দেশের প্রথম ‘চায়না টাউন’ মধ্য কলকাতার টেরিটি বাজার
এ শহরে দর্শনীয় স্থাপত্য আছে। রয়েছে ঘুরে দেখার মতো ঐতিহাসিক বহু স্থল। কিছুর যত্ন হয়। বাকি এখনও অবহেলায়। তেমনই কম যত্নে পড়ে থাকা একটি এলাকা উঠে এল বিশ্বের ২৫টি ঐতিহ্যবাহী স্থলের তালিকায়।
মধ্য কলকাতার টেরিটি বাজার ‘পুরনো চায়না টাউন’ নামেও পরিচিত। ‘ওয়ার্ল্ড মনুমেন্টস ওয়াচ লিস্ট ২০২২’-এ বিশ্বের ২৫টি ঐতিহ্যবাহী জায়গার একটি তালিকা তৈরি হয়েছে। তাতেই উঠে এসেছে এই অঞ্চলের নাম।
‘ওয়ার্ল্ড মনুমেন্টস ফান্ড’ (ডব্লিইউএমএফ) এই তালিকা প্রকাশ করে। ঐতিহাসিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ যে সব স্থানের রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন, যত্নের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সে সব জায়গা, তেমনই কিছু জায়গার তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেই তালিকাতেই ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বের প্রথম ২৫টি স্থানের মধ্যে রয়েছে টেরিটি বাজারের নাম। এই এলাকাকে ভারতের প্রথম চায়না টাউন হিসাবে উল্লেখও করা হয়েছে সেখানে।
টেরিটি বাজারে চিনা জলখাবার চেখে দেখেছেন
টেরিটি বাজারের চিনা জলখাবার গোটা কলকাতার মানুষের কাছেই পরিচিত। ভোরবেলা পৌঁছে গেলে সেখানে মিলবে একালার বাসিন্দাদের ঘরে তৈরি মোমো, নুডলস, মাংস থেকে শুরু করে নানা ধরনের খাবার।
অষ্টাদশ শতকের শুরুর দিকে এখানে নানা এলাকা থেকে আসা চিনাদের বসতি তৈরি হতে শুরু করে। মূলত চিনা নাবিক, চিন দেশের ব্যবসায়ীরাই ধীরে ধীরে ঘর বাঁধেন। সেই থেকে এখানেই রয়ে গিয়েছে বহু পরিবার। পরে দেশের নানা জায়গায় চিনা বসতি তৈরি হয়েছে। তবে দেশের প্রথম ‘চায়না টাউন’ এটিই। তাই ইতিহাসে এই এলাকার গুরুত্ব আলাদা। তবে মজার ব্যাপার হল এই এলাকার নাম হয়েছে এক ইটালিয়ান সাহেবের নামে। ভেনিসের ব্যবসায়ী এডওয়ার্ড টিরেটা ছিলেন এই এলাকার সব জমির মালিক। তাঁর নামেই টিরেটা বাজার বলে পরিচিত এই এলাকার নাম লোকমুখে ঘুরেফিরে হয়েছে টেরিটি বাজার।
কিন্তু সে ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি এই অঞ্চলের। আর ডব্লিউএমএফ তেমনই কিছু সৌধ, বসতি, এলাকা, সম্প্রদায়কে চিহ্নিত করে। পৃথিবীর ইতিহাসে যার গুরুত্ব অঢেল, কিন্তু সে ভাবে দেখভাল হয় না। এ বার টেরিটি বাজারের সঙ্গে সেই তালিকায় রয়েছে পাকিস্তানের লহৌরে জাহাঙ্গিরের সমাধি, বাংলাদেশের বাগেরহাট মসজিদ, লিবিয়ার বেঙ্গাজি সিটি সেন্টার, আমেরিকার আলাবামায় আফ্রিকাটাউন, ব্রিটেনের হ্যাম্পশায়ারে হার্স্ট কাসেলের মতো কিছু জায়গা।
ডব্লিউএমএফ হল আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরের একটি সংস্থা। তাদের দফতর রয়েছে ব্রিটেন, ভারত, কম্বোডিয়া, পেরু, স্পেন, পর্তুগালের মতো কিছু দেশেও। এই তালিকা প্রকাশের উদ্দেশ্য হিসাবে তারা জানিয়েছে, ইতিহাস সংরক্ষণ করতে বিভিন্ন সংগঠন, সংস্থা এবং ব্যক্তিকে উৎসাহ দিতে চায় তারা। সে জন্যই তৈরি হয় এমন তালিকা।