কোনও বসন্তই সকলের জীবনে রং এনে দেয় না। ছবি: সংগৃহীত
গত এক সপ্তাহে বড় কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছি, আমরা এক দল মানুষ। আজকের এই শহর এবং শহরতলি জুড়ে প্রেমের উদ্যাপনের মাঝে যারা একেবারে প্রান্তিক। বেমানান। যারা ‘একা’। দুয়ারে বসন্ত এলেই যাদের বুকের ভিতরটা কেমন যেন টনটন করে ওঠে।
বসন্ত কি সকলের জীবনে প্রেম নিয়ে আসে? আসে না। কোনও বসন্তই সকলের জীবনে রং এনে দেয় না। অনেকেই থেকে যান একা। কিছুটা স্বেচ্ছায়। আর অনেকটা বাধ্য হয়ে। তবু থাকতে হয়। জোর করেও। বছরের অন্যান্য সময়ে কোনওমতে মানিয়ে নেওয়া গেলেও ফ্রেব্রুয়ারির এই দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে একাকিত্ব যেন বেশি করে গ্রাস করতে আসে। বসন্তের হাওয়া যেন কাঁটার মতো এসে বেঁধে আমাদের শরীরে। আমাদের আলিঙ্গন নেই। আমরা চাদরটা জড়িয়ে নিই ভাল করে। আমরা নিজেদের আগলে রাখি।
এই বসন্তে আমরা যারা একা, আমাদের শুধু প্রেমের সপ্তাহ বলে নয়, বছরের অন্যান্য সময়েও একটি ডাব দু’জনে ভাগ করে নিতে দেখতে বা বৃষ্টিকে আড়াল করতে এক ছাতায় দু’জনের ঢুকে পড়া দেখতেও চোখের সামনেটা ঝাপসা হয়ে আসে। আমরা একা। স্বেচ্ছায় অথবা বাধ্য হয়ে।
এই ভালবাসা মাখা বসন্তে আমরা যারা ‘একা’ আমাদের জীবনেও কোনও এক সময়ে হয়তো প্রেম এসেছিল। আমাদেরও হয়তো উদ্যাপন ছিল। গোলাপ দেওয়া-নেওয়া ছিল। ভালবাসার অনুচ্চার প্রকাশ ছিল। হাত ধরে রাস্তা পেরোনো ছিল। একসঙ্গে পায়ে পা মেলানো ছিল। চিঠি চালাচালি ছিল। অভিমান ছিল। তবুও আমরা ‘একা’। স্বেচ্ছায় অথবা বাধ্য হয়ে।
ছবি: প্রতীকী ছবি: সংগৃহীত
প্রেমের এই মরসুমে আমরা যারা ‘একা’, আমাদের কথা এই ভালবাসার শহরে ধামাচাপা পড়ে যায় অনায়াসে। আমরা অফিস ফেরত গোলাপের দোকানে বেজায় ভিড় দেখে দাঁড়িয়ে পড়ি। না জানার ভান করি। একে তাঁকে জিজ্ঞাসা করি। একা থাকার অপরাধে ব্যঙ্গগুলি হাসিমুখে হজম করি। তবুও আমরা ‘একা’। স্বেচ্ছায় অথবা বাধ্য হয়ে।
ভালবাসার উদ্যাপনে আমাদের না চাইতেও চোখ পড়ে যায় চুম্বনরত যুগলের দিকে। চোখ ফিরিয়ে নিই। ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়া ঠোঁট কামড়ে নিয়ে উল্টো পথ ধরি। দূর থেকে শুনতে পাই বিষাদের সানাই। আমরা একা। স্বেচ্ছায় অথবা বাধ্য হয়ে।
প্রেমের এই উৎসবে আমাদের মতো একাদের কোনও পরিকল্পনা থাকে না। তবু কী ভাবে যেন কানে এসে যায় পাশের বাড়ির মেয়েটির ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির কথা। বেশি ক্ষণ শুনতে পারি না। খারাপ লাগে। আমরা একা। স্বেচ্ছায় অথবা বাধ্য হয়ে।
ভালবাসার চাদরে মোড়া এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমাদের মতো একাদের কোনও ব্যস্ততা থাকে না। উত্তেজনা থাকে না। উচ্ছ্বাস থাকে না। কেবল এক রাশ মন কেমন থাকে। আমরা বিভিন্ন খবর পড়ে জানতে পারি বিভিন্ন ডেটিং সাইটে এই সময়ে প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পায় নানা বয়সের ‘একা’ মানুষের আনাগোনা। প্রেমের এই মরসুমে নিজেদের ব্রাত্য বলে মনে হয়। সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেনির মানুষ বলে মনে হয়। আমাদের মনের উপরে চাপ বাড়ে। কারণ আমরা ‘একা’। স্বেচ্ছায় অথবা বাধ্য হয়ে!