Film Festival

সিনেমাই কাছাকাছি আনবে, তিন দিনের চলচ্চিত্র উৎসবে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে ‘প্রত্যয়’

‘প্রত্যয়’ তৈরি হওয়ার পর থেকেই এই আবাসন নানা ভাবে মনোরোগ থেকে সেরে ওঠা মানুষদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত। সেখানেই হচ্ছে তিন দিনের চলচ্চিত্র উৎসব।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২৩ ১৮:৩৬
Share:

‘প্রত্যয়’-এর চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হয়েছে মঙ্গলবার থেকে। চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। — নিজস্ব চিত্র।

শিল্পের খাতিরে তো চলচ্চিত্র উৎসব হয়েই থাকে। কান থেকে কলকাতা, নানা শহরেই করা হয় আয়োজন। মানবাধিকার, লিঙ্গবৈষম্য, পরিবেশ, নানা বিষয় নিয়ে সচেতনতা ছড়াতেও চলচ্চিত্র উৎসব করা হয়। তার মাধ্যমে সামাজিক আদানপ্রদান তো হয়ই। তবে এ চলচ্চিত্র উৎসব একটু আলাদা।

Advertisement

সচেতনতার ভাবনা আছে। তবে এ ক্ষেত্রে তা বাছাই করা ছবির মাধ্যমে বোঝা যাবে না। ‘তিন কন্যা’ থেকে ‘শোলে’, ‘জন অরণ্য’ থেকে ‘ব্যাটম্যান’— সব রয়েছে এই উৎসবের ফিল্মের তালিকায়। তবে এর বিশেষত্ব কী? আর পাঁচটি চলচ্চিত্র উৎসবের থেকে কি আদৌ আলাদা এটি? এখানে মনোরোগ থেকে সেরে ওঠা একদল নারী-পুরুষের উদ্যোগে বাছা হয়েছে কয়েকটি ছবি। বন্ডেল রোড এলাকার ‘প্রত্যয়’-এর আবাসিক ওঁরা। সিনেমা দেখা বিশেষ হয় না। এ বার একসঙ্গে অনেকে মিলে বসে সিনেমা দেখার ব্যবস্থা করে ফেলেছেন নিজেরাই। এমন উদ্যোগ আগে এ শহরে বিশেষ দেখা যায়নি বলেই জানালেন মনোসমাজকর্মী রত্নাবলী রায়।

বাড়ি বাড়ি গিয়ে সকলকে উৎসবে যোগ দেওয়ার জন্য বলে এসেছেন কোয়েলরা। — নিজস্ব চিত্র।

‘প্রত্যয়’ তৈরি হওয়ার পর থেকেই এই আবাসন নানা ভাবে মনোরোগ থেকে সেরে ওঠা মানুষদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত। আবাসিকদের কাজ থেকে সামাজিক মেলামেশা, সবের জন্যই নানা ভাবনা আছে এখানে। এ বার সে ভাবনার অঙ্গ হিসাবেই চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্যোগ। ‘প্রত্যয়’-এর প্রজেক্ট ম্যানেজার অভিজিৎ রায় জানান, মূলত তিন আবাসিক, সৌগত চৌধুরী, অনির্বাণ পাল এবং কোয়েল চক্রবর্তীর চেষ্টায় হচ্ছে এই উৎসব। তবে পোস্টার তৈরি থেকে বসার জায়গা সাজানো, নানা কাজে তাঁদের সঙ্গ দিয়েছেন বাকি আবাসিকরা। অভিজিৎ বলেন, ‘‘এই উৎসব আবাসিকদের একে অপরের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ যেমন দিচ্ছে, তেমন ‘প্রত্যয়’-এর বাইরের জগতের সঙ্গে আদানপ্রদানও হচ্ছে।’’

Advertisement

চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হয়েছে মঙ্গলবার থেকে। চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। ইতিমধ্যেই উৎসবে এসে ছবি দেখে গিয়েছেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের নার্সরা। এসেছেন গুরুদাস কলেজ, সরোজিনী নাইড়ু কলেজ, মিত্র ইনস্টিটিউশন স্কুলের পড়ুয়ারা। বন্ডেল রোড এলাকার বাসিন্দাদেরও নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সকলকে উৎসবে যোগ দেওয়ার জন্য বলে এসেছেন কোয়েলরা। আবার তাঁদের সঙ্গে বসে ছবি দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন স্কটিশচার্চ কলেজের ছাত্রছাত্রীরাও। ওই কলেজের শিক্ষিকা সেমন্তী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার মনে হয় এই উৎসবে ছাত্রছাত্রীরা অংশ নিলে সামাজিক দূরত্ব কিছুটা ঘুচবে। মনোরোগ নিয়ে সমাজে এখনও নানা ধরনের ধারণা রয়েছে। কিছুটা আমরা-ওরার দূরত্ব আছে। তা দূর করা তো প্রয়োজন। পড়ুয়ারা যত সমাজের অন্য প্রান্তে থাকা মানুষের কাছে যাবে, ততই ওদের দেখার চোখ উন্নত হবে।’’

ইতিমধ্যেই উৎসবে এসে ছবি দেখে গিয়েছেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের নার্সরা। — নিজস্ব চিত্র।

তবে এই চলচ্চিত্র উৎসব কি শুধুই দূরত্ব ঘোচানোর কাজ করছে? তা-ও নয়। ‘প্রত্যয়’-এর এক আবাসিক সে কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। উৎসবে ‘শোলে’ দেখেছেন তিনি। তার পর অন্য আবাসিকদের বলেছেন, ‘‘এখানে যেমন দেখলাম, এক জন জীবন থেকে চলে গেলে ঠিক আর এক জন সেই জায়গা পূরণ করে দেয়, তেমনই আমার জীবনে মা-বাবা না থাকলেও আপনারা আছেন।’’

‘প্রত্যয়’-এর আবাসিকদের এই উদ্যোগ দেখে আশাবাদী মনোসমাজকর্মী রত্নাবলীও। তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যয়ে সিনেমা দেখা, ক্যারম খেলা বা রুমাল চোর খেলা, সব কিছুকেই আমরা বিনোদনের জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে করি। এই যে, পোস্টমাস্টার সিনেমাটা দেখে, এক জন মনে করতে পারলেন, তাঁর বাবা তাঁকে ছোটবেলায় গল্পটা বলেছিলেন, সেটা এই বিনোদন কর্মসূচির একটা বড় পাওনা। সিনেমাটার এক্সটেন্ডেড অভিজ্ঞতায় তার ফলে, সেই মানুষটির ছোটবেলা ঢুকে গেল, ছোটবেলার প্রিয় মানুষরা ঢুকে এলেন। ঠিকঠাক অর্থে এটা তো ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল নয়, একটা ফিল্ম ক্লাব অ্যাক্টিভিটি বলা যেতে পারে। চলচ্চিত্র শুধু নয়, সিনেমা-নাটক-ভিস্যুয়াল আর্ট পারফরমেন্স-লেখালেখি-ছবি আঁকা, এই সবের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের ডেমনস্ট্রেশন-ডেপিকশন নিয়ে আমরা একটা কর্মশালা করতে চাই। সেটা আর এক রকমের কালচারাল অ্যাক্টিভিটি হবে। প্রত্যয়ের যে সকল আবাসিক সাহিত্য-সিনেমা সম্পর্কে একটু বেশি অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের সুযোগ পেয়েছেন, তাঁরা এটি শুরু করতে উদ্যোগী হয়েছেন। উদ্যোগটা দাঁড়িয়ে গেলে অন্যরাও শামিল হবেন, তাঁদের পছন্দের সিনেমার তালিকা তৈরি করবেন। আমরাও আমাদের কোনও সাজেশন থাকলে জানাব। পরামর্শগুলো আবাসিকদের পছন্দ হলে তাঁরা গ্রহণ করবেন, বা করবেন না। কিন্তু উদ্‌যাপনটা তাঁদের মতো করেই হতে হবে। অঞ্জলি থেকে আমরা শুধু জোগানদারের কাজ করব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement