Coronavirus

বিশ্ব এডস দিবস: লকডাউনে ওষুধ না পেয়ে মৃত্যু প্রায় ৫ লক্ষ রোগীর

আজ, ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এডস দিবসে এই ভাইরাসকে দুনিয়া থেকে মুছে ফেলার শপথ নেওয়ার দিন।

Advertisement

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২০ ১৬:০৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

কোভিড-১৯-এ কাবু বিশ্বের মানুষ এইচআইভি ভাইরাসের মহামারির কথা কিছুদিনের জন্যে ভুলে থাকলেও সেই ভাইরাসের দাপট যে খুব কমেছে, তা কিন্তু নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান বলছে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ৩৮০ লক্ষ মানুষ এডসের সঙ্গে সহবাস করছেন। এঁদের মধ্যে ৩ কোটি ৬২ লক্ষ পূর্ণবয়স্ক এবং ১৮ লক্ষ শিশু ( ১৫ বছরের কম বয়সি)। ২০১৯ সালে বিশ্বের প্রায় ১৭ লক্ষ মানুষ এডস আক্রান্ত হয়েছেন। আশার কথা, ২০১০ – ২০১৯— এই ৯ বছরে এইচআইভি সংক্রমণ কমেছে ২৩%। গত বছর ৬ লক্ষ ৯০ হাজার এডস আক্রান্তর মৃত্যু হয়েছে, যা ২০১০ সালে ছিল ১১ লক্ষ।

Advertisement

আজ, ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এডস দিবসে এই ভাইরাসকে দুনিয়া থেকে মুছে ফেলার শপথ নেওয়ার দিন। কোভিড অতিমারিতে অন্য অসুখের মতো এডসের চিকিৎসাতেও বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। জয়েন্ট ইউনাইটেড নেশনস প্রোগ্রাম অন এডস (ইউএনএডস)-এর পক্ষে জানা গেছে যে, লাগাতার লকডাউনের ফলে অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধ উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। টানা ৬ মাস ওষুধ না পাওয়ায় প্রায় ৫ লক্ষ এডস আক্রান্ত মারা গেছেন। তাই এ বছরের ওয়ার্ল্ড এডস ডে-র থিম ‘এন্ডিং দ্য এইচআইভি এপিডেমিক: রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড ইমপ্যাক্ট’। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ প্রকাশচন্দ্র মণ্ডল জানালেন, এডস অসুখটা প্রাণঘাতী বটে কিন্তু সকলের সচেতনতা আটকে দিতে পারে এডসের বাড়বাড়ন্ত। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হলেও গত ২৭ বছর ধরে এডস রোগীদের নিয়ে কাজ করছেন প্রকাশ। আশার কথা, ১৯৮৮ সাল থেকে লাগাতার প্রচারের ফলে আমাদের দেশে এইচআইভি-র সংক্রমণ প্রায় ৫০ – ৫৫% কমে গেছে বলে জানিয়েছে ন্যাকো অর্থাৎ ন্যাশনাল এডস কন্ট্রোল অরগানাইজেশন।

অনেক সময় অগোচরে এইচআইভি শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে মাস দেড়েক বা আরও বেশি দিন চুপচাপ বসে থাকতে পারে, জানালেন প্রকাশচন্দ্র মণ্ডল। সংক্রমণের পর অনেক সময় ভাইরাল ইনফেকশনের মতো জ্বর, সর্দি মাথাব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। সপ্তাহখানেক থেকে চলে যায়, আবারও হয়। এ ছাড়া গা ম্যাজ ম্যাজ করে, জ্বর আসে, মাথাব্যথা ও গা হাত পায়ে ব্যথা হতে পারে, নাগাড়ে কোনও কারণ ছাড়াই পেটের গোলমাল ও ডায়ারিয়া চলতে থাকে, বমি বা বমি বমি ভাব দেখা যায়, গলা ব্যথা করে। উপসর্গগুলোর সঙ্গে কোভিড-১৯ বা ভাইরাল ফিভারের কিছু মিল আছে। তবে লাগাতার এই ধরনের সমস্যা চলতে থাকলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষা করা উচিত। তবে অসুখ সম্পর্কে চিকিৎসককে কোনও তথ্যই গোপন করা উচিত নয়। রোগী যদি তাঁর জীবনযাত্রার কথা নিঃসঙ্কোচে চিকিৎসককে জানান, তবে সহজে অসুখটা নির্ণয় করা যায়। পরিবারে কারওর এই অসুখ থাকলে চিকিৎসককে তা-ও জানানো উচিত। এই সময় থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শে নির্দিষ্ট মাত্রায় অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধ খাওয়া শুরু করতে হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: অনিদ্রা সুস্থ জীবনের শত্রু

আরও পড়ুন: ফুসফুসের ক্যানসার প্রতিরোধ করতে ধূমপান ছেড়ে মাস্ককে সঙ্গী করুন

মেডিসিনের চিকিৎসক দীপঙ্কর সরকার জানালেন যে, প্রথম স্টেজে রোগটা ধরা না পড়লে এইচআইভি ক্রমশ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস করতে শুরু করে। এটাই এই অসুখের সব থেকে মারাত্মক দিক। এই সময়ে জ্বর আর জ্বর জ্বর ভাব ছাড়া আর বিশেষ কোনও উপসর্গ না থাকলেও রক্ত পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করা যায়। সঙ্গে সঙ্গে একত্রে কিছু ওষুধ খাওয়া ও রোজকার জীবনযাত্রায় কিছু রদবদল ঘটিয়ে ফেলতে পারলে সুস্থ থাকা যায়। ভাইরাস প্রতিরোধী কম্বিনেশন ড্রাগ শরীরের ধ্বংস হয়ে যাওয়া রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কিছুটা ফিরিয়ে আনতে পারে। তাই অসুখ গোপন না করে সঠিক তথ্য জানিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে সহযোগিতা করা উচিত বলে দীপঙ্কর সরকারের অভিমত। এই সময়েও যদি অসুখ ধরা না পড়ে তা হলে অন্ত্রের সমস্যা থেকে শুরু করে ফুসফুসের জটিল অসুখ-সহ আরও মারাত্মক কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। ক্যানসারের মতোই কোনও কারণ ছাড়া হু হু করে ওজন কমতে শুরু করে। সারাক্ষণ গা ম্যাজ ম্যাজ করে, কোনও কাজ করতে ভাল লাগে না। সব সময় ঘুম ঘুম ভাব, কোনও কাজে মনোযোগ দেওয়া যায় না। টানা ১০ দিন বা তারও বেশি সময় ধরে জ্বর চলতেই থাকে। জ্বরের ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক খেয়েও কাজ হয় না। একই সঙ্গে লাগাতার ডায়ারিয়া চলতে থাকে। শরীর ক্রমশ দুর্বল হতে শুরু করে, সামান্য পরিশ্রমে হাঁপ ধরে, নিশ্বাসের কষ্ট হয়। কোনও কারণ ছাড়াই শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তপাত হতে পারে। আবার হাঁটু, কোমর, পিঠ-সহ শরীরের বিভিন্ন অস্থিসন্ধিতে ব্যথা যন্ত্রণা হয়। নাগাড়ে শুকনো কাশি চলতেই থাকে। অ্যান্টিবায়োটিক বা ইনহেলারেও কাজ হয় না। বুকে সর্দি বসে গিয়ে ফুসফুসের সংক্রমণ ও নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

কয়েক বছর আগেও এডস আক্রান্ত হবার কয়েক বছরের মধ্যে রোগীর মৃত্যু হত। বিগত কয়েক বছরে অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি বা ওষুধ প্রয়োগ করে এইচআইভি আক্রান্তদের জীবনসীমা অনেক বাড়ানো গেছে। এডস আক্রান্তরা চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে ওষুধ ও পথ্য সহ জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে ১০ – ১৫ বছর বা তারও বেশি আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতোই জীবনযাপন করছেন। আজ বিশ্ব এডস দিবসে পোলিও ভাইরাসের মতো এই ভাইরাসকেও পৃথিবী থেকে বিদায় করে ভাল থাকার শপথ নিতে হবে সবাইকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement