চিকিৎসায় ডাক্তারবাবু গাফিলতি করেছেন বলে অভিযোগ।
মনোরোগী বার-বার পোশাক খুলে ফেলছেন বলে তাঁকে শুধু অন্তর্বাস পরিয়ে রাখা হল।
রোগীকে ভাল খাবার দেওয়া হল না বা মারধর, শ্লীলতাহানি করা হল।
সরকারি মানসিক হাসপাতালে ওঠা এ রকম অজস্র অভিযোগে এ বার সেই হাসপাতাল চত্বরেই আইনি পরামর্শ পাবেন রোগী ও তাঁর পরিজনেরা। পাবেন অনির্দিষ্টকাল মামলা চালানোর জন্য নিখরচায় আইনজীবীও। এ ছাড়া হাসপাতালের বাইরে, বাড়িতে মনোরোগীকে মারা, বেঁধে রাখা, খেতে না-দেওয়া, সুস্থ হয়ে গেলেও হাসপাতালে রাখা, বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া, ডিভোর্সের চেষ্টা, সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার মতো সমস্যাতেও হাসপাতালের আইনি সহায়তা কেন্দ্র সাহায্য করবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা ‘লিগাল এড সার্ভিস’ বা ‘আইনি সহায়তা পরিষেবা’ কর্তৃপক্ষের সাহায্যে ৯ নভেম্বর পিজি-সংলগ্ন ‘ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রি’ (আইওপি)-তে প্রথম কেন্দ্রটি কাজ শুরু করেছে। স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, এই পরিষেবা রাজ্যের বাকি মানসিক হাসপাতালগুলোতেও শুরু হবে।
মানসিক হাসপাতালের ভিতরেই এই পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা কেন? দক্ষিণ ২৪ পরগনা লিগাল এড পরিষেবা-র সচিব অরিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মনোরোগীরা অনেকেই বঞ্চনা বুঝতে পারেন। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়ার মতো পরিস্থিতি থাকে না। থাকে না অর্থবলও। হাসপাতালেই নিখরচায় আইনি পরামর্শ ও সহযোগিতা পেলে অধিকারের জন্য লড়তে সুবিধা হবে।’’ আইওপি-র অধিকর্তা প্রদীপ সাহার মন্তব্য, ‘‘বাড়িতে এক জন মনোরোগী থাকলে পরিবারের সামাজিক অবস্থান, আর্থিক অবস্থা, নিরাপত্তা, আবেগ— সবই নড়বড়ে হয়ে যায়। তখন পরিবারের অন্য সদস্যদেরও অনেক সময়ে আইনি পরামর্শ লাগে।’’ ৯ নভেম্বর আইওপি-র কেন্দ্রে এসেছিলেন ডায়মন্ড হারবারের বাসিন্দা ‘বাইপোলার ডিসর্ডার’-এর রোগী মণীশকুমার নস্কর ও তাঁর মা সুমিতাদেবী। মণীশবাবু বেশ কিছু দিন ধরে আইওপি-র আউটডোরে দেখান। সম্পত্তির উত্তরাধিকার প্রসঙ্গে সাহায্য চাইতে আসা সুমিতাদেবীর কথায়, ‘‘আমার ছেলে কখনও ভাল থাকে, কখনও খারাপ। ঠিক থাকলে সম্পত্তি ওর নামে লিখে দিতে চাপ দেয়। কী করব ভেবে পাচ্ছি না।’’ লিগাল এড-এর পরামর্শদাতারা তাঁকে সম্পত্তি নিজের নামে রাখতে বলেন। তাঁর মৃত্যুর পরে সম্পত্তি মণীশবাবু পাবেন, তা উইল করতে বলেন। লিগাল এ়ড থেকে নিখরচায় আইনজীবী দিয়ে উইল বানিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্যকর্তাদের কথায়, এই উদ্যোগে সুস্থ হওয়া রোগীকে হাসপাতালে ফেলে রাখা বা বাড়িতে ঢুকতে না-দেওয়ার ঘটনা কমবে। তাতে সরকারি মানসিক হাসপাতালগুলিতে অযথা শয্যা আটকে থাকার হারও কমবে। তবে মনোরোগীদের অধিকার আন্দোলনের কর্মী রত্নাবলী রায় বলেন, ‘‘পাভলভ বা লুম্বিনী থেকে এই পরিষেবা শুরু হলে ভাল হতো, কারণ সেখানে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি।’’ তাঁর মতে, সুস্থ রোগীদের পুনর্বাসনে সরকার কিছুই করতে পারেনি। তা না হলে শুধু আইনি সহায়তায় বিশেষ লাভ হবে না। স্বাস্থ্যভবনের কর্তারা অবশ্য জানান, আইওপি-র ইন্ডোরে রোগী কম হলেও আউটডোরে দিনে ৭০০-র বেশি রোগী আসেন। এটি মানসিক রোগের চিকিৎসার একটি উৎকর্ষ কেন্দ্রও বটে। তাই এখানে প্রথম পরিষেবা চালু হল। তবে রোগীদের পুনর্বাসনে আশ্বাস তাদের তরফে এখনও মেলেনি।