বাজারে আগুন। পকেট খালি। প্রতীকী চিত্র
প্রতিদিনই বাড়ছে সংসার খরচ। অথচ আয় তো আর চাইলেই বাড়ানো যায় না। তাই ব্যবসায়ী থেকে চাকরিজীবী অথবা পেনশনভোগীদের সংসারের টানাটানি আর মেটে না। মাঝখান থেকে সাধ থাকলেও সঞ্চয়ের সাধ্য থাকে না। এ দিকে বিপদআপদের জন্য কিছু সঞ্চয় করে রাখা খুবই জরুরি। অথচ সঞ্চয়ের সুদও দিন দিন কমতির দিকে। এমন পরিস্থিতিতে যাঁরা মাথার চুল ছিঁড়েছেন কিংবা দুশ্চিন্তায় ঘুম কমিয়ে ফেলেছেন তাঁরা জাপানের এই কাকিবো পদ্ধতি প্রয়োগ করে দেখতে পারেন।
মূলত জাপানে এই পদ্ধতিতে সংসার খরচের হিসেব ও সঞ্চয় করা হলেও তা এখন প্রচারের দৌলতে বিশ্বের অনেক জায়গাতেই পরিচিতি। এই পদ্ধতি শতাধিক বছর আগে থেকে প্রচলিত। জাপানি ভাষায় ‘কাকিবো’ শব্দের অর্থ সংসারের অর্থকরী হিসেবের বই। এই নামে একটি বই লেখেন ফুমিকা চাইবা নামে এক লেখিকা। সেটা বিংশ শতকের গোড়ার দিকে। সেখানে গৃহিণীরা সংসারের খরচ কী ভাবে কমাবেন ও হিসেব রাখবেন তার পদ্ধতি বলা হয়েছিল। সেই সময়ে যে হেতু মূলত মহিলাদের হাতেই থাকত সংসার সামলানোর দায়িত্ব, তাই মেয়েদের কথা ভেবেই ফুমিকা বইটি লিখেছিলেন। ওই বই থেকেই জানা যায়, কাকিবো পদ্ধতি প্রথম তৈরি করেছিলেন হানি মোতোকো নামে জাপানের এক মহিলা সাংবাদিক। লক্ষ্য ছিল, মেয়েরা যাতে খরচখরচা সামলে পরিবারের জন্য সঞ্চয় করতে পারেন।
এই পদ্ধতিতে মাসের গোড়াতেই প্রতিদিনের বা সাপ্তাহিক আয় ও ব্যয়ের একটা হিসাব করতে ফেলতে হবে। কোন খরচ করতেই হবে কোন খরচ না করলেও চলে এরও ভাগ রাখতে হবে। নিয়মিত খরচকে আবার খাবার, ওষুধ, পরিবহণ ইত্যাদি নানা ভাগে লিখতে হবে। সেই সঙ্গেই লিখে ফেলতে হবে অবসরের সময়ের জন্য বাধ্যতামূলক সঞ্চয়ের খরচ। মাসের গোড়ায় এই সব খরচকে মোট আয় থেকে বাদ দিতে হবে। কাকিবো পদ্ধতিতে শুধু খরচের হিসেবই নয়, সঞ্চয় বাড়ানোর পদ্ধতিও রয়েছে।
যাঁরা এই পদ্ধতি মানেন তাঁরা শুরুতেই অপ্রয়োজনীয় খরচকে আলাদা করে ফেলেন। এর পরে চেষ্টা করেন সেগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার। সম্ভব হলে এড়িয়ে চলা। সেই কারণে মাসের গোড়াতেই কতটা সঞ্চয় করতে চান সেটা লিখে তার পরে খরচের পরিকল্পনা করতে হয় কাকিবো পদ্ধতিতে।
অনেকে বলবেন এই ভাবে কি খরচ আদৌ কমানো যায়! কিন্তু কাকিবো পদ্ধতি যাঁরা মানেন তাঁদের দাবি, প্রতিটি খরচকে আলাদা আলাদা করে লিখে ফেললে খরচে নিয়ন্ত্রণ আনা যায়। মাসের গোড়াতেই যদি ঠিক করে নেওয়া যায় কোন খাতে কতটা খরচ করা হবে তবে ব্যয় বাড়ে না। আবার একজন কতটা সঞ্চয় করতে চান এবং কতটা সঞ্চয় করতে পারলেন সেই হিসাবও নিজের চোখের সামনে থাকে। একই সঙ্গে নিয়মিত এই পদ্ধতি মানলে জানা যায় আগের মাসের তুলনায় কতটা খরচ কমানো গেল বা কতটা সঞ্চয় বাড়ানো গেল।