বহু মানুষের ভরসার জায়গা হতে চলেছে এই হাসপাতাল। —নিজস্ব চিত্র।
দক্ষিণেশ্বর মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে বসিরহাটের জন্য এক গুচ্ছ স্বাস্থ্য পরিষেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট, পিপিপি মডেলে ডায়ালিসিস ইউনিট, এসএনসিইউ এবং স্টেপ ডাউন ইউনিট চালু করা হয়। বাচ্চার মায়ের থাকার ঘর, মাদার ডেয়ারি পরিচালিত কিওস্ক-এর উদ্বোধন হয়েছে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে এই ইউনিটগুলি পুরোপুরি টালু হয়ে যাবে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
এ দিন অনুষ্ঠান উপলক্ষে হাসপাতালে এসেছিলেন সাংসদ ইদ্রিশ আলি, বসিরহাট উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক এটিএম আবদুল্লা রনি, জেলার উপমুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিব্যেন্দু চক্রবর্তী, স্বাস্থ্য আধিকারিক পুষ্পেন্দু সেনগুপ্ত, সুপার শ্যামল হালদার, পুরপ্রধান অতসী আন, কাজি নজরুল ইসলামের পৌত্র সুবর্ণ কাজি, আইসি গৌতম মিত্র প্রমুখ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, খুব শীঘ্রই তিনশো শয্যা বিশিষ্ট মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল এবং মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাবের কাজও শুরু হবে।
সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছায় বসিরহাট শহরকে সাজাতে জেলাশাসকের দফতরে সাংসদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্তাদের নিয়ে বৈঠক হয়। মূলত বসিরহাট পুরসভা এবং পার্শ্ববর্তী পঞ্চায়েতে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল, রাস্তা, ট্র্যাফিক ব্যবস্থা, জলনিকাশি ব্যবস্থা এবং জেলা হাসপাতালের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানেই ঠিক হয়, বসিরহাটকে সাজাতে ৩০০ কোটি টাকা খরচ করবে রাজ্য সরকার। এরপরেই শুরু হয় রাস্তা, পানীয় জল, মোটেল, মডেল হাট, আলো এবং হাসপাতালের নানা উন্নয়নমুখী কাজ। ইদ্রিশ বলেন, “২০১৩ সালের মে মাসে বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলা শুরু হয়। মাত্র দেড় বছরের মধ্যে বসিরহাট জেলা হাসপাতালের এই উন্নতির পরেও কি কেউ বলবেন সরকার উন্নয়নের কাজ করছেন না?”
সাংসদ আরও বলেন, “হাসপাতালে একটা বাক্স রাখা হয়েছে। দালাল চক্র থেকে হাসপাতালের কর্মীদের আচরণ যে কোনও বিষয়ে কোনও অভিযোগ থাকলে তা লিখে ওই বাক্সে ফেলুন। আমরা তার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।” হাসপাতাল চত্ত্বরে যাতে কোনও রকম অসামাজিক কাজ না হয়, মদের আসর না বসে, সে সব দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে বলেন তিনি। ওষুধপত্রের জোগান নিয়েও সজাগ থাকার পরামর্শ দেন।
স্বাস্থ্য আধিকারিক পুষ্পেন্দু সেনগুপ্ত জানান, ১ কোটি ৬৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ১২ শয্যার ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট ছাড়াও একই সঙ্গে উদ্বোধন হল ১২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পিপিপি মডেলের ৫ শয্যাবিশিষ্ট ডায়ালিসিস ইউনিট। ৩৩ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা ব্যয়ে তৈরি হয়েছে ১২ শয্যার এসএনসিইউ এবং স্টেপ ডাউন ইউনিট, বাচ্চার মায়ের থাকার ঘর। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে রাজ্যের মেডিক্যাল সার্ভিস কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে ৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনশো শয্যার মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাব ও তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন পুষ্পেন্দুবাবু। নতুন পরিকাঠামোয় রোগীকে খুব প্রয়োজন না পড়লে আর কলকাতায় পাঠানোর দরকার থাকবে না বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। বার্ন ইউনিটের প্রয়োজনীয়তা জেনে এ দিনই সাংসদ তাঁর তহবিল থেকে ২০ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।