শিলিগুড়িতে স্টেডিয়াম ক্যান্টিনের মেনুতে এবারের থিম-ই ‘ভেটকি’। কলাপাতায় মোড়া পাতুরি থেকে ফিশ ফিঙ্গার, ফিশ কবিরাজি, ফিশ ফ্রাই সব ভেটকির পদ। কর্তৃপক্ষ দাবি করলেন, রসিকজন চাইলে কালো জিরে দিয়ে ভেটকির ঝোলও মিলতে পারে। কলকাতার বনেদি ভেটকির সঙ্গে রয়েছে উত্তরবঙ্গের নদীয়ালি মাছের পদও। পেঁয়াজ-আলু-বেগুন ভেজে ট্যাংরার চচ্চড়ি, বোরোলির ঝালও রয়েছে মেনুতে।
চিংড়ি, পমফ্রেট
বিধানরোডের একটি হোটেল তো এ বারে চিংড়ি পরিবেশন করবে ডাবের ভিতরেই। ‘‘চিংড়ির মালাইকারি তো পুরোনো পদ, এবারে শিলিগুড়িকে ডাব চিংড়ি খাওয়াবো,’’ গর্বের সঙ্গে দাবি করলেন বিধান রোডের হোটেলের কর্ণধার বিপ্লব ঘোষ। গত বছর কাঁসার থালায় বাঙালি মেনু পরিবেশন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল শিলিগুড়িকে। পুজোয় মাছের পদ রান্নার জন্য মাস ছ’য়েক ধরে প্রস্তুতি চলেছে হোটেলের হেঁশেলে। তারপরেই স্থির হয়েছে ডাবচিংড়ি, পমপ্রেট তন্দুরির পদ। সামুদ্রিক মাছ পমফ্রেট দীর্ঘ দিন ধরেই হোটেলের মেনুতে রয়েছে। পুজোয় এবার বাঙালি খানার মধ্যে তন্দুরি উনুনে পমফ্রেটের পদও হয়েছে। ছ’মাসের গবেষণা শুধু এতেই সীমাবদ্ধ নয়। তেল কই এবং ভাপা ইলিশও রয়েছে।
কচি পাঁঠা, বৃদ্ধ মেষ
অষ্টমীর দুপুর বা নবমীর রাতে বাইরে খেতে যাওয়া চাই। আবার রেস্তোরাঁয় গিয়েও ছোটকা অথবা ন’পিসিমারা বলে ওঠেন, ‘‘সে কি, পাঁঠার মাংসে তোমরা আলু দাও না?’’ এবারে তাই মটন কষা বদলে গিয়েছে পাঠার মাংসে। কঁচি পাঠার মাংসের ঘন গ্রেভি থুড়ি ঝোল থেকে উঁকি দেবে পেল্লায় সাইজের আলু। মুরগির ঝোলের উপরে ছড়ানো থাকবে ধনে পাতা। পঞ্চমীর দুপুরে বিধান রোডের রেস্তোরায় ছিল মেনুর ট্রায়াল। হোটেলের রান্নার তদারকি করেন অন্যতম কর্ণধার লিপিকা ঘোষ নিজেই। তিনি জানালেন, বাজারে পাওয়া প্যাকেটজাত মিট মশলা রান্নায় দিলে মাংসের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। শিলনোড়ায় ভাঙা মশলা ছাড়া মাংসের ঝাঁঝ আসে না। সে কারণেই বাঙালি হেঁসেলের যাবতীয় নিয়ম মেনে এবার শিলমোড়ার বাটা মশলা, ‘কালার’ ছাড়া মশালা দিয়ে তৈরি হচ্ছে নানা পদ। লিপিকা দেবী বললেন, ‘‘এমন ভাবে এবারের মেনু তৈরি হয়েছে, যাতে রেস্তোরাঁয় কেতাদুরস্ত মেনুতেও বাঙালিয়ানা বজায় থাকে।’’ তবে চিকেন টপিং কাবাব অথবা চিকেন টেংরি কাবাব মুখে দিলে মহানন্দা পাড়ের শহরে বসে নবাবি মেজাজও আসতে পারে। খাদ্য রসিকদের লব্জে কঁচি পাঠার অনুষঙ্গে আসে বৃদ্ধ মেষের উপমা। হিলকার্ট রোডের একটি রেস্তোরায় এবার মেষ-মাংসের নানা পদের সম্ভার। ভেড়ার মাংসের কাবাব, স্টাফ আলু এবছরের আকর্ষণ।
মোগলাই, বিরিয়ানি, মিষ্টি ইত্যাদি...
মাংসের পদে মোঘলাই ঘরানার সমাদার এখনও অটুট। বিরিয়ানির ‘ইউএসপি’তো বিগ বি-র জনপ্রিয়তার মতোই সব মরসুমেই তুঙ্গে। বর্ধমান রোডের পাশে একটি জনপ্রিয় দোকানে ক্রেতাদের বসার জন্য পৃথক জায়গা করা হয়েছে। খাটানো হয়েছে সামিয়ানাও। চিকেন, মটন বিরিয়ানির সঙ্গে আয়োজন করেছে রেজালারও। রয়েছে কাবাবের হরেক মেনু। নিরামিষাশীদের জন্য পনিরের কাবাব এবং তন্দুরি বানিয়েছে সেবক রোডের একটি রেস্তোরাঁয়। সেবক রোডের তিন মাইলের একটি চিনা রেস্তোরাঁয় মাছের নানা পদের আয়োজন করেছে। বিশেষ আয়োজন রেখেছে ফ্রায়েড রাইস র্যাপার। চিকেন ফ্রায়েড রাইসকে ডিমের আস্তরণ দিয়ে মুড়ে ফেলা হবে। দেখে মনে হবে যেন একটি বড়সর অমলেট। কাটা চামচ দিয়ে ওমলেট ফুটো করলেই বের হতে শুরু করবে ফ্রায়েড রাইসের ঘ্রাণ। হিলকার্ট রোডের জনপ্রিয় চিনা রেস্তোরায় পর্কের বিভিন্ন পদই এবার পুজো স্পেশাল।
শেষপাতে রয়েছে মিষ্টিও। বিধান রোডের মিষ্টির দোকানে কড়া পাকের জলভরা অথবা হিলকার্ট রোডের একটি দোকান রাবড়ির নয়া রেসিপিতে প্রহর গুনছে উৎসব শুরুর।