বুলগেরিয়ায় যাঁরা ওয়াইন তৈরি করেন, তাঁদের উৎসর্গ করা হয়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারি। ছবি: সংগৃহীত
বাঙালি প্রেম নিবেদন করতে পছন্দ করত সরস্বতী পুজোর দিনে। বসন্ত পঞ্চমিই ছিল প্রেমের দিন। কিন্তু সে অনেক কাল আগের কথা। তখনও সব স্কুল-কলেজে দায়িত্ব নিয়ে সরস্বতী পুজোর যাবতীয় আয়োজন করত পড়ুয়ারাই। পাশাপাশি চলত সুন্দর করে সেজেগুজে স্কুলে স্কুলে ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে প্রেম নিবেদনের পালা। কিন্তু তার পর বিশ্বায়নের হাত ধরে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালবাসার দিনে পরিণত হল। লাল রঙের ছোট-বড় তুলোর তৈরি হৃদয় উঁকি মারল উপহারের দোকান, কফি শপ, শপিং মল সর্বত্র। প্রেম মানেই সকলের চোখের সামনে এই তুলোর হৃদয়ই ভেসে উঠত। ধীরে ধীরে ভালবাসার উদ্যাপন মানেই ১৪ ফেব্রুয়ারি হয়ে গেল। ভোগবাদ এবং বিজ্ঞাপনের বাড়বাড়ন্তে এ দিন উপহারের দেওয়া-নেওয়ার, নতুন পোশাক পরা এবং নাম-করা কোনও রেস্তরাঁয় গিয়ে নৈশভোজ সারার একটি নির্দিষ্ট তারিখ হয়ে গেল। তাই এখনকার প্রজন্মের কাছে ভ্যালেনটাইন’স ডে বছরের ক্যালেন্ডারে এক জরুরি দিন বটে।
কিন্তু আপনি কি জানেন, অন্য অনেক দেশে এ দিনটা কাটে একদম অন্য ভাবে। কিছু দেশে ভালবাসার উদ্যাপন হলেও, তা হয় অভিনব ভঙ্গিতে। আবার কিছু দেশে একদমই অন্য কিছু ঘটে ১৪ ফেব্রুয়ারি। জেনে নেওয়া যাক, কোন দেশে এ দিন কেমন কাটে।
ফ্রান্সের ভ্যালেন্টাইন গ্রামে ১৪ ফেব্রুয়ারির উদ্যাপন।
ফ্রান্স
ফ্রান্সের এক ছোট্ট গ্রামের নাম ভ্যালেনটাইন। সে গ্রাম এ দিন সেজে ওঠে দারুণ ভাবে। প্রত্যেকটি বাড়ি গ্রিটিংস কার্ড, ভালবাসার বার্তা, প্রেমের প্রস্তাব লেখা চিরকুটে সাজিয়ে তোলা হয়। লতা-পাতা ফুলও থাকে সেই অন্দরসজ্জায়। বাড়ির বাগানও সাজানো হয় একই ভাবে।
দক্ষিণ কোরিয়া
শুধু ১৪ ফেব্রুয়ারি নয়, এ দেশে ভালবাসার উদ্যাপন হয় প্রত্যেক মাসের ১৪ তারিখে। গোলাপ দিবস পালন করা হয় মে মাসে, চুম্বন দিবস জুনে এবং আলিঙ্গন দিবস এপ্রিলে।
১৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় চকোলেট দিবস পালন করে ঘানা।
ঘানা
১৪ ফ্রেব্রুয়ারি এ দেশে জাতীয় চকোলেট দিবস হিসাবে পালিত হয়। দেশের পর্যটন বাড়ানোর জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছিল ঘানার সরকার।
আর্জেন্টিনা
ভালবাসার উদ্যাপন হয়। কিন্তু তা ফেব্রুয়ারি মাসে নয়, জুলাই মাসে। কাছের মানুষকে চকোলেট বা অন্য কোনও উপহার দেওয়ার রীতি রয়েছে এ দেশেও।
রোমানিয়ায় ১৪ নয়, ২৪ ফেব্রুয়ারি ভালবাসার উদ্যাপন হয়।
বুলগেরিয়া
যাঁরা ওয়াইন তৈরি করেন, বুলগেরিয়ায় তাঁদের নামে এ দিন উৎসর্গ করা হয়েছে। তবে ১৪ ফেব্রুয়ারি যুগলে বসে ওয়াইন খাওয়ার রীতি রয়েছে বটে।
ডেনমার্ক
ভালবাসার উদ্যাপন হয় বটে, তবে খানিক অভিনব কায়দায়। ভালবাসার মানুষকে এ দিন হাতে তৈরি কার্ড দেওয়া হয়। তবে যে সে কার্ড নয়। সাদা ফুল শুকিয়ে তা কাগজে ফুটিয়ে তোলা হয়। ঠিক যেমন সরস্বতী ঠাকুরের ফুল যখন পড়ুয়ারা বইরের পাতার ফাঁকে রেখে দিত এবং তাঁর একটা স্পষ্ট ছাপ বইয়ে পড়ত, কিছুটা তেমনই পদ্ধতিতে এই সাদা ফুলগুলি ফুটিয়ে তোলা হয় কার্ডে। এর নাম স্নোড্রপ।
জাপানে ১৪ মার্চ পালন করা হয়ে হোয়াইট ডে। ১৪ ফেব্রুয়ারিতে পাওয়া উপহার এ দিন ফিরিয়ে দেওয়া যায়।
রোমানিয়া
১৪ নয়, ২৪ ফেব্রুয়ারি ভালাবাসার উদ্যাপন হয় এ দেশে। বিভিন্ন জুটি এ দিনে বাগদান পর্ব সেরে ফেলেন। সৌভাগ্যের আশায় সাধারণত বরফে মুখ ধুয়ে নেন তাঁরা এ দিনে।
জাপান
মনে আছে স্কুলবেলার প্রেমের কথা? অনেক সাহস জুটিয়ে হয়তো কাউকে উপহার দিয়েছিলেন কিছু। কিন্তু অপরজন তা নির্মম ভাবে ফিরিয়ে দিলেন। জাপানে থাকলে সে দুঃখ খানিক কমবে। ১৪ ফেব্রুয়ারি কোনও উপহার দিতেই পারেন পছন্দের মানুষকে। তিনি ফিরিয়ে দিতে চাইলে তাঁকে ১৪ মার্চ অবধি অপেক্ষা করতে হবে। সে দিন ‘হোয়াইট ডে’ পালন করা হয়।