Dance

Mallika Sarabhai: নেতারা নাচ শিখলে রাজনৈতিক দূরত্ব ঘুচবে, মনও ভাল থাকবে: মল্লিকা সারাভাই

অতিমারির পর প্রথম কলকাতায় অনুষ্ঠান করছেন মল্লিকা সারাভাই। আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে একান্ত কথোপকথনে বসলেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২২ ১৭:১০
Share:

আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে একান্ত কথোপকথনে মল্লিকা সারাভাই।

নাচ শুধু মঞ্চের জন্য নয়। দৈন্দিন জীবন সুন্দর করে তুলতে পারে শিল্পের এই মাধ্যম। ঘোচাতে পারে লিঙ্গ, ধর্ম, রাজনীতিকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া দূরত্ব। কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে একান্ত কথোপকথনে এমন মন্তব্য করলেন শিল্পী মল্লিকা সারাভাই।

বছর তিন পর ফের কলকাতায় অনুষ্ঠান করছেন মল্লিকা। অতিমারির এই ক’বছরে অনেক বদলে গিয়েছে জীবন। এখন কাজের ধরন বদলেছে। দর্শকের সামনে নাচ পরিবেশন করা তো হয়েই ওঠে না। তাই কলকাতায় আসতে পেরে খুশি নৃত্যশিল্পী। মল্লিকা বলেন, ‘‘কলকাতার দর্শককে আমার সব সময়েই ভাল লাগে। এখানে বহু মুক্ত চিন্তার মানুষ থাকেন। নাচ এমন একটি শিল্পমাধ্যম, যা মনে মুক্তির ভাব আনে। খোলা মনের দর্শক তাই এই শিল্পকে বেশি আপন করে নিতে পারেন।’’

মুক্ত চিন্তার প্রসঙ্গ শিল্পীর খুব কাছের। রাজনৈতিক হোক বা সামাজিক, মল্লিকাকে সব সময়েই দেখা গিয়েছে স্বাধীন ভাবনা, মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে ঋজু মন্তব্য করতে। করোনার সময়ে যখন শিল্পচর্চার সঙ্গে যুক্ত অনেকে মন খারাপ করেছেন কাজের ধরন বদলে গিয়েছে ভেবে, সে সময়টিও মল্লিকা ব্যবহার করেছেন বৃহত্তর সমাজের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখতে। অনলাইনে নাচ শিখিয়েছেন। শুধু অল্পবয়সি মেয়েদের নয়। ৪০ পেরনো পুরুষ, ৬৫ পার করা গৃহবধূরাও এখন দেশের নানা প্রান্ত থেকে যোগ দিয়েছে মল্লিকার প্রতিষ্ঠান ‘দর্পণা অ্যাকাডেমি অব পার্ফর্মিং আর্টস’-এর ক্লাসে। নতুন এই শিক্ষার্থীদের নিয়ে উৎসাহী মল্লিকা। বলে চলেন, ‘‘আমরা আগে অনেক সময়ে চেষ্টা করেছি সকলের মধ্যে নাচ শেখার উৎসাহ বাড়াতে। এখন আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এবং জীবনযাত্রায় যে তা প্রভাব ফেলছে, তা-ও স্পষ্ট।’’

Advertisement

মল্লিকা সারাভাই।

কী ভাবে নৃত্যশিক্ষা প্রভাবিত করছে বয়স্ক শিক্ষার্থীদের জীবন?

মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নাচের প্রভাবের কথা বোঝাতে থাকেন মল্লিকা। বলেন, ‘‘শরীর সুস্থ রাখা, চেহারা সুন্দর করা, চলা-বসার ভঙ্গিতে শৈল্পিক ছোঁয়া আনার মতো নানা কথা তো হয়েছেই নাচ নিয়ে। তবে মানসিক স্বস্তি যে এনে দিতে পারে নাচ, তাও মনে রাখা দরকার।’’ মল্লিকা জানান, মানসিক চাপ, উদ্বেগের মতো সমস্যা থেকে অনেক সহজে মুক্তি দিতে পারে নিয়মিত নাচের অভ্যাস। নাচ শরীর নিয়েও সহজ হতে শেখায়। নিজের শরীরকে ভালবাসতে শেখায়। আর নিজের শরীর ঘিরে অস্বস্তি যত কম থাকবে, মানসিক অস্থিরতাও কমে। গুজরাতে পুরসভার বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকদের জন্য ‘নৃত্য পরিচয়’ বলে একটি কর্মশালা চালিয়েছিলেন মল্লিকা। সে প্রসঙ্গে বলতে শুরু করলেন তিনি। বলেন, ‘‘পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে নাচের কর্মশালায় অংশগ্রহণ করতে হত তখন। সেখানে প্রথমে পুরুষ শিক্ষকরা বলতেন তাঁরা পারবেন না। তাঁদের ছেড়ে দিতে। দু’-তিন সপ্তাহ যেতে না যেতেই পরিস্থিতি বদলে গেল। রাস্তার মাঝে মোটরবাইক থামিয়েও ভিডিয়ো কলে নাচের কর্মশালা করেছেন। আসলে নাচের সময়ে অক্সিটোসিন, ডোপামাইনের মতো পদার্থের প্রভাব শরীরের উপর বাড়ে। তাতে মন ভাল হয়। পারিপার্শিক নিয়েও অস্বস্তি কাটে।’’ এর মাধ্যমে রাজনৈতিক মতাদর্শের দূরত্বও ঘুচতে পারে বলে মনে করেন নৃত্যশিল্পী।

Advertisement

নাচের গুণে আরও নানা দিক দিয়ে সুন্দর হতে পারে জীবন। যেমন বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে দূরত্ব ঘুচতে পারে। কী ভাবে তা সম্ভব? মল্লিকা বলেন, ‘‘আমি গুজরাতের ছাত্রীকে মিজোরামের নাচ শেখাই, মাহারাষ্ট্রের ছাত্রকে পুরুলিয়ার ছৌ নাচ শেখাই। এতে যে শুধু হাত-পায়ের ভঙ্গি আর মুদ্রা শিখছে, তা তো নয়। সঙ্গে অন্য একটি অঞ্চলের সংস্কৃতির সঙ্গেও পরিচয় ঘটছে।

নেতারাও তবে নাচ শিখলে কি ভাল হত?

প্রসঙ্গটি মল্লিকার মনের মতো হয়েছে যেন! বলেন, ‘‘এমনটা হলে তো কথাই ছিল না। এই যে নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাতে ধর্ম কিংবা অঞ্চলের বিভিত্ততে বিভাজন তৈরি হয়। মানুষের মধ্যে দূরত্ব ছড়ায় এর ফলে। নাচ শিখলে অন্যকে বুঝতে সুবিধা তো হবেই। তাতে অবশ্য দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ উন্নত হতে পারে।’’ তাঁর আশা, আগামীতে নৃত্যশিক্ষা আরও ছড়াবে। সমাজ সুন্দর হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement