—প্রতীকী চিত্র।
চাহিদা থাকলেও অভাব পর্যাপ্ত চিকিৎসকের। শিশু-মৃত্যুর নেপথ্যে এই সমস্যা প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষ কারণ বলে মনে করছেন শিশু শল্য চিকিৎসকেরা। সারা দেশের মতো এই রাজ্যেও আছে সেই সমস্যা। আজ, শুক্রবার শিশু শল্য চিকিৎসা দিবসে দেশ জুড়ে চিকিৎসকদের দাবি, শিশুরোগীর অনুপাতে থাকুন শিশু শল্য চিকিৎসক।
কিন্তু দেশ তথা এ রাজ্যে সেই সমস্যা কবে মিটবে, তা নিয়ে সংশয়ে খোদ চিকিৎসকেরাই। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের নিয়মে বলা রয়েছে, সমস্ত মেডিক্যাল কলেজে যত সংখ্যক শল্য চিকিৎসার শয্যা থাকবে, তার ১০ শতাংশ থাকতে হবে শিশু শল্য চিকিৎসা বিভাগের জন্য। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি বলছে, রাজ্যে নতুন শিশু শল্য চিকিৎসকের সংখ্যা ক্রমশ কমছে। যেমন, কলকাতার তিন চিকিৎসা-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান— নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ, এসএসকেএম এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মিলিয়ে শিশু শল্য চিকিৎসার এমসিএইচ কোর্সে মোট আসন ১৩টি। ২০২৩-এ তার মধ্যে আসন ভর্তি হয়েছে ৬টি! ‘পেডিয়াট্রিক্স সার্জারি অ্যাসোসিয়েশন, ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এর সভাপতি চিকিৎসক দীপক ঘোষ বলেন, ‘‘আসন ফাঁকা থাকার প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। তাতেই সমস্যা বাড়ছে। আমাদের লক্ষ্য, প্রতিটি জেলাতেই শিশু শল্য চিকিৎসক থাকুক।’’
শহরের শিশু শল্য চিকিৎসকদের একাংশের কথায়, ‘‘পর্যাপ্ত শিশু শল্য চিকিৎসক না থাকায় জন্মগত ত্রুটি সংক্রান্ত সমস্যায় অস্ত্রোপচারে বিলম্ব হচ্ছে। তাতে অনেক ক্ষেত্রেই বাড়ছে ঝুঁকি।’’ তাঁরা জানাচ্ছেন, দেশের মোট জনসংখ্যার অন্তত ৪০ শতাংশই শিশু। তার মধ্যে প্রায় ১৮ শতাংশের, অর্থাৎ ১০-১২ কোটি শিশুর জন্মগত ত্রুটি-সহ অন্যান্য কারণে শল্য চিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু দেশে এখন পুরোপুরি কর্মরত শিশু শল্য চিকিৎসকের সংখ্যা ১৬০০ মতো। এ রাজ্যে সেই সংখ্যা ৫৫-৬০ জন (সরকারি স্তরে মেরেকেটে ৩০-৩৫ জন)। যেখানে রাজ্যের মোট জনসংখ্যার অন্তত ৪ কোটি শিশু ও তার মধ্যে প্রায় ৭০ লক্ষ শিশু রোগী। ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব পেডিয়াট্রিক্স সার্জন’-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার সম্পাদক চিকিৎসক সুজয় পালের কথায়, ‘‘শিশু রোগীর অনুপাতে শিশু শল্য চিকিৎসকের হার অত্যন্ত কম। জাতীয় শিশু শল্য চিকিৎসা দিবসে আমাদের দাবি, রাজ্যের প্রতিটি জেলায় ওই বিষয়ে নির্দিষ্ট চিকিৎসক থাকুন। এই দাবির মূল কারণ, যাতে ভিন্ জেলার থেকে আসা শিশু রোগীকে অস্ত্রোপচারের জন্য দীর্ঘ দিন শহরের হাসপাতালগুলিতে ঘুরে সময় নষ্ট না করতে হয়।’’
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, জাতীয় দিবস উদ্যাপনে দেশ জুড়ে তাঁদের দাবি, প্রতিটি জেলার মেডিক্যাল কলেজে শিশু শল্য চিকিৎসার সংখ্যা বাড়াতে হবে। নিজের জেলাতেই যাতে কোনও শিশু রোগী পরিষেবা পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। সে জন্য এমসিএইচ পাশ করার পরে বন্ড সার্ভিস না রাখা, বা রাখলেও তা স্বল্প সময়ের জন্য এবং জেলার মেডিক্যাল কলেজগুলিতে পোস্টিংয়ের জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামোর দাবি তুলছে শিশু শল্য চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন।