অতিমারিতে বাড়ি বসেই শেয়ার বাজারে মন দিচ্ছেন মেয়েরা। ছবি: সংগৃহিত
অতিমারিতে অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। বাড়ি বসে রোজগারের নতুন রাস্তা খুঁজে নিয়েছেন তাঁদের মধ্যে একাংশ। মেয়েরা অনেকেই বেকারি খুলেছেন, হাতের কাজ করে অনলাইনে বিপণি শুরু করেছেন, নেটমাধ্যমে বস্ত্র বিপণি খুলেছেন। অনেকে আবার শুরু করেছেন হোম ডেলিভারির ব্যবসাও। কিন্তু তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কিছু ব্যতিক্রমী মহিলা। গতে বাঁধা ব্যবসার পথে না হেঁটে তাঁরা ঝুঁকেছেন শেয়ার বাজারে। আপাত ভাবে যে দুনিয়ায় পুরুষদের সংখ্যাই বেশি, তেমন পথ মেয়েরা কেন বেছে নিচ্ছেন? খোঁজ করল আনন্দবাজার ডিজিটাল।
কলকাতার মেয়ে ক্যামেলিয়া গত বছর লকডাউনে চাকরি হারিয়েছিলেন। তার পরেই তিনি স্বামীর কাছে ভুবনেশ্বরে চলে যান। হাতে যখন অনেকটা খালি সময় ছিল, তখন তাঁর মনে হয়েছিল, এমন কোনও পেশা বেছে নেওয়া ভাল, যাতে ভবিষ্যতেও বাড়ি বসে কাজ করা সম্ভব হয়। তখন তিনি শেয়ার বাজার বোঝার চেষ্টা শুরু করেন ইউটিউবের নানা ভিডিয়ো দেখেন। স্বামী এবং শ্বশুরের পরামর্শে তিনি মনোস্থির করেন শেয়ার বাজারে টাকা খাটানোর বিষয়টি। তার পরে আরও বেশি পড়াশোনা করবেন তিনি। ‘‘ইলার্ন মার্কেট নামে এক অনালাইন প্ল্যাটফর্মে আমি কোর্স শুরু করি। প্রথম দিকে ক্লাসে কিছুই বুঝতে পারতাম না। বারবার মনে হয়েছিল, ছেড়ে দিই আমার দ্বারা হবে না। কিন্তু এখন আমার অনেকটাই উৎসাহ বেড়ে গিয়েছে। বুঝতে শিখেছি এই বিষয়ের পরিসর অনেক বড়। আরও বেশি পড়াশোনা করছি। এখন কোথায় লগ্নি করব, কোথায় করব না অনেক বেশি বুঝতে শিখেছি। আগে সহকর্মী বা অন্য কেউ কিছু বললে, সেখানেই টাকা খাটাতাম। এখন নিজেও খুঁটিয়ে ভেবে দেখি, লাভ-ক্ষতি বোঝার চেষ্টা করি, তার পরেই সিদ্ধান্ত নিই,’’ বললেন ক্যামিলা।
গত বছর অতিমারিরে জেরে দেশের অর্থনীতির যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছিল, এবং চাকরির বাজারে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল, তার রেশ এখনও কাটেনি। অনেকেই বুঝে গিয়েছেন ভবিষ্যত সুরক্ষিত করতে টাকা বিনিয়োগ করা আরও বেশি করে প্রয়োজন। তাই বহু মানুষ এই বিষয়ে ইউটিউবে ভিডিয়ো দেখা শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মেয়েরাও। নেটমাধ্যমে প্রচুর বিনিয়োগের অ্যাপ রয়েছে, সেখান থেকে শেয়ার বাজারে কাজ করা সুবিধে হয়ে গিয়েছে। ফোনেই এখন শেয়ার বাজারের চোখ রাখা, বিভিন্ন সংস্থার শেয়ার কেনা এবং বিনিয়োগ করা সহজ হয়ে গিয়েছে। তেমনই একটি অ্যাপের কর্মকর্তা বিনীত পটওয়ারি জানালেন, অতিমারিতে তাঁর অ্যাপ অনেক বেশি সংখ্যায় মানুষ ব্যবহার করছেন। তাঁদের মধ্যে ২৫-৩০ শতাংশ মহিলা। এমনকি, তাঁদের মধ্যে অনেকেই ছোট শহর বা শহরতলির বাসিন্দা। ‘‘এত মহিলা শেয়ার বাজারে উৎসাহ প্রকাশ করছেন দেখে আমরা মহিলাদের জন্য কিছু বিশেষ কোর্সও শুরু করেছি। যাতে তাঁদের আর্থিক বিষয় নিয়ে জ্ঞান অর্জনে কোনও রকম অসুবিধা না হয়,’’ বললেন বিনীত।
শেয়ার বাজার নিয়ে এমনিতেই মধ্যবিত্তের মধ্যে একটি ভীতি রয়েছে। এলআইসি এবং মিউচুয়াল ফান্ড ছাড়া তাঁরা খুব একটা বিনিয়োগের পথে হাঁটেন না তাঁরা। তার উপরে মেয়েদের বহু যুগ ধরে ধারণা, শেয়ার বাজার মানেই সেটা পুরুষদের জায়গা। মেয়েদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু পরিস্থিতি এখন অনেকটাই বদালাচ্ছে।
হায়দরাবাদের গৃহবধূ অনিতা রানি বহু বছর ধরেই শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করছেন। অতিমারিতে তিনি আরও বেশি ঝুঁকেছেন এই দিকে। তাঁর কথায়, ‘‘মার্কেট একবার বুঝে গেলে, কোনও ভয়ের কারণ নেই। নিজেই বুঝতে পারবেন কখন কোন জায়গায় টাকা লগ্নি করা উচিত, কখন নয়। স্টকএজ বলে একটা অ্যাপের মাধ্যমে আমি এখন শেয়ার বাজারে কাজ করি। প্রযুক্তি এখন কত কিছু হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। তা হলে মেয়োরই বা কেন পিছিয়ে থাকবেন?’’