পুতুল খেলার বয়সে কেন শিশুকন্যাদের সঙ্গী হচ্ছে স্যানিটারি প্যাড? —প্রতীকী ছবি।
শিশুকন্যার বড় হয়ে যাওয়ার প্রথম লক্ষণ হল ঋতুস্রাব শুরু হওয়া। সাধারণত ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সেই মেয়েদের প্রথম ঋতুচক্র শুরু হয়। তবে ইদানীং ছবিটা অনেকটাই বদলেছে। সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের সাতারা অঞ্চলের একটি ৬ বছরের কন্যার ঋতুস্রাব শুরুর ঘটনা চিন্তা বাড়িয়েছে চিকিৎসক মহলে। পাশাপাশি চিন্তা বাড়ছে বাবা-মায়েদেরও।
৬ বছর বয়সি শিশুকন্যার ঋতুস্রাব শুরু ঘটনায় অবাক হয়েছেন সাতারার সিটি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। ঋতুস্রাবের পাশাপাশি ওই শিশুর শরীরে ভারী স্তন ও যৌনাঙ্গে রোমের আধিক্যও লক্ষ করা গিয়েছে বলে দাবি করেছেন চিকিৎসকেরা। তিন মাস আগে শিশুর বাবা-মা তার শরীরে বেশ কিছু বদল লক্ষ করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। ৬ বছরের কন্যার কী ভাবে ঋতুস্রাব শুরু হল, তা বুঝেই উঠতে পারছিলেন না তার বাবা-মায়েরা। বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষানিরীক্ষা করার পর চিকিৎসকেরা জানান, শিশুর বাড়ির ক্ষেতে অত্যধিক মাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহারের কারণে ওই শিশুর শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়েছে। আর সেই কারণেই সময়ের আগেই শিশুর ঋতুস্রাব শুরু হয়েছে।
কেন শিশুকন্যাদের ঋতুস্রাবের সময় এগিয়ে আসছে?
কোনও শিশুটির বংশের কোনও মহিলা, যেমন মা-মাসি-পিসিদের খুব ছোট বয়সে ঋতুচক্র শুরু হলে তার মধ্যেও সেই সম্ভাবনা এগিয়ে আসে। স্ত্রীরোগ চিকিৎসক সঞ্জীব দত্তের বলেন, “ঋতুস্রাবের সূচনা তাড়াতাড়ি হওয়ার নেপথ্যে অনেকগুলি কারণ থাকে। তার মধ্যে জিনগত কারণও একটি। অনেক ক্ষেত্রেই জেনেটিক প্রি-ডিসপোজ়িশন থাকে। তবে নির্ধারিত বয়সের অনেকটা আগে ঋতুচক্র শুরু হয়ে যাওয়া মানেই কিন্তু তা জিনগত নয়। এর নেপথ্য আরও অনেকগুলি কারণ থাকতে পারে।”
এ বিষয়ে স্ত্রীরোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুরো বিষয়টিই কিন্তু ঘটছে হরমোনের কারসাজিতে। আমরা যে প্লাস্টিকের বোতলে জল খাই, সেখান থেকে এক ধরনের রাসায়নিক বেরোয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ওই রাসায়নিকটি মেয়েদের শরীরে ইস্ট্রোজেনের মতো কাজ করে। যে কোনও কারণে মেয়েদের শরীরে স্বাভাবিকের চেয়ে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে গেলেই পিউবার্টি বা বয়ঃসন্ধি এগিয়ে আসতে পারে।”
আর কোন কোন কারণকে চিহ্নিত করছেন চিকিৎসকেরা?
১. প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রতি নির্ভরশীলতা স্থূলত্বের সমস্যা ডেকে আনছে। অতিরিক্ত ফ্যাটজাত খাবার মেয়েদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে তুলছে।
২. পড়াশোনার বাড়তি চাপের কারণে শরীরচর্চা ও খেলাধূলার সময় পাচ্ছে না শিশুরা, সেই কারণেও ঋতুচক্র এগিয়ে আসছে।
৩. প্রচণ্ড উদ্বেগ, মানসিক চাপেও হঠাৎ শারীরিক পরিবর্তন আসতে পারে। কোভিডও মানুষের জীবনে আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছিল। এই ভাইরাসটির সঙ্গে লড়াই করতে না পেরে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু যাঁরা এই যুদ্ধে টিকে গিয়েছেন, তাঁদের শারীরিক ছন্দে বিপুল পরিবর্তন এসেছে। তার মধ্যে কম বয়সে ঋতুচক্রের সূচনা অন্যতম।