শিশু দত্তক নিতে এত সময় লাগছে কেন?
সমাজের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে দত্তক প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। অনেক অভিভাবকই সন্তানসুখ পেতে আইনি প্রক্রিয়ায় দত্তক নেওয়ার উপরেই নির্ভর করেন। তবে দত্তক নিতে চাই বললেই তো আর নেওয়া যায় না! এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। আবেদন করার পর বহু নিয়মের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। সেগুলি বিচার করার পর তবেই খাতায়-কলমে বাবা-মা হওয়া যায়।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ভারতের শিশু দত্তক নেওয়ার প্রক্রিয়াটি সহজ করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানিয়েছে। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট জোর দিয়ে বলেছে যে, ভারতে শিশু দত্তক নেওয়ার প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজ করা দরকার। ‘সেন্ট্রাল অ্যাডপশন রিসোর্স অথরিটি’-র অধীনে একটি সন্তান দত্তক নেওয়ার জন্য তিন থেকে চার বছর সময় লেগে যায়, অথচ লক্ষ লক্ষ শিশু অপেক্ষায় থাকে কখন কেউ তাদের দত্তক নিয়ে ঘরে নিয়ে যাবেন।
সরকারি আইনজীবী এই বিষয় বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই এই বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে। সরকার সেই আবেদনটি বিবেচনা করার জন্য ছয় সপ্তাহ সময় চেয়ে নিয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রধান পীযূষ সাক্সেনাকে শীর্ষ আদালত একটি রিপোর্ট বানিয়ে এই বিষয়ে তাদের নিজস্ব মতামত এবং পরামর্শগুলি সরকারকে জমা দিতে বলেছে। তার উত্তরে পীযূষ শীর্ষ আদালতকে জানায়, ‘‘মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক আমাকে এই একটি বিস্তারিত রিপোর্ট লিখিত আকারে জমা দেওয়ার জন্য বলেছিল যা আমি তাদের মার্চ মাসে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’’
সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ‘‘ভারতে সরকার দত্তক নেওয়ার প্রক্রিয়াটি ভীষণ দীর্ঘ। ‘সেন্ট্রাল অ্যাডপশন রিসোর্স অথরিটি’ বছরে চার হাজার শিশুর দত্তক প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে পারে। ভারতে প্রায় তিন কোটি অনাথ শিশু আছে। শিশু দত্তক প্রক্রিয়াটি যত দ্রুত সম্ভব সহজ করতে হবে, এই প্রক্রিয়ায় এত সময় নিলে চলবে না।’’
এই মামলায় পরবর্তী শুনানি হবে অক্টোবর মাসে।
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
আগে দত্তক নেওয়ার প্রক্রিয়াটি আদালতের আওতাধীন ছিল। কিন্তু ‘জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট’ সংশোধন করে দত্তকের প্রক্রিয়াটি জেলা প্রশাসনের আওতায় আনা হয়েছে। শিশুকে কোনও পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার আগে কঠোর ভাবে বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর্থিক ভাবে কতটা সচ্ছল সেই পরিবার, সে দিকেও জোর দিতে বলা হয়েছে। যাঁরা দত্তক নিচ্ছেন, তাঁদের শংসাপত্রগুলি বৈধ কি না, তা-ও খুঁটিয়ে দেখার কথা। সরকারের দাবি, এই সব বিষয়ে নিশ্চিত করতেই অনেকটা সময় চলে যাচ্ছে। শিশুদের নিরাপত্তার বিষয়ে কোনও রকম ঝুঁকি নিতে চায় না সরকার।