Halloween Celebration in Kolkata

ভূতের পার্টি এখন এ শহরেও হয়! হ্যালোউইন পালনে নানা ভাবে মেতে ওঠেন তরুণেরা

ভূত চতুর্দশী আর পাশ্চাত্যের হ্যালোউইন দিবস প্রায় কাছাকাছি সময়েই আসে। বিদেশে হ্যালোউইন এখন উৎসবের রূপ নিয়েছে। তবে ভারতেও পাশ্চাত্যের পাশাপাশি হ্যালোউইনের ছায়া ক্রমে জাঁকিয়ে বসছে। শহর কলকাতার কি আপন করেছে এই উৎসবকে?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৪ ১২:০২
Share:

হ্যালোউইনের হল্লাকে কি আপন করেছে শহরবাসী? ছবি: শাটারস্টক।

বাতাসে রাতের দিকে হালকা শীতের শিরশিরানি, শীত আসবে আসবে ভাব— এমনই একটা সময়ে‌ এ দেশে পালন করা হয় ভূত চতুর্দশী। আর পাশ্চাত্যে আসে হ্যালোউইন। সর্বজনস্বীকৃত ভূতেদের দিন। আমাদের এখানে কালীপুজোর আগের রাতে কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে ভূত চতুর্দশী পালিত হয়। ওই দিন বাড়িতে বাড়িতে চোদ্দটি প্রদীপ জ্বালানো এবং চোদ্দো শাক খাওয়ার চল বহু দিন ধরেই। তবে ওইটুকুই, ভূত চতুর্দশীর দিন ভূতেদের নিয়ে এর থেকে বেশি মাতামাতি করে না বাঙালি। ভূত চতুর্দশী আর পাশ্চাত্যের হ্যালোউইন দিবস প্রায় কাছাকাছি সময়েই আসে। বিদেশে হ্যালোউইন এখন উৎসবের রূপ নিয়েছে। তবে ভারতেও পাশ্চাত্যের পাশাপাশি হ্যালোউইনের ছায়া ক্রমে জাঁকিয়ে বসছে। ক্রিসমাসকে ভারতীয়রা যে ভাবে আপন করে নিয়েছে, ঠিক সে ভাবেই চেনা-জানা ভূতেদের থেকেও সাহেব ভূতেদের প্রতি তাদের আকর্ষণও অল্পবিস্তর বাড়ছে বইকি।

Advertisement

৩১ অক্টোবর হ্যালোউইন পালন করেন খ্রিস্টানরা। এটি সেল্টিক সামহেইন নামক প্রাচীন ফসল কাটার উৎসব থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যেখানে বিশ্বাস করা হত, এই রাতে মৃতদের আত্মারা পৃথিবীতে ফিরে আসে। পরে খ্রিস্টধর্মের প্রভাবে এটি ‘অল হ্যালোজ ইভ’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে এবং ধীরে ধীরে মজাদার এবং ভৌতিক উৎসবে পরিণত হয়।

কী হয় হ্যালোউইনে? নিজেরই বাড়িতে বা এলাকার কমিউনিটি হলে বিশেষ পার্টি দেওয়া হয়। অনেক পার্টিতে থিম থাকে। তা হতে পারে সুপারহিরো অথবা ‘কনজুরিং’ জাতীয় ভূতের সিনেমা। কুমড়োর খোল শুকিয়ে চোখ-মুখ কেটে ভিতরে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বাতি। এই দিনটায় খুদেরা কিম্ভূত সাজগোজ করে। কেউ রক্তখেকোর সাজে, তো কেউ জ়ম্বির। শিশুরা নানা রকম ভূত সেজে, দলবেঁধে এলাকার প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে ঝুলি পেতে ক্যান্ডি, মিষ্টি, স্ন্যাক্স কিংবা ছোটখাটো উপহার চায়। তা না দিলে কিন্তু আপনাকে পড়তে হতে পারে ‘ট্রিক অর ট্রিট’-এর গেরোয়। অর্থাৎ, উপহার না পেলে বাচ্চারা মজার ছলেই এটা-ওটা নষ্ট করে। বড়রা বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে বনফায়ার, ভূতুড়ে সাজ ও পোশাক পরে পার্টি, ভৌতিক স্থান ভ্রমণ, ভয়ের সিনেমা দেখার মতো নানা রকম কাজকর্ম করেন সে দিন।

Advertisement

আইরিশ ও স্কটিশ অভিবাসীরা ১৯ শতকে এই ঐতিহ্য উত্তর আমেরিকায় নিয়ে আসে। পরবর্তী কালে বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে পশ্চিমের অন্য দেশগুলিও হ্যালোইন উদ্‌যাপন করা শুরু করে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, আয়ারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যে এই উৎসবের চল ছড়িয়েছে। এ ছাড়া, এশিয়ার জাপানে এবং অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডেও হ্যালোইন পালিত হয়। এ তালিকায় কয়েক বছর ধরে সংযোজন হয়েছে ভারতের নামও।

(বাঁ দিকে) ক্যাটরিনা কইফ, জাহ্নবী কপূর (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।

ভারতে হ্যালোউইন উৎসবকে জনপ্রিয় করেছে বলিউড, এ কথা অস্বীকার করার উপয় নেই। মুম্বইয়ে ৭-৮ বছর আগে থেকেই শাহরুখ খানের বাড়িতে হ্যালোউইন পার্টির আয়োজন করা হয়। সেখানে ভূতুড়ে সাজে হাজির হন বলিপাড়ার তারকারা। সাজগোজ থেকে খাওয়াদাওয়া— সেই পার্টিতে বলিপাড়ার হুল্লোড়ে মেতে ওঠে বলিপাড়ার তারকামহল। কেবল শাহরুখের পার্টি নয়, ধীরে ধীরে অন্যান্য তারকাও তাঁদের বাড়িতে হ্যালোউইন উদ্‌যাপন শুরু করেছেন। হ্যালোউইনের আগেই ইনস্টাগ্রামে ছড়িয়ে পড়ে নায়ক-নায়িকাদের হ্যালোউইন লুক। ক্যাটরিনা কইফের হার্লে কুইন লুক কিংবা সোনম কপূরের ‘ওয়েডনেসডে’ সিরিজ়ের অ্যাডামস লুক— বলিপাড়ার বিভিন্ন নায়িকার হ্যালোইনের সাজ অনুপ্রাণিত করে তরুণীদের। সারা আলি খান থেকে মালাইকা অরোরা, আরিয়ান খান থেকে প্রিয়ঙ্কা চোপড়া, জাহ্নবী কপূর— বিভিন্ন বছরে বিভিন্ন রকম ভূতুড়ে রূপে ধরা দিয়েছেন বলিপাড়ার তারকারা।

কলকাতাও পিছিয়ে নেই হ্যালোউইন পার্টিতে। বিভিন্ন হোটেল, রেস্তরাঁয় এই পার্টি দেওয়া হয়। টাকা দিয়ে টিকিট কেটে সেখানে সাধারণ মানুষও ভিড় জমান। ঘরোয়া পার্টিও কম হয় না। কলকাতার সেলেব-মহলও মজে হ্যালোউইনে। সেই স্রোতে গা ভাসিয়েছেন তরুণ-তরুণীরাও। দক্ষিণ কলকাতার এক আবাসনে থাকেন অর্কনাভ বল। দু’বছর ধরে তাঁদের আবাসনে শুরু হয়েছে হ্যালোউইন উৎসব। অর্কনাভ বলেন, ‘‘হ্যালোউইন পার্টিতে সব কিছু উল্টোপাল্টা হতে হবে। যে যেমন খুশি রাক্ষস, খোক্ষস সেজে চলে আসে। অদ্ভুত কিছু করাটাই এই পার্টির সবচেয়ে মজার বিষয়। বড়দের থেকেও এই দিনটি বেশি উপভোগ করে কচিকাঁচারা। ভূতুড়ে সাজে রাতের বেলায় সারা আবাসনে ঘুরে বেড়ায় তারা। সাজগোজের পাশাপাশি থাকে খাওয়াদাওয়ার আয়োজনও।’’

কলকাতার বড়বাজারে বিক্রি হচ্ছে হ্যালোউইনের সাজের সব সামগ্রী। ছবি: শাটারস্টক।

২২ বছরের তনিমা রায়, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তিনি। এ বছর বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে হ্যালোউইন পার্টির আয়োজন করবেন । তনিমা বলেন, ‘‘বলিপাড়ার বিভিন্ন তারকার হ্যালোউইন পার্টিতে নানা রকম সাজে দেখি প্রতি বছর। এ বছর ভাবলাম, হ্যালোউইন থিম পার্টি করলে কেমন হয়! যেমন ভাবনা তেমনই কাজ। বন্ধুবান্ধবকে জানালাম মনের কথা। সবাই এককথায় রাজি! হ্যালোউইনের সাজের জিনিসপত্র কিনতে সটান চলে গেলাম বড়বাজার। সেখান থেকে ভূতুড়ে নানা রকম মাস্ক, ঢিলেঢালা ভূতুড়ে পোশাক কিনলাম। কালীপুজোয় বাড়ি সাজানোর জন্য নানা রঙের, নানা মাপের মোমবাতি কেনা হয়েছে। সেখান থেকে কয়েকটা নিয়ে নেব পার্টির জন্য। সঙ্গে থাকবে স্ন্যাক্সের আয়োজন। রাত জেগে ভূতের সিনেমা দেখব, হইহুল্লোড় করব। ব্যস ওইটুকুই।’’ শহরের একটি হোটেলের কর্ণধারের কথায়, ‘‘হ্যালোউইন পার্টি ঘিরে উন্মাদনা শহরে দিন দিন বা়ড়ছে। টিকিট কেটে প্রচুর মানুষ আসেন। যদিও সেই পার্টিতে কমবয়সিদের ভিড়ই বেশি। সেরা পোশাক বা স্টাইলের জন্য পুরষ্কারও থাকে। সেই দিন হোটেলের অন্দরসজ্জায় থাকে ভৌতিক ছোঁয়া। খাবারের পাশাপাশি বিভিন্ন পানীয়ের নামেও থাকে ভূতুড়ে ‘টাচ্’’।

কয়েক বছরে এ শহরের ছবিটা বেশ বদলেছে। কথায় আছে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন, তবে এখন পাশ্চাত্য প্রভাবে আরও বাড়ছে পার্বনের সংখ্যা। আসলে আনন্দ করার, হুল্লোড় করার অজুহাত খোঁজে এই শহর। সে বড়দিন হোক বা হ্যালোউইন। বড়দিনের মতো না হলেও ধীরে ধীরে শহরবাসী হ্যালোউইনকে আপন করতে শুরু করেছে, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement